গায়ত্রী—ছান্দোগ্য উপনিষদ, তৃতীয় অধ্যায়, দ্বাদশ খণ্ড। Chandogya Upanishad in Bengali-Gayatri-Third chapter, Twelfth part.

গায়ত্রীছান্দোগ্য উপনিষদতৃতীয় অধ্যায়, দ্বাদশ খণ্ড। 
(মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় (১৮৭৫-১৯৪৫এবং তাঁর প্রধান শিষ্য মহর্ষি ত্রিদিবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের (১৯২৩-১৯৯৪উপদেশ অনুসরণ করে এই উপনিষদের অর্থ এবং নিরুক্ত লিখিত হল।)
--------------------------------------------------------------------
৩। ১২।  
গায়ত্রী বা ইদং সর্ব্বং ভূতং যদিদং কিঞ্চ বাগ্‌ বৈ গায়ত্রী বাগ বা ইদং সর্ব্বং ভূতং গায়তি  ত্রায়তে চ।
অন্বয় অর্থ। 
গায়ত্রী বা (গায়ত্রীইইদং (এইসর্ব্বং (সকলভূতং(ভূতযৎ (যাইদং (এই)  কিঞ্চ (কিছু) বাগ্‌ বৈ (বাক্‌  ) গায়ত্রী (গায়ত্রী)  বাগ বা  (বাক্‌ ইদং (এই)  সর্ব্বং (সব ) ভূতং (ভূত সকল) গায়তি (গান করেন ত্রায়তে  (এবং ত্রাণ করেন) 
অর্থ। 
গায়ত্রীই এই সকল ভূত (যা কিছু সৃষ্ট হয়েছে)-- যা এই কিছু। বাক্‌ গায়ত্রী। বাক্‌ই এই সব ভূত সকল।  গান করেন এবং ত্রাণ করেন।

নিরুক্ত। 
ভূত শব্দটির অর্থ 'যা অতীত বা যা হয়ে গেছে তাই যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তার নামও ‘ভূত' 
গায়তি (গান করেন ত্রায়তে  (এবং ত্রাণ করেন. যে গানের দ্বারা মহাপ্রাণ বা মুখ্যপ্রাণ আমাদের 
মৃত্যুর থেকে অমৃতে নিয়ে যান (ছান্দোগ্যউপনিষদে তাকে উদ্গান বলা হয়েছে। যিনি উদ্গান করেন 
তিনি উদ্গাতা। তাই গায়ত্রীই উদ্গাতাযিনি গানের দ্বারা ত্রাণ করেন। 
গান =  (গদ্‌+অনগদ্‌ অর্থে ‘কথা বলা’ এবং ‘অন’ অর্থে ‘প্রাণ। প্রাণময়হৃদয়ময় যে কথা বা শব্দরাশি 
তা ‘গান' 
গতিঅন = প্রাণ। গান =প্রাণ গতিআত্মস্বরূপ চেতনা সক্রিয় হয়ে বা প্রাণ হয়ে আমদের গতি দান  করছেন মানে গান করছেন। 
মুখ্যপ্রাণ বা প্রাণের যে শক্তি তাঁর নাম ‘বাক্‌' চেতনা বা প্রাণের প্রকাশই কথা বা বাক্য। প্রাণ  বাক্‌
চেতনার দুইটি স্বরূপ। বাকের দ্বারাই প্রাণকে খণ্ডিত করে চেতনা বহু হন। তাই যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে তাকে
 যখন আমরা অনুভব করিসেই অনুভূতি একটি কথা , একটি বাক্য বা শব্দের আকারে আমাদের মধ্যে 
স্থিতি নেয়। তাই সব কিছুর একটা নাম বা সংজ্ঞা আছে। আমরা যেমন আম বলে মনের মধ্যে আমের 
চেহারা ইত্যাদি ফোটাতে পারিসেইরকম এই চেতনার কথাই বিশ্ব ভূবন হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা 
হল বাক্‌ই সর্ব্ব ভূত।
চেতনার স্বভাবই হল কথা বলা এবং শোনা। তাই আমরাও অনর্গল কথা বলছি আর যা বলছি তাই শুনছি।
 বলা হল ‘প্রকাশ', আর শোনা হলসেই প্রকাশটিকে অনুভব করা। এই জন্য বেদের এক নাম ‘শ্রুতি
মানে শোনা বা অনুভূতি বা বেদন।

প্রতি সত্ত্বাতেচেতনা নিজেকে তদাকেরে অনুভব করছেনএইটি প্রাণ। আর সেই প্রতি সত্ত্বার যে নাম 
আর রূপযে বৈচিত্রতা বাক্‌। বাক্‌ হয়েছেন আধার আর প্রাণ হয়েছেন আধেয়। তাই সাম বেদের 
অন্তর্গত ছান্দোগ্য উপনিষদে ঋষি বলেছেনযে এই অগ্নি বা প্রাণাগ্নিই প্রাণআর এই শরীর বা পৃথিবীই 
বাক্‌। প্রাণ কে বলা হয়েছে, ‘সা’ এবং বাক্‌কে বলা হয়েছে ‘অম্‌' আর এই দুইজন একত্রে ‘সাম' 

বৃহদারণ্যক উপনিষদে ঋষি বলেছেন যে গায়ত্রী অর্থে ‘গয়ানাং তত্রে’, অর্থাৎ যিনি ‘গয়দের ত্রাণ করেন
 ‘গয়’ অর্থে তারাযাদের সাহায্যে আমরা ‘গতাগতি’ করি বা সক্রিয় থাকি  তাই  গয়’ শব্দের অর্থ 
ইন্দ্রিয়' আমাদের ইন্দ্রিয় গুলি এখন সীমিত এবং ক্ষয়িষ্ণু। আমাদের দর্শনশ্রবণআঘ্রাণ ইত্যাদি 
শক্তিগুলি সীমিত। শুধু তাই নয়কাল গতিতে এরা ক্ষীণ হয়ে যায়। যিনি মৃত্যুহীন প্রাণযিনি সবার চেতনা,
 যিনি মুখ্যপ্রাণতাঁর নিয়ন্ত্রণে আমরা ক্রমশবিবর্ত্তিত হয়ে আত্মজাগরণের পথে চলেছি। এতে মৃত্যু ধীরে
 ধীরে দূর হয়ে যায় এবং অবিনশ্বর আত্মা আর তাঁর নিয়ন্ত্রণময় স্বরূপ বা মুখ্যপ্রাণের উদয় হয়। মৃত্যু দূর 
হয় বলেমৃত্যু এঁর থেকে দূরে থাকে বলেউপনিষদ এঁকে ‘দুর্গা’ বলে অভিহিত করেছেন। 
উপনিষদে বলা হয়েছে যে মুখ্যপ্রাণ ‘অশ্বনাম ধারণ করে মনুষ্যদের মৃত্যুর পরপারে নিয়ে যান। (দুর্গা 
পূজার বৈদিক রূপ হল অশ্বমেধ যজ্ঞ।)

চোখ বা দর্শন শক্তি মৃত্যুকে অতিক্রম করে যা সূর্য তাই হয়ে দীপ্ত হয় বা তার সাথে এক হয়। যা কিছু ছিল
 অদৃষ্ট তা দৃষ্ট হয়। শ্রুতি বা শ্রবণ শক্তি হয়ে যায় দিক্‌। যা কিছু ছিল অশ্রুত তা শ্রুত হয়। যা ছিল সীমিত
 স্পর্শ তা বিপুল বায়ুমণ্ডলের সাথে এক হয়। মন হয়ে যায় চন্দ্রমা। সেই মনমৃত্যুর পরপারে গিয়ে আর 
কখনো অবসন্ন হয় না।  এই ভাবে ইন্দ্রিয় গুলি অতিন্দ্রিয় এবং অক্ষয় হয়। এইটি দ্যুলোকদেব ক্ষেত্র
গায়ত্রী দেবগণের মাতা।

৩। ১২।   
যা বৈ সা গায়ত্রীয়ং বাব সা যেয়ং পৃথিব্যস্যাং হীদং সর্ব্বং ভূতং  প্রতিষ্ঠিতমেতামেব নাতিশীয়তে।

অন্বয় অর্থ।  
যা বৈ সা (যে এই সেইগায়ত্রী(গায়ত্রীইয়ং বাব (ইহ বা এই পৃথিবীইসা (সে) 
  ইয়ং (যে এই)  পৃথিবী (পৃথিবীঅস্যাং (তাতেহি (অব্যশ্যইইদং সর্ব্বং (এই সব)  ভূতং (ভূত সকল)  প্রতিষ্ঠিতম্‌ (প্রতিষ্ঠিত)  এতম্‌ এব (এই রকম একে)    অতিশীয়তে (অতিক্রম করতে পারে না)

অর্থ। 
যে এই সেই গায়ত্রী ইহ বা এই পৃথিবীই সে।  যে এই পৃথিবী তাতে অব্যশ্যই এই সব ভূত সকল প্রতিষ্ঠিত। 
এই রকম একে অতিক্রম করতে পারে না।

নিরুক্ত। 
পৃথিবী অর্থে যেখানে ‘ভূতসকল প্রতিষ্ঠিত বা বিধৃত। পৃথক পৃথক অস্তিত্ব নিয়েআকার এবং আয়তন 
নিয়ে যেখানে বা যার অধিকারে সবাই থাকেতা পৃথিবী। এই আমরা যারা ভূত অর্থাৎ আলাদা আলাদা 
অস্তিত্ব নিয়ে মূর্ত্ত হয়ে বা মর্ত্ত্য হয়ে রয়েছিআমরা পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত এবং এই পৃথিবী বা পার্থিবতাকে 
অতিক্রম করতে পারি না। এই গায়ত্রী বা বাক্‌ই একেবারে স্থূল হয়ে মূর্ত্ত হয়েছেন বিশ্ব ভূবনের আকারে। 
তাই গায়ত্রীই এই পৃথিবী। 

৩। ১২। ৩  
যা বৈ সা পৃথিবীয়ং বাব সা যদিদমস্মিন্‌ পুরুষে শরীরস্মিন্‌ হীমে প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠিতা এতদেব নাতিশীয়ন্তে। 
অন্বয় অর্থ। 
যা বৈ সা পৃথিবী (যে এই সেই পৃথিবী), ইয়ং (ইহাবাব সা (সেইযৎ (যাইদম্‌ (এইঅস্মিন্‌ পুরুষে (এই 
পুরুষেশরীরম্‌ (শরীর) অস্মিন্‌ হি (এতেইএই শরীরেইইমে প্রাণাঃ (এই প্রাণ সকলএই ইন্দ্রিয় সকল)  প্রতিষ্ঠিতা (প্রতিষ্ঠিত)  এতৎ এব (এরা/এই ইন্দ্রিয়রা অতিশীয়ন্তে (অতিক্রম করতে পারে না)
 যে এই সেই পৃথিবীইহা ( ) সেই যা এই পুরুষে শরীর। এতেইএই শরীরেই এই প্রাণ সকল (এই ইন্দ্রিয় 
সকলপ্রতিষ্ঠিত। এরা (এই ইন্দ্রিয়রা) (শরীরকেঅতিক্রম করতে পারে না।
অর্থ।
যে এই সেই পৃথিবীইহা সেই যা এই পুরুষে শরীরএতেইএই শরীরেই এই প্রাণ সকল (এই ইন্দ্রিয় সকল)  প্রতিষ্ঠিত  এরা (এই ইন্দ্রিয়রা) একে অতিক্রম করতে পারে না
 যে এই সেই পৃথিবী  সেই যা এই পুরুষে শরীর। এতেইএই শরীরেই এই প্রাণ সকল (এই ইন্দ্রিয় সকল)
 প্রতিষ্ঠিত। এরা (এই ইন্দ্রিয়রাশরীরকে অতিক্রম করতে পারে না।

নিরুক্ত।
শরীর হল তাই , যা অন্তর আর বহিঃ এই দুই এর মাঝে। যেমন বাহিরে আকাশ আর পৃথিবীসেই রকম 
আমাতে (অধ্যাত্মেঅন্তর বা অন্তারাকাশ এবং শরীর। 
যেমন আমিই দেখিচোখ দেখে নাকিন্তু আমার দেখা বা দর্শন চোখে প্রতিষ্ঠিত। সেই রকমআমিই শুনি,
 কান শোনে নাকিন্তু আমার শ্রবণ কানে প্রতিষ্ঠিত।এই ভাবে চিন্ময় আমার সমস্ত ক্রিয়াশীলতা একটা 
ছাঁদ বা ছন্দবদ্ধ হয়ে ‘শরীর’ হয়ে প্রকাশ পেয়েছে। এই ভাবে অসীম চেতনাও সীমাময় হয়েছেননাম-রূপময় হয়ে একেবারে স্থূল বিশ্ব বা মর্ত্ত হয়ে ফুটে উঠেছেন। তাই যা আমাতে শরীরতা বাহিরে,এই 
মহাপ্রাণেস্থূল নাম-রূপময় বিশ্ব বা পৃথবী। 
আমরা শরীরী বলেনিজের চিন্ময়তা খেয়াল করিনা বলেশুধুমাত্র যা পার্থিবযা শরীরে প্রতিষ্ঠিত 
ইন্দ্রিয়গুলির দ্বারা গোচর হচ্ছে বা অনুভূত হচ্ছেশুধু তাই জানছি। শরীর ক্ষীণ হতে থাকলে আমাদের 
ইন্দ্রিয়গুলিও অক্ষম হতে থাকে। এই জন্য বলা হল এই ইন্দিয়গুলি বা প্রাণশক্তি এই শরীরে প্রতিষ্ঠিত এবং
 শরীরকে এরা অতিক্রম করতে পারে না। এইটি আমাদের মর্ত্ত্যময় অবস্থা। 

৩। ১২।   
যৎ বৈ তৎ পুরুষে শরীরমিদং বা তদ্‌যদিদমস্মিন্নন্তঃপুরুষে হৃদয়স্মিন্‌ হীমে প্রাণাঃ প্রতিষ্ঠিতা এতদেব 
নাতিশীয়ন্তে। 

অন্বয় অর্থ।
যৎ বৈ তৎ ( যা সেইপুরুষে(পুরুষেশরীরম্‌ (শরীর),  ইদং বা (ইহাই ) তৎ (তা)  যৎ (যাইদম্‌ (এই), অস্মিন্‌ অন্তঃ (এই অন্তর
পুরুষে (পুরুষে)  হৃদয় (হৃদয়); অস্মিন্‌ হি (এতেই)  ইমে (এই সকলপ্রাণাঃ (প্রাণ বা ইন্দ্রিয়প্রতিষ্ঠিতাঃ
 (প্রতিষ্ঠিত  এতৎ এব (এরা/এই ইন্দ্রিয়রা অতিশীয়ন্তে (অতিক্রম করতে পারে না) 
 অর্থ।   
যা সেই পুরুষে শরীর ইহাই (এইতাযা এই এই অন্তর পুরুষে হৃদয়এতেই এই সকল প্রাণ বা ইন্দ্রিয় 
প্রতিষ্ঠিত। এরা (এই ইন্দ্রিয়রা) (হৃদয়কে)  অতিক্রম করতে পারে না। 
নিরুক্ত।
যেখানে আমাদের মর্ম্মযেখানে আমরা সুখদুঃখঈর্ষামান-অভিমান  ইত্যাদি অনুভব করিযেখানে আমরা আমাদের সব কিছুকে ‘আমার সন্তানআমার টাকা
আমার জীবন’ ইত্যাদি বলে ধরে আছিসেইখানকার নাম ‘হৃদয়' 
নিজের অন্তরে হৃদয় দিয়েই আমরা আমাদের সমস্ত অনুভূতিকে বা আমাদের ‘অনুভূতির বিশ্বকেধরে 
রেখেছি। আমরা শব্দস্পর্শ ইত্যাদি যাই অনুভব করিতা হৃদয় দিয়েই করি। যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ
যে শক্তির দ্বারা ধরিত্রী আমাদের ধরে রেখেছেন তা হৃদয়েরই আকর্ষণ। হৃদয় বা মধ্যভূমির যে আকর্ষণ 
তা মাধ্যাকর্ষণ। এই প্রাণ শক্তিএই ইন্দ্রিয়গুলিএই অনুভূতি সকলঅন্তরে হৃদয়েই প্রতিষ্ঠিত।
যেমন স্থূলেইন্দ্রিয়গুলি শরীরে প্রতিষ্ঠিতসেইরকম অন্তরে ইন্দ্রিয় বা অন্তঃকরণ সকল হৃদয়েই 
প্রতিষ্ঠিত। তাই এরা হৃদয়কে অতিক্রম করতে পারে না। 

৩। ১২। 
সৈষা চতুষ্পদা ষড়্‌বিধা গায়ত্রী তদেতদ্‌চাভ্যনূক্তম্‌। 
অন্বয় অর্থ। 
সা (সেইএষা:(এইচতুঃ পদা: (চতুষ্পদ বা চারটি পদ যুক্তষড়্‌ বিধাঃ (ষট্‌ বা ছয় প্রকার বা যাঁর ছয়টি বিধিগায়ত্রী (গায়ত্রী)  তৎ (সেই)  এতদ্‌ (এইঋচাঃ (ঋক্‌ সকলঅভি (উদ্দেশ্যে)  অনু উক্তম্‌ (অনু উক্ত হয়)

অর্থ।
সেই এই চতুষ্পদ (চারটি পদ যুক্তষট্‌ বা ছয় প্রকার বা যাঁর ছয়টি বিধি (সেই)  গায়ত্রী   সেই এই ঋক্‌ 
সকল (এঁর)উদ্দেশ্যে (এবংঅনু (অনুসারেউক্ত হয়।

নিরুক্ত (পরবর্ত্তী মন্ত্র দ্রষ্টব্য।)

৩। ১২। 
তাবানস্য মহিমা ততো জ্যায়াংশ্চ পুরুষঃ। 
পাদঃ অস্য সর্ব্বা ভূতানি ত্রিপাদস্যামতৃং দিবীতি। 
অন্বয় অর্থ।
তাবান্‌  (ততোটাইঅস্য (এনার)  মহিমা (মহিমাততঃ (তার থেকেমহিমা থেকে)  জ্যায়াংশ্চ (জ্যেষ্ঠ
পুরুষঃ (পুরুষ) 
পাদঃ (পদ/পাঅস্য (এইসর্ব্বা (সর্ব্বভূতানি (ভূত),  ত্রিপাদ (ত্রিপাদঅস্য (এইঅমতৃং (অমৃতময়
দিবি (দ্যু লোকইতি।

অর্থ।
ততোটাই এনার মহিমা তার থেকে (মহিমা থেকেজ্যেষ্ঠ পুরুষ। 
(একটিপাদ (পাএই সমস্ত ভূত সকল;  ত্রিপাদ (তিনটি পাএই অমৃতময় দ্যু লোক।  

নিরুক্ত।
এই সেই গায়ত্রীযিনি সর্ব্ব ভূতপৃথিবী বা সমস্ত বাহ্য প্রকাশ যাঁর শরীরহৃদয়ের দ্বারা যিনি বিশ্বভূবনকে
 ধারণ করেছেনতাঁর চারটি পা। একটি পায়ে সমস্ত মূর্ত্ত বিশ্ব বা ভূত সমূহ প্রতিষ্ঠিত। পা,পাদ বা পদ 
অর্থে প্রতিষ্ঠাযার দ্বারা কেউ স্থিত থকে বা দাঁড়িয়ে থাকতে পারে। এই পদের অর্থই পদার্থ। এক এক 
পদ ক্ষেপে এক এক রকম পদার্থ বা পদের অর্থ প্রকাশ পাচ্ছে। 
আর বাকি তিনটি পায়ে অমৃতময় দ্যুলোক প্রতিষ্ঠিত। ত্রি বা তিন হল ত্রাণ বাচক সংখ্যা। মৃত্যুর দ্বারা 
আচ্ছন্ন যে মর্ত্ততার থেকে ত্রাণ পেয়েছে যে লোকসকলতা এই ত্রিপাদে। অথবা যে লোকে গেলে 
মৃত্যুর থেকে ত্রাণ পাওয়া যায়সেই লোক বা লোক সকল গায়ত্রীর ত্রিপাদে স্থিত। 
এই পদবিষ্ণুর পরমপদ বলে বেদে উক্ত হয়েছে।  বিষ্ণুর পরমপদ এবং ত্রিপাদের কথা বেদে বলা 
হয়েছে। প্রাণ বা বিষ্ণুর গতি (পদ চারণাবা সংক্রমণই কাল। গায়ত্রীর ধ্যানেঋক্‌যজুঃ এবং সাম এই 
তিন বেদ বা প্রাণের ভঙ্গিমা বা বেদনকে গায়ত্রীর ত্রিপাদ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। 

তাবান্‌  (ততোটাইঅস্য (এনার)  মহিমা (মহিমাততঃ (তার থেকেমহিমা থেকে)  জ্যায়াংশ্চ (জ্যেষ্ঠ
পুরুষঃ (পুরুষএই ত্রিপাদ এবং চতুর্থ পাদে যা কিছু তা এই গায়ত্রীর বা পরম আত্ম পুরুষের মহিমা
আর এই পুরুষ সেই মহিমাকেও অতিক্রম করে রয়েছেন।  

এই পরম আত্ম স্বরূপইনি নিজেই নিজের মহিমা। আবার সব হয়েও ইনি যেমন তেমনি থাকেন। তাই 
ইনি মহিমাকে অতিক্রম করে রয়েছেন। 

ইনি ষট্‌ বিধা বা এঁর ছয়টি বিধি। ইনি ছয় ভাবে আমাদের বিদ্ধ করেন। শব্দস্পর্শরূপরসগন্ধ এই 
পাঁচটি আমাদের কামময় করে রেখেছে। এদের প্রতি আমরা সর্ব্বদা ছুটছি।  এই পাঁচটির দ্বারা বা পঞ্চ 
শরের দ্বারা আমাদের বিদ্ধ করেছেন।  এই পাঁচটি শব্দস্পর্শ ইত্যাদি পঞ্চ তন্মাত্রা বা পঞ্চ প্রাণ)  আর আত্মবোধ/নিজবোধস্বয়ংবোধবা যিনি আত্মাযাঁর 
নিজত্ব নিয়ে আমরা তাতে ‘আমিত্ব একটা অভিমান চাপিয়ে নিজের পরিচয় দিইসেই নিজবোধকে 
নিয়ে ছয় বা ষট্‌ ভাবে আমরা এঁর দ্বারা বিদ্ধ হয়েছি বা বিশেষ ভাবে বিধৃত হয়েছি। এই ধরে মা ষষ্ঠীর পূজা
 হয় নব জাতকের ষষ্ঠ জন্ম দিনে। এই ষট্‌ বা ছয় হল মধুবাচক সংখ্যা। তাই মধুমক্ষিকাদের পায়ের যে 
সংখ্যা তাও ছয় বা ষট্‌। 
এই গায়ত্রী বিদ্যা ছান্দোগ্য উপনিষদের তৃতীয় অধ্যায়ের অন্তর্গত এবং  অধ্যায়ে মধুবিদ্যাও উক্ত
 হয়েছে। 
 মধু বিদ্যায় পাঁচটি মধু বা পঞ্চ অমৃতের কথা বলা হয়েছে। সমস্ত দেব ক্ষেত্র এই মধু পান করছে। 
এই দেব ক্ষেত্র আবার পাঁচটি দলে বা গণে বিভক্ত——১। বসু গণ২। রুদ্রগণ৩। মরুৎ গণ৪। আদিত্য 
গণ৫। সাধ্য গণ।  দেব ক্ষেত্র প্রকাশময়। এই স্বয়ংপ্রকাশ গায়ত্রীর যে জ্যোতী বা ভর্গ তা  দেবগণের 
মধ্যে দিয়ে প্রকাশ পাচ্ছে। আবার  দেবক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে সেই ভর্গ আমাদের মধ্যে এসে আমাদেরকে 
চেতায়িত করছে। স্বয়ংপ্রকাশ গায়ত্রীযিনি স্বয়ংপ্রকাশ আত্মা তিনি এবং তাঁর  পঞ্চ প্রাণময়তা বা পঞ্চ
 অমৃতময়তা নিয়ে ইনি হলেন ‘ষট্‌বিধা গায়ত্রী   

(আত্মা হলেন মধু আর প্রাণ হলেন দধি (যা ধারণ করে); এই দুইয়ের মন্থ নিয়ে বৈদিক কর্ম্ম কৃত হয়। 
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে বাকের একটি স্তনের নাম ‘বষট্‌কার' স্বাহাকার আর বষট্‌কার এই দুইটি স্তন দ্বারা 
বাক্‌ দেবতাদের পালন করেন। পৃতৃগণদের পালন করেন স্বধাকার বলে যে স্তন তার দ্বারা এবং মনুষ্যদের
 পালন করেন হন্তকার বলে বলে যে স্তন তার দ্বারা। )

৩। ১২।   যদ্‌ বৈ তদ্‌ ব্রহ্মেতীদং বাব তদ্‌ অয়ং বহির্ধা পুরুষাদাকাশো যো বৈ  বহির্ধা পুরুষাদাকাশঃ।
 অন্বয় অর্থ।
যদ্‌ বৈ (যাতৎ (সেই)  ব্রহ্ম (ব্রহ্মইতি,  ইদং বাব (ইহাইতৎ (তা)  :(যা)  অয়ং(এই)  বহির্ধা (বাহিরে)  পুরুষাৎ (পুরুষের থেকেআকাশো (আকাশযো বৈ (যা )  (সেইবহির্ধা (বাহিরে)
 পুরুষাৎ (পুরুষের থেকেআকাশঃ (আকাশ)

অর্থ।
যা সেই ব্রহ্মইহাই তা যা এই পুরুষের বাহিরে আকাশ;  যা সেই পুরুষের বাহিরে আকাশ।

নিরুক্ত
ব্রহ্ম অর্থে যিনি বৃহৎ এবং বর্দ্ধিত হচ্ছেন। বৃংহণ করছেন এর নাম ব্রহ্ম। যে ডাকের দ্বারা বৃহৎ হয় তার 
নাম বৃংহণ। (তাই হাতীর ডাককেও বৃংহণ বলা হয়।) 
পুরুষ অর্থে যে খণ্ডিত (হয়ে একটি পুর বা আয়তন বা শরীরের মধ্যে আছে। ‘অক্ষরটির দ্বারা 
খণ্ডনবোঝায়যে কারণে বলা হয় ‘পেট কাটা  
এই মহাপ্রাণ নিজেকে নিজের দ্বারাই খণ্ডন করেছেন। যে শক্তির দ্বারা তিনি নিজেকে খণ্ডন করে বহু 
করেছেনবহু পুর বা বহু নাম-রূপময় সত্ত্বা প্রকাশ করেনতার নাম 
বাক্‌ বাকের দ্বারা বা শব্দোচ্চারণের দ্বারা ইনি বহু হন। তাই সব কিছুকে বাক্যের দ্বারাই আমরা বর্ণনা 
করি। ইনি স্বয়ং শক্তিইনি নিজেই নিজের শক্তি। 
তাই ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে, ‘পুরুষের সার বাক্‌ আত্মপ্রকাশের যে ভূমি বা স্বরূপ তার নাম ‘আকাশ' 
আকাশআত্ম + কাশকাশ্‌ (প্রকাশ বা দীপ্তি) শব্দ হল তন্মাত্রা আর আকাশ হল তত্ত্ব।বিশ্ব ভুবনের সমস্ত শব্দ এই আকাশে। সমস্ত বিশ্বভূবন এখানে
 শব্দের আকারে বিধৃত রয়েছেশবের মত প্রকাশ হারিয়ে রয়েছে আবার এখান থেকেই প্রকাশ পাচ্ছে।
 শবত্ব দান করা এবং শবত্ব কে বিদারণ করে নাম রূপময় হওয়াএই দুইই এই মহাশক্তি বাকের স্বভাব। 
এই ভাবে শব্দের দ্বারাই ইনি ব্রহ্ম হয়েছেন;ইনি বৃহৎ এবং অনতিক্রমনীয়া। তাই এই পুরুষের বাহিরে যে 
আকাশ তা ব্রহ্ম। 

(একদিকে এই আকাশ শবে ভরা শ্মশান। আবার এখান থেকেই সবাই নামরূপময় হয়ে ফুটে উঠেছে। 
এই বাক্‌ শব্দোচ্চারণ করছেন জিহ্বা দিয়েআর যে নিজেকে খণ্ডন করছেনতার করণ হল খড়্গযার 
দ্বারা ‘খট্‌’(short) বা নিজেকে খণ্ডিত করে বহু করছেন। যেখান দিয়ে উচ্চারিত শব্দরাশি বাহিরে বা
 আকাশে ফুটে উঠছে তা হল কণ্ঠ বা গলা। আর সেই গলাতে  খণ্ডিত প্রকাশগুলি বা মূর্তিগুলি যা 
অনন্ত বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডতা মালার আকারে শোভা পাচ্ছে। রুধির বা অনুরাগের ধারা  জিহ্বা আর ঠোঁটের 
দুপাশ এবং ছিন্ন মুণ্ডগুলি থেকে ঝরে পরছে। )

৩। ১২। 
অয়ং বাব  যঃ অয়মন্তর্হৃদয় আকাশস্তদেতৎ পূর্ণমপ্রবর্তি পূর্ণামপ্রবর্তিনীং শ্রিয়ং লভতে  এবং বেদ। 
অন্বয় অর্থ।
অয়ং বাব (ইহাই: (সেযঃ (যেঅয়ম্‌ (এই)  অন্তঃ হৃদয় (হৃদয়ের অন্তরে)  আকাশঃ (আকাশ); তৎ এতৎ (সেই এই)  
পূর্ণম্‌ অপ্রবর্তি (পূর্ণ এবং অপরিবর্ত্তনশীল);  পূর্ণাম্‌ (যা পূর্ণঅপ্রবর্তিনীং (যা অপরিবর্ত্তনশীলশ্রিয়ং (শ্রীলভতে (লাভ করে)— (যেএবং(এই রকমবেদ (জানেন) 
অর্থ। ইহাই সে যে এই হৃদয়ের অন্তরে আকাশসেই এই পূর্ণ এবং অপরিবর্ত্তনশীলযা পূর্ণযা 
অপরিবর্ত্তনশীল (সেই)  শ্রী লাভ করেযে এই রকম বেদনময় হন (জানেন) 

নিরুক্ত। 
 যে ব্রহ্মযিনি  বাহিরের আকাশ আর  যে হৃদয় (৩। ১২।  দ্রষ্টব্যএই 
দুইআর  হৃদয়ের অন্তরে আকাশএরা একই। 
বহিঃ এবং অন্তর (বা হৃদয়এই দুই যাঁর প্রকাশ তাঁকে অন্তর-হৃদয় আকাশ বলা হয়েছে।উপনিষদ এই আকাশকে ‘দহর বা  দহরাকাশ’ নামে উল্লেখ করেছেন।  যিনি
 পরম আত্মস্বরূপযিনি আমাদের মধ্যে আত্মবোধ আকারে উপলব্ধ হচ্ছেনযাঁর ক্রিয়াময় স্বরূপকে 
লক্ষ করে আমরা তাঁকে জ্ঞান , বোধচেতনাপ্রাণ বলে সম্বোধন করিসেই বোধ প্রকাশে প্রথমে অন্তর 
এবং বাহির বা বহিঃ বলে দুইটি বোধ প্রকাশ পায়। 
যেখানে আমরা অনুভূতিময় সেইটি অন্তরাকাশ বা অন্তরে যে আকাশ। আমাদের সকল অনুভূতি অন্তরে
 বাহির বলে যা বোধ হচ্ছেতা অন্তরেই হচ্ছে। 
বাক্‌ যা কিছু হয়েছেনতা সম্ভূতি। সেই সম্ভূতি অনুসারে আমরা অনুভূতিময়। যেটি একটি বৃক্ষতা  
বিশ্ব প্রজ্ঞায় মহা চৈতন্যে সৃষ্টি হয়েছে। ঐটির নাম সম্ভূতি বা বহিঃ।  তাঁর সেই বৃক্ষ রূপ বা বৃক্ষ জ্ঞান 
আমাদের মধ্যে বৃক্ষের জ্ঞান বা অনুভূতি ফুটিয়ে দিচ্ছে। এইটি অন্তর বা অধ্যাত্ম। (উপনিষদে 
অনুভূতিকে ‘বিনাশ’ বলা হয়েছে কেননা আমাদের অনুভূতি ক্ষণস্থায়ী বা মৃত্যুর দ্বারা লয় হয়।)  আর 
এই দুই আকাশসম্ভূতি আর অনুভূতি হয়ে যিনি ফুটছেনসেই বাক্‌যিনি স্বয়ংপ্রকাশ তিনি  
অন্তর হৃদয় আকাশযিনি বহিঃ এবং অন্তর দুইকেই নিয়ন্ত্রণ করছেন।  

(ঋচঃ অক্ষরে পরমে ব্যোমন্‌যস্মিন্‌ দেবাঃ অধিবিশ্বে নিষেদুঃ
যস্তং  বেদ কিমৃচা করিষ্যতি  ইত্তদ্বিদুস্ত ইমে সমাসতে।।(শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ) 
যিনি অক্ষর বা অক্ষয়যিনি পরম ব্যোমযাঁতে ঋক্‌ (মন্ত্রসকল এবং বিশ্বে অধিষ্ঠিত দেবতারা নিহিত
যারা তাকে না জানেতারা ঋক্‌ (মন্ত্রদিয়ে কি করবে?
যাঁরা এঁকে এই ভাবে জানেনসেই তাঁদের কাছে সব সমাধিত হয়। )

এই অন্তর হৃদয় আকাশ পূর্ণ। উপনিষদে ঋষি বলেছেন, ‘যৎ  অস্তিযৎ  নাস্তি সর্ব্বম্‌ অস্মিন্‌ সমাহিতম্‌যা কিছু আছেযা কিছু নেই সব এই আকাশে 
নিহিত। 
এই আকাশ পূর্ণ এবং ‘অপ্রবর্তি' ‘অপ্রবর্তিঅর্থে যেখানে প্রবর্ত্তন নেইযেখানে কোন  কিছুর আরম্ভও 
নেই এবং অন্তও নেইঅর্থাৎ যিনি  অপরিণামী এবং অনন্ত। 

পূর্ণাম্‌ (যা পূর্ণঅপ্রবর্তিনীং (যা অপরিবর্ত্তনশীলশ্রিয়ং (শ্রীলভতে (লাভ করে)— (যেএবং(এই রকমবেদ (জানেন)——এই অন্তর হৃদয়াকাশযা অক্ষর পুরুষের বপু,  যিনি অক্ষর ব্রহ্মবাক্‌ যাঁর শক্তি,  যিনি পূর্ণ এবং
 অপরিণামীতাঁকে আশ্রয় করলে পূর্ণতা এবং অবিনশ্বরতা এই দুই শ্রী প্রকাশ পায়। সেই আকাশকে 
যিনি জানেনতিনি পূর্ণতা এবং অবিনশ্বরতার দ্বারা মণ্ডিত হন।   
------------------------
দেবকুমার লাহিড়ী।
debkumar.lahiri@gmail.com 














Comments

Popular posts from this blog

ঈশোপনিষদ্‌ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotaions, meanings, etymolgies and explanation.)

শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা । আচার্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। মূর্ত্তি পূজা রহস্য এবং বেদ। ( ১৯৪১ সাল/ সন ১৩৪৮ এর শারদীয়া দুর্গাপূজা, শ্রীমতী সরলা দেবী চৌধুরাণী সঙ্কলিত।) (Durga Puja of 1941 in Bengali language--Performed by Rishi Bijoykrishna Chattopadhaya and recorded by Sarala Devi Chowdhurani.)

বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জাগ্রত, স্বপ্ন এবং নিদ্রার বিজ্ঞান।(Bengali translation of Fourth chapter, Third part of Brihadaranyaka Upanishad with original texts and meanings---science of the state of awakeness, dream and sleep.)