শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা । আচার্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। মূর্ত্তি পূজা রহস্য এবং বেদ। ( ১৯৪১ সাল/ সন ১৩৪৮ এর শারদীয়া দুর্গাপূজা, শ্রীমতী সরলা দেবী চৌধুরাণী সঙ্কলিত।) (Durga Puja of 1941 in Bengali language--Performed by Rishi Bijoykrishna Chattopadhaya and recorded by Sarala Devi Chowdhurani.)

 আচার্য্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। মূর্ত্তি পূজা রহস্য এবং বেদ ১৯৪১ সালসন ১৩৪৮ এর শারদীয়া দুর্গাপূজা)।          

ভূমিকা।

(Rishi Bijoykrishna of Howrah (also was fondly called as Howrah's Thakur--the god of Howrah) used to perform Durga Puja and Puja of Viswamata (Universal Mother). The divine words and the mantras originated from him during the Durga Puja of 1941 are recorded in this book by his devoted disciple Sarala Devi Chowdhurani (who was also the niece of Ravindranath Thakur(Tagore). Durga is Mukhya Praana or the Universal Life goddess of the Veda and Her Puja was also celebrated as Asvamedha Yajna during the ancient ages of the kings.This book is written in Bengali(Bangla).

মহর্ষি বিজয়কৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায় সশিষ্য-দুর্গাপূজা এবং বিশ্বমাতা পূজা হাওড়ার কালীকুণ্ড লেনে প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত করতেন। মহর্ষির শিষ্যা স্বর্গীয়া সরলাদেবী চৌধুরাণী, অনেকগুলি বৎসরের পূজার বিবরণ---- মহর্ষি-উক্ত মন্ত্র এবং পুজাকালীন দিব্য-বাক্য সকল,  শ্রুতি লিখনের দ্বারা লিপিবদ্ধ করেছিলেন, এবং পরে তা পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়েছিল। মহর্ষির একটি জীবনালেখ্য, তাঁর শিষ্য স্বর্গীয় মন্মথনাথ সেনগুপ্ত প্রণয়ন করেছিলেন। সেই গ্রন্থটি সাতটিখণ্ডে www.slideshare.net এবং www.scribd.com ‘Biography of A Vedic Rishi in Bengali Language’ এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৯৪১ সাল/ সন ১৩৪৮ এর শারদীয়া দুর্গাপূজার মহর্ষি-উক্ত মন্ত্র এবং পুজাকালীন দিব্য-বাক্য সকল এইখানে পুনঃ-প্রকাশিত করা হল।


একটি সংক্ষিপ্ত সূচীপত্র যোগ করা হয়েছে। কোন কোন দিনের পূজার বিবরণের শেষেপ্রকাশকের মন্তব্য' বলে একটি অংশ যোগ করা হয়েছে; ‘প্রকাশকের মন্তব্য' এবং সূচীপত্র আমার লিখিত এবং মূল পুস্তকে নেই। 


(প্রায় দশ-বৎসর পূর্ব্বে  মুল পুস্তকটি www.scribd.com (< https://www.scribd.com/document/179040586/Durga-Puja-performed-by-Rishi-Bijoykrishna-Chattopadhaya-of-Howrah-during-1937-in-Bengali-Language>) এবং www.slideshare.net প্রকাশ করা হয়েছিল।কোন অজ্ঞাত কারণে Slideshare কয়েকটি পাতা বাদ পরে গেছে, যদিও Scribd সবগুলি পাতাই আছে। যেহেতু Slideshare ভ্রম-সংশোধন করা সম্ভব নয়, সেইজন্য Slideshare থেকে পূর্ব-প্রকাশিত গ্রন্থটি সরিয়ে নেওয়া হল।)  


সংক্ষিপ্ত সূচীপত্র।

১। প্রথম দিন——বোধন। 


২। দ্বিতীয় দিন——সপ্তমী পূজা। 

বিল্বশাখা——নিজবোধ প্রবাহ। নবপত্রিকা-স্নান; মহাপ্রাণের স্নায়ুজালস্নাবিরা দুর্গা। নবার্ণময়ী, নবমহিমাময়ী দুর্গা।নবার্ণ মন্ত্র। মহাস্নানঋক্‌, যজুঃ,সাম, অথর্ব্ব বেদময়ী নবদুর্গা।আত্মস্তুতিময় দুর্গা  (অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাং) এবং সোম।  প্রাণপ্রতিষ্ঠা। হোমঅমা শব্দের অর্থ;  বৃহদারণ্যক-উক্ত মধুবিদ্যার মন্ত্র দ্বারা হোম। 


৩। তৃতীয় দিনঅষ্টমী পূজা। 

ঋক্‌বেদোক্তওঁ হংসঃ শুচিসৎ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ…’ মন্ত্রের দ্বারা দেবী-পূজা এবং মন্ত্রার্থ। প্রাণ প্রকাশ বা সোম। অন্তর বহিঃ। ওঁ এবং ব্যোম। স্বসম্বেদন। দুরোণ ( দ্রোণ ) বা সোমের কলসীর অন্তরে স্থিত অতিথি। সোমলতা, সোমপেষণ, সোমরস-নিষ্কাশন। প্রাণরূপ দধি, আত্মরূপ মধু, বিশ্বজ্ঞানরূপ ঔষধি, সর্ব্বৌষধিমন্থ। কুবিৎসোম। ঐং হ্রীং ক্লীং——বীজমন্ত্রের অর্থ। শূলোদ্ভিন্ন মহিষাসুর। অগ্নিবর্ণা দুর্গা। 'রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহিমন্ত্রের অর্থ। সোমবল্লভা দুর্গা। সন্ধি পূজা। 


৪।চতুর্থ দিননবমী পূজা। 

'যা চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্‌এর অর্থ। জাতবেদা। যজুর্ব্বেদ---ইন্দ্রিয়---- প্রাণ। ঋক্‌বেদময় বাক্‌। মহিষ, সিংহ, মহিষাসুরমর্দ্দিনী। মহিষখণ্ডিত মহিমা। ছান্দোগ্য উপনিষদ উক্ত মধুবিদ্যা——আদিত্যের বিভিন্ন দিকে এবং বিভিন্ন কাল-পরিমাণে উদয়াস্ত। হৃদয় এবং বরুণ লোক। জয়ন্তী দুর্গা এবং অশ্বমেধ যজ্ঞ।ইন্দ্রিয় অশ্ব। উষা, ঊষ্মা, প্রাণ ওষধি। সোম। বসু, রুদ্র, আদিত্য, মরুৎ এবং সাধ্য দেবতা। ছান্দোগ্য উপনিষদের মধুবিদ্যায় উক্ততিরশ্চীন বংশ বলিদান। কুবিৎ সোম, এবং মহিষমর্দ্দিনীর সোম বা অসুরধ্বংসী সোম। 'অঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি 


৫। পঞ্চম দিনবিজয়া দশমী। 

অধিদৈব এবং অধ্যাত্ম শরীর। একাদশ রুদ্র, আত্মবেদন এবং অথর্ব্ব আঙ্গিরস। প্রাণরূপ অশ্ব বা ইন্দ্রিয় সকলের প্রসারণ, বেদগতি-ইন্দ্রিয়। অসুরত্ববাহ্যবিশ্ব দর্শন। বেদবর্ম্মঅস্ত্র শরীর। জাতবেদা। মূর্ত্তি তত্ত্বের অপূর্ব্বতা। বারাহী, কৌমারী, ইন্দ্রাণী ইত্যাদি রূপে বহুলা দুর্গা। ঋক্‌, যজুঃ, সাম ——বেদের প্রবাহিণী শক্তিত্রিবেদ। ত্রিবৃৎময় ব্রাহ্মণ, তিন গাঁটের পৈতা। ত্রিবেদত্রিভঙ্গিমময়ী দুর্গা ( ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানং মহিষাসুরমর্দ্দিনীং) বাক্‌-প্রাণ-মন——তেজ, জল, অন্ন। 'কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে’ ——ইন্দ্রের (ইন্দ্র শক্তি ঐন্দ্রির) দ্বারা বৃত্রাসুর বধ। দধীচি এবং তাঁর অস্থি দ্বারা নির্ম্মিত বজ্র। দধীচি উক্ত মধুবিদ্যা।

                                           

                                    শ্রী শ্রী দুর্গা পূজা। 

                              (আচার্য্য শ্রী বিজয়কৃষ্ণ কৃত)  

 বোধন আশ্বিন  ১৩৪৮, ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪১, শুক্রবার,সন্ধ্যা ৭টায় আরম্ভ।


ওঁ ওঁ ওঁ ওঁ ওঁ ওঁ …(বহু বার) ওঁ কর্ত্তব্যেস্মিন্‌ বার্ষিক-শরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মাঙ্গীভূতবোধনকর্ম্মণি পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু,পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহং।


ওঁ  কর্ত্তব্যে'স্মিন্‌ বার্ষিকশরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মাঙ্গীভূতবোধনকর্ম্মণি স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি


ওঁ  কর্ত্তব্যে'স্মিন্‌ বার্ষিক-শরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মাঙ্গীভূতবোধনকর্ম্মণি ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ ঋধ্যতাং, ওঁ ঋধ্যতাং, ওঁ ঋধ্যতাং।


ওঁ সূর্য্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতানি অহঃ ক্ষপাঃ। পবনো দিক্‌পতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রাহ্মং শাসনং আস্থায় কল্পধ্বং ইহ সন্নিধিং।।


ওঁ অয়মারাম্ভঃ শুভায়ঃ ভবতু। ওঁ অয়মারাম্ভঃ শুভায়ঃ ভবতু। ওঁ অয়মারাম্ভঃ শুভায়ঃ ভবতু। 


ওঁ তৎ সৎ অদ্য আশ্বিনে মাসি কন্যারাশিস্থে ভাস্করে শুক্লে পক্ষে ষষ্ঠ্যাং তিথৌ ( যার যার নাম গোত্র বল ) শ্বঃকর্ত্তব্যবার্ষিকশরৎকালীনদুর্গামহাপূজাকর্ম্মণি তদঙ্গতয়া গণপত্যাদিনানাদেবতাপূজাপূর্ব্বকং বিল্ববৃক্ষে শ্রীভগবদ্দুর্গায়া বোধনমহং করিষ্যে। ওঁ দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা ( বহুবার।) [ মূল মন্ত্রে ঘটস্থাপন ] ওঁ দুর্গে ইহাগচ্ছ, ওঁ দুর্গে ইহাগচ্ছ,ওঁ দুর্গে ইহাগচ্ছ, দেবেশি স্থিরা ভব। ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। 


ওঁ জটাজূটসমাযুক্তাং অর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাং। লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌। অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচননাং।নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বাভরণভূষিতাং। সুচারুদশনাং দেবীং পীনোন্নত পয়োধরাং।ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানং মহিষাসুরমর্দ্দিনীং। মৃণালায়তসংস্পর্শ দশবাহুসমন্বিতাম্‌। মহাসিংহাসনাং দেবীং অঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি।

এবং রূপং গৃহ্ন মাতঃ চিন্ময়ী হৃদবিলাসিনি নিয়ন্ত্রিণি বিশ্বেশ্বরি মাতঃ ঈশ্বরি সর্ব্বরূপিণি।।


ওঁ দুর্গে দুর্গে দুর্গে দুর্গে দুর্গে। ওঁ ইন্দিয়াণাং অধিষ্ঠাত্রী ভূতানাং চাখিলেষু যা। ভূতেষু শততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমোনমঃ। হ্রীং দুর্গে আবির্ভবতু স্বাহা (বহু বার) এতৎ পাদ্যং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। ইদং অর্ঘ্যং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। ঈদং আচমনীয়ং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। ঈদং স্নানীয়ং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এতদ্‌ বস্ত্রং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এষঃ গন্ধঃ হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এতদ্‌ সচনন্দনবিল্বপত্রং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এতৎ পুষ্পমাল্যং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এষঃ ধূপঃ হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এষঃ দীপঃ হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। ঈদং নৈবেদ্যং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা।এতৎ পানীয় গঙ্গোদকং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা। এতৎ তাম্বুলং হ্রীং দুর্গে দুর্গে রক্ষণি স্বাহা।(প্রণাম)


ওঁ চতুর্ভুজং বিল্ববৃক্ষং রজতাভং বৃষস্থিতম্‌। নানা অলঙ্কারসংযুক্তং জটামণ্ডলধারিণম্‌। বরাভয়করং দেবং খড়গখট্টাঙ্গধারিণম্‌। ব্যাঘ্রচর্ম্মাম্বরধরং শশিমৌলিং ত্রিলোচনম্‌।

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বিল্ববৃক্ষায় নমঃ। [ এইরূপে অর্ঘ্যং,আচমনীয়ং, গন্ধং, বস্ত্রং, পুষ্পাণি, ধূপঃ,দীপঃ,নৈবেদ্যং,পানীয়জলং,তাম্বুলং বিল্ববৃক্ষায় নমঃ।] 

ঐং রাবণস্য বধার্থায় রামস্য অনুগ্রহায় চ। অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যা স্তয়ি কৃতঃ পুরা।অহমপি আশ্বিনে তদ্বৎ বোধয়ামি সুরেশ্বরীং।ধর্ম্মার্থকামমোক্ষায় বরদা ভব শোভনে। শক্রেনাপি সংবোধ্য প্রাপ্তং রাজ্যং সুরালয়ে।তস্মাৎ অহং ত্বাং প্রতিবোধয়ামি বিভূতিরাজ্যপ্রতিপত্তি হেতোঃ।যথৈব রামেণ হতৈব দশাস্যস্তথৈব শত্রূন্‌ বিনিপাতয়ামি।দেবি চণ্ডাত্মিকে চণ্ডি চণ্ডবিগ্রহকারিণি।বিল্বশাখা সমাশ্রিত্য তিষ্ঠ দেবি যথাসুখং। ( অধিবাস  )


ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। (বহুবার)

ওঁ মধ্যে সুধাব্ধিমণিমণ্ডপোরত্নবেদীসিংহাসনপরিগতাং। পরিপীতবর্ণাম্‌। পীতাম্বরাং কনকমাল্যশোভাং। দেবীং ভজামি ধৃতমুদ্‌গরবৈরিজিহ্বাম্‌।

ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে। দেবি দুর্গে মন্ত্রেণ সম্বদ্ধা ভব স্বাহা। (বহুবার)

( সকলের প্রণাম এবং পুষ্পক্ষেপ।  সন্ধ্যা টায় পূজা সমাপ্ত।)


[ প্রকাশকের মন্তব্য।

বোধন তিন প্রকার; ব্রহ্মার যে বোধন , তা অকাল বোধন। শক্র বা ইন্দ্রের যে বোধন, তার নামসম্বোধএবং আমাদের যে বোধন তার নামপ্রতিবোধ' ]


                                       সপ্তমী পূজা।


   ১০ আশ্বিন  ১৩৪৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪১, শনিবার,সকাল ৮টায় আরম্ভ।


ওঁ  কর্ত্তব্যেস্মিন্‌ বার্ষিক-শরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মণি পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু,পুণ্যাহং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহং, ওঁ পুণ্যাহং।


ওঁ  কর্ত্তব্যেস্মিন্‌ বার্ষিক-শরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মণি স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, স্বস্তি ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি, ওঁ স্বস্তি,


ওঁ  কর্ত্তব্যেস্মিন্‌ বার্ষিক-শরৎকালীনশ্রীভগবদ্দুর্গামহাপূজাকর্ম্মণি ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু, ঋদ্ধিং ভবন্তঃ অধিব্রুবন্তু। ওঁ ঋধ্যতাং, ওঁ ঋধ্যতাং, ওঁ ঋধ্যতাং।


ওঁ সূর্য্যঃ সোমো যমঃ কালঃ সন্ধ্যে ভূতানি অহঃ ক্ষপাঃ। পবনো দিক্‌পতির্ভূমিরাকাশং খচরামরাঃ। ব্রাহ্মং শাসনং আস্থায় কল্পধ্বং ইহ সন্নিধিং।।


ওঁ যে কে বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রা যে ধামানি দিব্যানি তস্থুঃ সর্ব্বে কল্পধ্বং ইহ সন্নিধিং। ওঁ যে কে মহিমানস্তে সর্ব্বে পশ্যন্তু পূজনং।

সর্ব্বং ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ ইহাগচ্ছ। 

যে দেবা যাশ্চ দেব্যশ্চ গন্ধর্ব্বাসুরপন্নগাঃ। সর্ব্বে সুমনসো ভূত্বা পূজাং পশ্যন্তু মৎ কৃতান্‌।।

দুর্গাং অদ্যং পূজয়ামি পরমা চৈতন্য রূপিণীম্‌। শক্তিরূপে মহাদেবি ত্বাং আহ্বায়ামি মঙ্গলে।।


ওঁ হ্রীং দুর্গা। বল দুর্গা। ওঁ বিল্ববৃক্ষে হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ হ্রীং বিল্ববৃক্ষে দুর্গায়ৈ নমঃ। 

ওঁ মেরুমন্দারকৈলাসহিমবৎশিখরেগিরৌ জাতঃ শ্রীফলবৃক্ষ ত্বং অম্বিকায়া সদা প্রিয়ঃ। শ্রীশৈলশিখরে জাতঃ  শ্রীফলঃ শ্রীনিকেতনঃ। নেতব্যোসিময়াগচ্ছ পূজ্যো দুর্গা স্বরূপতঃ। বলআমার মেরুমন্দার শৈলে প্রতিষ্ঠিত দুর্গে। ওগো শ্রীদাতা, ফলদাতা, সর্ব্বশ্রীপ্রতিষ্ঠিতা, আমার এই মেরুমন্দার হতে পূজামণ্ডপে আবির্ভূতা হও। ভগবতি, জগৎচৈতন্যরূপিণি। ভগবতী তুমি আমার বিল্বশাখা থেকে পূজামণ্ডপে আবির্ভূতা হও। ওঁ বিল্ববৃক্ষ মহাভাগঃ সদা ত্বং শঙ্করপ্রিয়ঃ, গৃহীত্বা তব শাখাঞ্চ দেবীপূজা করম্যোহং। হে আমার বিল্বতরু!  তোমার এই শাখাটি আমি নেব, যেটি সর্ব্বাগ্রে স্থিত, যেটি কন্টকহীন, শুভ্র, এবং অম্বিকার সদাপ্রিয়, সেই শাখাটি নিয়ে আমি আমার দুর্গা পূজা করব। ওঁ গৃহীত্বা তব শাখাঞ্চ দেবীপূজাং করম্যোহম্‌। শাখাটি দেখা যাচ্ছে? যে নিজবোধ প্রবাহ--- যার ভিতর দিয়ে যাতায়াত করে আমায় বিশ্বের সাথে যুক্ত করে রেখেছে, শাখাটি অবলম্বন করে আমি পূজা করছি। 

ওঁ শাখাচ্ছেদোদ্ভবং দুঃখং কার্য্যং ত্বয়া প্রভো দেবৈর্গৃহীত্বা তে শাখাং পূজ্যা দুর্গেতি বিশ্রুতি। ওঁ পুত্রায়ুর্ধনবৃদ্ধ্যর্থং নেষ্যামি চণ্ডীকাপ্রিয়াম্‌ বিল্বশাখাং সমাশ্রিত্য লক্ষ্মী রাজ্যং প্রযচ্ছ মে। আগচ্ছ চণ্ডিকে দেবি সর্ব্বকলাণহেতবে। তোমার আগমন আমাদের সমৃদ্ধ করার জন্য। তোমার আগমনে সুর অসুর, মঙ্গল অমঙ্গল, সকলে সমান ভাবে সেবিত হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গল অমঙ্গল সমানভাবে দেখি সে সামর্থ্য আমার নেই। তাই বলছি——তোমা থেকে আমার জন্য কল্যাণ আবির্ভূত হোক। ওঁ আগচ্ছ চণ্ডিকে দেবি সর্ব্বকল্যাণহেতবে। পূজাং গৃহাণ দেবি নমস্তে শঙ্করপ্রিয়ে। ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। দেবি দেবি দেবি চণ্ডিকে। বাজা।


 অধিবাস। 

ওঁ অনয়া মহ্যা অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু। তোমরা যা বলছ, তাই হচ্ছে,এই জ্ঞানটিকে অনুধাবন করে,মন্ত্র উচ্চারণ করবে। সবাই শুনতে পেয়েছ? ওঁ অনেন গন্ধেন অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু।ওঁ অনয়া শিলয়া অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু। ওঁ অনেন ধান্যেন অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু। ওঁ অনয়া দূর্ব্বয়া অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু। যাকে নিয়ে আসছ, তাকে দেখতে দেখতে বল। ওঁ অনেন পুস্পেন অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু। [এই রূপে] ফলেন, দধ্না, ঘৃতেন, স্বস্তিকেন, সিন্দূরেণ, শঙ্খেন, কজ্জলেন, রোচনয়া, সিদ্ধার্থেন,কাঞ্চনেন, রৌপ্যেন, তাম্রেণ, চামরেণ, দর্পণেন, দীপেন, প্রশস্তপাত্রেণ অস্যাঃ শ্রীভগবদ্দুর্গায়াঃ শুভ অধিবাসনমস্তু।

                                                       

 সঙ্কল্প।

ওঁ তৎ সৎ অদ্য আশ্বিনে মাসি শুক্লে পক্ষে কন্যা রাশিস্থে ভাস্করে সপ্তম্যাং তিথৌ (যে যার নাম গোত্র বল) সপ্তমীং আরভ্য মহানবমীং যাবৎ শ্রীভগবদ্দুর্গাপ্রীতিকামঃ শ্রীভগবদ্দুর্গা মহাপূজাং যথাশক্তি যথাসম্ভবং অহং করিষ্যে। তিন দিন ধরে মায়ের পূজার সঙ্কল্প করে, তোমরা তিন দিন মাকে আবাহন করবে, সেবা করবে, পূজা করবে।। এই তিন দিন তোমাদের কণ্ঠে ঋক্‌ যজুঃ সাম ধ্বনিত করবে। এই তিন দিন অথর্ব্ব আঙ্গিরসে তোমাদের অঙ্গ পরিপ্লুত হবে। তিন দিন তোমাদের চেতনা থেকে অসুর দলিত হবে। তিন দিন তোমাদের গৃহ আলোকিত করে ব্রহ্মরূপিণী, সর্ব্বভয়বিনাশিনী, মৃত্যুভয়বারিণী দুর্গা জাগ্রত থকবে। তিন দিন দুর্গা স্বয়ং পৌরহিত্য করবে। তিন দিন স্বয়ংপ্রকাশিনী আপনি আপনার যজ্ঞ করে, পৌরহিত্য করে তোমাদের জয় দান করবে। এই তিন দিন তোমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন। এখন আমি মায়ের মহাস্নানে ব্যাপৃত হব। যেখানে মায়ের যে মহিমময়ী মূর্ত্তি ফুটেছে, দিক্‌ সকলে ব্যাপৃত হয়ে রয়েছে, তোমার চেতনায় এতদিন তারা ছিন্নভিন্ন ছিল। আজ তাদের সম্বর্দ্ধনা করে সেই মায়ে নিয়ে এস, যে মা এই  ভূতি মূর্ত্তিতে তোমাদের সামনে সংস্থিতা। 


 স্নান।

ওঁ কদলীতরুসংস্থাসি বিষ্ণোর্বক্ষঃস্থলাশ্রয়ে। নমস্তে নবপত্রি ত্বং নমস্তে চণ্ডনায়িকে।। হ্রীং শ্রীং নবপত্রিকারূপিণ্যৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। জ্ঞানচক্ষু দিয়ে দর্শনটি চালাতে হবে,নতুবা পূজা ব্যর্থ হবে। এখানে কে দাঁড়িয়েছে? ভগবতী। সে কোথা দিয়ে বেরিয়েছে? প্রথমে আত্মবোধময় হয়ে সে চন্দ্রমা মূর্ত্তি ধরেছে; সেইখান দিয়ে এসে আদিত্য মূর্ত্তি ধরেছে; সেখান দিয়ে এসে ওষধি হয়েছে। আত্মবোধ প্রাণময় চন্দ্রমা মূর্ত্তি হয়ে, সেখান থেকে বর্ষিত হয়ে, এই মূর্ত্ত কদলী মূর্ত্তি ধরেছে, এইটি দর্শন করো। তোমায় প্রতি পদে পদে জ্ঞানের চক্ষে চলতে হবে,ভাবের চক্ষে নয়। 


ওঁ কচ্চি ত্বং স্থাবরস্থাসি সদা সিদ্ধি প্রদায়িনী। দুর্গারূপেণ সর্ব্বত্র স্নানেন বিজয়ং কুরু।। হ্রীং শ্রীং কচ্চ্যধিষ্ঠাত্রৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা।। এই যে ব্রহ্মাণ্ড, যা তোদের চোখে প্রতিফলিত হচ্ছে, তোদেরই জ্ঞানমূর্ত্তি, অর্থাৎ তোকে যদি তুই ভুলতে পারিস তো জ্ঞানস্বরূপিণী মূর্ত্তি অথবা তোর আত্মবোধ নিজেই এসেছেন।

হরিদ্রেহরিদ্রা, দেখতে পাচ্ছিস? তোর বুকে হরিদ্রা এসেছে? ওঁ হরিদ্রে হর রূপাসি শঙ্করস্য সদা প্রিয়া। রুদ্র রূপাসি দেবি ত্বং সর্ব্ব শান্তিং প্রযচ্ছ মে। হ্রীং শ্রীং হরিদ্রারূপিণ্যৈ চণ্ডিকায়ৈ নমঃ। 

ওঁ জয়ন্তি জয়রূপাসি জগতাং জয়কারিণি। স্নাপয়ামিহ দেবি ত্বাং জয়ং দেহি গৃহে মম। হ্রীং শ্রীং জয়ন্তীরূপিণ্যৈ চণ্ডিকায়ৈ স্বাহা। তুমি হৃদয়, তুমি হৃদয়রূপিণী হ্রীং মূর্ত্তি। তুমি হৃদয়, তুমি দুর্গা, তুমি দুর্গারই মূর্ত্তি। তোমায় জয়ের জন্য উপাসনা করি। হ্রীং শ্রীং জয়ন্তীরূপিণ্যৈ চণ্ডিকায়ৈ নমঃ।

ওঁ শ্রীফল শ্রীনিকেতোসি সদা বিজয়বর্দ্ধন। দেহি নো হিতকামাংশ্চ প্রসন্নো ভব সর্ব্বদা।  হ্রীং শ্রীং বিল্বরূপায়ৈ চণ্ডিকায়ৈ নমঃ।

ওঁ দাড়িমি অঘ বিনাশায় ক্ষুন্নাশায় সদা ভুবি। নির্ম্মিতা ফলকামায় প্রসীদ ত্বং হরপ্রিয়ে। হ্রীং শ্রীং দাড়িমীরূপিণ্যৈ  নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।।

ওঁ স্থিরা ভব সদা দুর্গে অশোকে শোকহারিণি। ময়া ত্বং পূজিতা দুর্গে স্থিরা ভব হরপ্রিয়ে। হ্রীং শ্রীং অশোকরূপিণ্যৈ  নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।।

ওঁ মানমান্যেষু বৃক্ষেষু মাননীয়ঃ সুরাসুরৈঃ।স্নাপয়ামি মহাদেবীং মানং দেহি নমোস্তু তে। হ্রীং শ্রীং মানরূপিণ্যৈ নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।।

ওঁ লক্ষ্মি ত্বং ধান্যরূপাসি প্রাণিণাং প্রাণদায়িণি। স্থিরা অত্যন্তং হি নো ভুত্বা গৃহে কামপ্রদা ভব।। দুর্গে লক্ষ্মীরূপিণি, গৃহে কামপ্রদা ভব। হ্রীং শ্রীং ধান্যরূপিণ্যৈ নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।।


এই যে নবরূপে মাকে দেখলুম----- শোকহারিণী, জয়দায়িনী, মানপ্রদায়িনী, শান্তিদায়িনী, প্রাণরূপিণী——এই সব লে মাটি বা মহীজাত মহিমা অবলম্বনে মাকে আমার অন্তরে আবাহন করলুম। এই রূপে নব-মহিমময়ী মা পূজিতা হবার জন্য এই মণ্ডপে প্রতিষ্ঠা হবেন। এই নব-বিভূতিময়ী মাকে সম্বর্ধনার জন্য বিশ্বদেবতাদের যত দেবতা এবং অসুর ইত্যাদি আত্মবোধময়ী দুর্গায় সংলগ্ন ছিল, সেই সকলকে এনে এই ভূতিমূর্ত্তিতে মাকে স্নাপিত করছি, স্নায়ুযুক্ত করছি, প্রবাহিত করছি। এই মৃৎ মূর্ত্তিতে অমৃতকে আবাহিত করছি, চারি দিক্‌ থেকে নিয়ে আসছি। দিব্য চোখে দেখছি, যাদের অচেতন অন্ধকার বলে দেখতুম তারা সব দেবতা। তাদের আনতে হয় কেমন করে? যা কিছু ঋক্‌, সে সব দেবতা। প্রতি ক্ষেত্রে অসুর হয়েছে আধার, দেবতা হয়েছে আধেয়। এই রূপে প্রতি সুরাসুরে আমার দুর্গা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দুর্গা। সেই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দুর্গাকে আমার আত্মবোধে নিয়ে এসে এইখানে প্রতিষ্ঠা করছি।

ওঁ আত্রেয়ীএকটি নদী আছে? প্রাণ দিয়ে দেখতে পেয়েছ? সুতরাং ঋক্‌? 

ওঁ আত্রেয়ী ভারতী গঙ্গা যমুনা সরস্বতী। সরযূর্গণ্ডকী পুণ্যা শ্বেতগঙ্গা কৌশিকী।। ভোগবতী পাতালে স্বর্গে মন্দাকিনী তথা। সর্ব্বাঃ সুমনসঃ ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তাঃ।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। 

ওঁ দুর্গা চণ্ডেশ্বরী চণ্ডী বারাহী কার্ত্তিকী তথা। হরসিদ্ধা তথা কালী ইন্দ্রাণী বৈষ্ণবী তথা।। ভদ্রকালী বিশালাক্ষী ভৈরবী সর্ব্বরূপিণী। এতাশ্চ সর্ব্বযোগিন্যো ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তাঃ।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।

 ওঁ সুরাস্ত্বামভিষিঞ্চতু ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ। বাসুদেব জগন্নাথঃ তথা সঙ্কর্ষণঃ প্রভুঃ। প্রদ্যুনম্যশ্চানিরুদ্ধশ্চ ভবন্তু বিজয়ায় তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ আখণ্ডলোঅগ্নিঃ ভগবান্‌ যমো বৈ নৈঋতিস্ত্বথা। বরুণঃ পবনশ্চৈব ধন্যাধ্যক্ষস্ত্বথা শিবঃ। ব্রহ্মণা সহিতঃ 

 শেষো দিকপালাঃ পান্তু তে সদাঃ।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ কীর্ত্তিঃ লক্ষ্মীঃ ধৃতিঃ মেধাঃ পুষ্টিঃ শ্রদ্ধা ক্ষমা মতিঃ। বুদ্ধিঃ লজ্জা বপুঃ শান্তিঃ তুষ্টিঃ কান্তিশ্চ মাতরঃ।এতাস্ত্বাং অভিষিঞ্চন্তু ধর্ম্মপালাঃ সুসংযতাঃ।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। নবচণ্ডিকা, নবার্ণরূপিণী চণ্ডিকা, নবীনা, নব বৃক্ষের আকারে সংগ্রহ করে মাকে পূজা করলি। এখন মন্ত্রের দ্বারা মাকে আবদ্ধ করছি। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে। এই নবার্ণময়ী চণ্ডিকাকে নয়টি গাছের আবরণে লুকিয়ে রেখে পূজা করাচ্ছি।ওকে ঐখান থেকে এইখানে প্রতিমায় নিয়ে আয়। কয়টা গাছ মাত্র ভাবিস না, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে তোরা অভিস্নাত করাচ্ছিস। নবার্ণময়ী চণ্ডিকাকে নয়টা মন্ত্রের ভিতর পুরেছি। লক্ষ্মী, কীর্ত্তি, জগন্নাথ, ব্রহ্মা, ইত্যাদি যে যেখানে আছে,তাদের ডেকে এনে, তাদের দ্বারা মাকে নাইয়ে দে। কোন মাকে? নবার্ণময়ী মাকে। আদিত্যঃ চন্দ্রমাআকৃতির দরকার নেই, প্রকৃতিরও দরকার নেই। যদি শরীর দেখলি তো আব্রহ্মস্তম্ভ পর্যন্ত রয়েছে দেখবি। যদি শরীর না দেখিস তো বাক্‌। তাতে আব্রহ্মস্তম্ভ পর্যন্ত সব রয়েছে। আবার সেই সব লুকিয়ে যায় একটি বাকে। সেই দেবতা, যে কলাগাছও বটে, বেলের ডালও বটে; কিন্তু আবার কলাগাছও নয়, বেলের ডালও নয়। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে।তোরা আর কারও ধার ধারিস না। মা নিজে পুরোহিত হয়েছে, নিজে শিক্ষা দিয়েছে——" তোরা আমার নয়নের পুতলি,পুত্র; আমি যা, তোরাও তাই।" এই যে তোমার অপূর্ব্ব রহস্যময় বিদ্যা, তাই আমরা পেতে চাই। সেই জন্য তোমায় গুহ্যে, অন্তরে, নবপত্রিকায় দেখতে চাচ্ছি। মা, পূজা পূর্ণ করো। 


ওঁ আদিত্যঃ চন্দ্রমা ভৌমো বুধজীবসিতার্কজাঃ। গ্রহাস্ত্বাং অভিষিঞ্চতু রাহুঃ কেতুশ্চ তর্পিতাঃ। ঋষয়ো মুনয়ো গাবো দেব মাতর এব চ। দেবপত্ন্যো ধ্রুবা নাগা দৈত্যাশ্চ অপ্সরসাঙ্গনা। অস্ত্রাণি সর্ব্বশস্ত্রাণি রাজানো বাহনানি চ। ঔষধানি রত্নানি কালস্য অবয়াবশ্চ যে।। ওঁ সরিতঃ সাগরাঃ শৈলাঃ তীর্থানি জলদা নদাঃ। দেবদানবগন্ধর্ব্বাঃযত কিছু শব্দ জানিস, যত কিছু আছে বলে জানিসযক্ষরাক্ষসপন্নগাঃ। এতে ত্বামাভিষিঞ্চতু ধর্ম্মকামার্থ সিদ্ধয়ে।  হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ সিন্ধুভৈরবশোণাদ্যা যে হ্রদা ভুবি সংস্থিতাঃ। সর্ব্বে  সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ তক্ষকাদ্যাশ্চ যে নাগাঃ পাতালতলবাসিনঃ। সর্ব্বে  সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ গ্রহা ঋক্ষাস্তথা নাগাঃ করণাস্তিথয়ঃ স্মৃতাঃ। ঋষয়ো দেবপুত্রাশ্চ যে চান্যে দেবযোনয়ঃ। সর্ব্বে  সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ লবণেক্ষুসুরাসর্পির্দধিদুগ্ধজলান্তকা। সমুদ্রাঃ সপ্ত চৈবান্যে  ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। অনন্তাদিমহানাগা দানবা রাক্ষকাশ্চ যে। পিশাচা গুহ্যকা সিদ্ধাঃ কুষ্মাণ্ডাস্তরবঃ খগাঃ। জলেচরা ভূমিশয়া বায়ব্যাশ্চৈব জন্তবঃ। সর্ব্বে সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা।

যেখানে, যে কেউ, ‘আছ' বলে, ‘রয়েছ' বলে আপনাকে খুঁজে পাচ্ছ, দুর্গার অন্তরবাসিনী সেই সকলে চেয়ে দেখ, তোমরা নবার্ণে জাত, স্বয়ংপ্রকাশই অধ্যাত্ম, অধিভূত, অধিদৈব, তোমার এই তিনটি চেহারা নিয়ে ফুটে আছেন। আত্মচক্ষুর দিকে চোখ দাও। তোমার চেহারা ধরে, আমার চেহারা ধরে, বিশ্বের চেহারা ধরে, অগ্নি, বাতাস, জল, চন্দ্র, নক্ষত্রের চেহারা ধরে, নবার্ণ-মন্ত্ররূপিণী মা ফুটে রয়েছে। মা এই মাটির মূর্ত্তি ধরে ফুটে রয়েছে। তোদের চোখের উপর দিয়ে কত কি বয়ে গেছে। তোরা শুধু নিজেদের দেখে, ‘আমি করলুম, আমি করলুম’, বলে কাণার চেয়েও কাণা হচ্ছিস। ওরে মূর্খ! ওর ভিতর একটাও আমি করিনি। একটা চাঞ্চল্য বা চলন-চালনও আমার নয়। তোদের চোখের সামনে এই যে নিয়ন্ত্রণী রয়েছে, এই মাটি আনলে, চেহারা গড়লে, সব করলে। তোদের চৌদ্দপুরুষের সম্পত্তি এই মাটি রয়েছে,—চার টাকার মিস্ত্রি তাকে গড়বে! ওরে মূর্খ, ওর ভিতর একটা জিনিষও আর কেউ গড়ে নি, সব নিয়ন্ত্রণী গড়েছে। নিজের ভিতর এই চক্ষু খুলে, এই বিজ্ঞানের মহাশক্তিতে পা বাড়িয়ে বাড়িয়ে চলতে হবে। - চলেছে ঋক্‌ থেকে যজুতে, যজুঃ থেকে সামে, সাম থেকে অথর্ব্বে; তাতে তৈরি হয়েছে এই মা, তুই, আমি। মা সাক্ষাৎ মন্ত্রময়ী, বেদময়ী। মন্ত্রের ভিতর যে বেদময়ীকে দেখেনি, যার চক্ষু এতে প্রবিষ্ট হয় নি, তার সাধনা ব্যর্থ। তোর ভাল মন্দ, মুক্তি ভুক্তি তৈরি হচ্ছে বেদ মন্ত্রেএকটা কথায়। তুই একটা কথা বললি,-- ‘ভাত', থেকেই তোর অচেতন অন্ধকারময় অসুরক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, তুই অসুরত্ব পাবি বলে। আবার ওরই ভিতর মাতা, পিতা, ভ্রাতা, যশ, কীর্ত্তি বলে যেমন চোখ বাড়ালি, যার ভিতর বেদন ঢুকিয়েছিসঅমনি তাকে তৈরি করে ফেললি, পাবি দুদিন বাদে। তার উপর গুরুকৃপায় যদি ওকে মন্ত্র বলে ব্যবহার করতে পারিস, তো তৎক্ষণাৎ পাবি। এই নবার্ণমূর্ত্তি থেকে মাকে এবার ভূতিমূর্ত্তি আনছি। তোরা গুরুর অনুসরণ কর। নব দুর্গা কে? মুহূর্ত্তে মুহূর্ত্তে যে নব নব হয়ে ফোটে। যা চাইলি, তাই হল, চোখ যদি না ফোটে তো কিছু হবে? ঢিল ফেলার মত করে কেউ তোকে পেড়ে ফেলেনি, তুই রাবণের মত হা হা করে, শব্দ করে করে বেরিয়েছিস। ভগবান্‌ একজন আছে তো আছে, আমার সঙ্গে তার কি সম্পর্ক? যদি হয়, তো তোমার মাথায় বোমা পড়বে না তো কার মাথায় বোমা পড়বে? তোদের ভগবান্‌ বলা না বলা সমান। ওঁ দুর্গা চণ্ডেশ্বরী চণ্ডী বারাহী কার্ত্তিকী তথা। হরসিদ্ধা তথা কালী ইন্দ্রাণী বৈষ্ণবী তথা।। ভদ্রকালী বিশালাক্ষী ভৈরবী সর্ব্বরূপিণী। এতাঃ সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে।। হ্রীং শ্রীং নবদুর্গায়ৈ স্বাহা। মা চণ্ডিকে ! মা চণ্ডিকে ! মা চণ্ডিকে ! ইহাগচ্ছ, ইহাগচ্ছ (প্রতিমার অঙ্গে হস্তার্পণ) স্নান করাচ্ছে বলে যাদের স্মরণ করলি, একখানা হাত তাদের উপর দে, আর একখানা হাত বিশ্বম্ভরমূর্ত্তিতে দে। ওঁ চণ্ডিকে চল চল, তিষ্ঠ তিষ্ঠ। ওঁ চণ্ডিকে চল চল, চালয় চালয়,পূজালয়ং প্রবিশ, তিষ্ঠ যজ্ঞেশ্বরী।  চণ্ডিকে চল চল, চালয় চালয়,পূজালয়ং প্রবিশ, তিষ্ঠ তিষ্ঠ যজ্ঞেশি যাবৎ পূজাং করোম্যহং। ওঁ আগচ্ছ মদ্‌গৃহে দেবি অষ্টাভিঃ শক্তিভিঃ সহ। পূজান্‌ গৃহাণ সুমুখি নমস্তে শঙ্করপ্রিয়ে।। ত্বং পরা পরমা শক্তিঃ ত্বমেব হরবল্লভা। ত্রৈলোক্যোদ্ধার হেতুস্ত্বং অবতীর্ণা যুগেযুগে। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। মা !  মা বল্‌। মা !  আবার বল্‌ মা। মা ! 

এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গনেশাদি পঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সূর্য্যাদিনবগ্রহেভ্য নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদিদশদিক্‌পালেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে নমো নারায়ণায়। এতে গন্ধপুষ্পে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং শ্রীং ক্রীং মন্ত্ররূপায়ৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং শ্রীং ক্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্ব্বেভ্যো দেবেভ্যোঃ  নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্ব্বাভ্যো দেবীভ্যোঃ নমঃ।

ওঁ জটাজূট সমাযুক্তাং অর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাং। লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌।অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচনাং। নবযৌবনসম্পনাং সর্ব্বাভরণভূষিতাং। সুচারুদশনাং তদ্বৎ পীনোন্নত পয়োধরাম্‌। ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাং মহিষাসুরমর্দিনীং‌। মৃণালায়তসংস্পর্শ দশবাহুসমন্বিতাম্‌। মহাসিংহাসনারূঢ়াং অঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি। দুর্গা, চণ্ডিকা, উগ্রা, রুদ্রাণী, সদাসিদ্ধিদা, তিষ্ঠ তিষ্ঠ মহাভাগে, কারয় মে যজ্ঞং শুভে। দেবী, নিয়ন্ত্রিণি,বসূনাং সংগমনি, যে যা চায়, ধূলার মতো ছড়িয়ে দাও মা। আমরা যা যা করি, সে সব তোমাতেই অর্পিত হয়। জেনে বা না জেনে যা কিছু করি, সে সব তোমাতেই অর্পিত হচ্ছে। এই যে তোমার স্তুতি রচনা হচ্ছে, আমার দ্বারা কৃত নয়। তোমারি স্তুতি তুমি করছ; তুমি যে আত্মস্তুতিতে ভরা। আহা, কত স্তুতি তুমি পাঠ করছ, আমাদেরও করাচ্ছ !  সোমোপায়িনি দুর্গে, প্রসীদ।তুমি দিয়ে খেতে ভালবাস; তাই অনুভূতিরূপে আমাদের সব দিচ্ছ। ওরে, তোদের প্রজ্ঞা ক্ষেত্রে যে সব কথা জড়ো করা আছে, সেইখান থেকে কথা বেরোচ্ছে? আর তাকে কে ঠেলছে, কে উচ্চারণ করছে? যে ঠেলছে, সে যে তাই, এঁর অনুভূতিরূপে, সোমরূপে তোরা তাকে ভোগ করছিস। তবেই সে আপনি আপনার পূজা করছে, স্তুতি করছে; মাঝখান থেকে তোদের খালি সোমপান হচ্ছে দেবি ! চণ্ডিকে ! দুর্গে ! তুমি আপনি আপনাকে স্তব করছ, মূর্ত্ত করছ, ফুটিয়ে চলছ। আপনি আপনাকে স্তুতিপরায়ণ করছ, মূর্ত্ত করছ, ভোগ করছ। আপনি আপনাকে মূর্ত্ত করে তুলছ, আপনি আপনাকে আজ দুর্গা মূর্ত্তিতে ফুটিয়েছ। দেবি দুর্গে, যে মাটি পড়েছিল, আমি মাটি হয়ে তাকে উত্তোলিত করলাম, সে ঋক্‌ হল। যে জল পড়েছিল, আমি জল হয়ে তাকে উত্তোলিত করলাম, সে জল তোমার শরীরের রস হল। যে অগ্নি পড়েছিল, আমি অগ্নি হয়ে তাকে তুলে ধরলাম, সে তোমার শরীরে তেজ হল। যে বায়ু পড়েছিল, আমি বায়ু হয়ে তাকে উদ্ধার করলাম, সে তোমার শরীরে প্রাণ হল। যে আকাশ পড়েছিল, আমি আকাশ হয়ে তাকে তোমার অন্তরাকাশ করে দিলাম। যে কয়দিন আমি তোমার পূজা করি, সেই কয়দিন অন্তরাকাশ বাহ্যাকাশ এককরে আমার এই যজ্ঞে তুমি আবির্ভূত থাক। মাটি, জল, ইত্যদিকে আমি যখন ঋক্‌ করে তুললুম, অমনি তারা তোমার শরীর, রস ইত্যাদি  হয়ে গেল। দেবি, আমি তোমায় প্রাণময়, ইন্দ্রিয়ময় করে তুললুম। আমার তোলা এই মাটি জলঋক্‌ যজুঃ হয়ে তোমাতে গিয়ে সংযুক্ত হল।  এই মাটি, জল, আকাশকে, তোমার গাময় জড়িয়ে তুমি কি সুখ ভোগ করছ ! তারা তোমায় আলিঙ্গন করেছে, তুমি তাদের আলিঙ্গন করেছ। আমায়ও তুমি সুখময় বপু কর, এবং যতদিন তোমার পূজা করব ততদিন তুমি থাক। চন্দ্র, সূর্য, অগ্নি, চারিদিক্‌ থেকে যত সব দেবতাদের আকর্ষণ করে আপনি আপনার অঙ্গে লেপে নিচ্ছ। দেবী, তুমি সর্ব্বদেবময়ী, সর্ব্ববেদময়ী হয়ে অপূর্ব্ব জগৎকেন্দ্র হয়েছ, যেমন কেন্দ্র হয়ে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অনন্ত অনন্ত প্রকাশকে আপনার কনিষ্ঠাঙ্গুলি দিয়ে তাড়না করছ। সেই কেন্দ্র আমি দেখতে পাচ্ছি, সে হল এই প্রতিমামূর্ত্তি।অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাংতোমার কণ্ঠে ঘোষিত এই বাণী সকলের কণ্ঠে ঘোষিত হোক।সকলে বলুক, ‘ অহং রাষ্ট্রী সংগমনী বসূনাং আমার এখানে আকাশ হয়ে গেছে অন্তরাকাশ, বায়ু হয়ে গেছে প্রাণ। দেবি ! আমি আমার প্রাণ দিয়ে তোমার মহাপ্রাণে ঢুকছি। দেবি ! তুমি ইন্দ্রিয়ময়ী হও, প্রাণময়ী হও।আমি তোমায় আদিত্যে, অন্তরীক্ষে, বসুতে দর্শন করছি। আমি এই যজ্ঞবেদীতে, আমাতে, সর্ব্বদেবতাতে, তোমাকেই দেখছি, আর কাউকে নয়। দেবি, তুমি আমার যজ্ঞে সর্ব্বদেবতাময় হয়ে প্রাণময় হও, ইন্দ্রিয়ময় হও। যজ্ঞময়ী ! অব্জা গোজা, ঋতজা, অদ্রিজা হও। দেবি, জননী! আমি তোমায় দুর্গা বলে আবাহন করি, তুমি আমাদের সকলকে পূর্ণ কর। ওঁ আং হ্রীং ক্রৌং যং রং লং বং শং ষং সং হৌং হংসঃ [ ইত্যাদি] ওঁ হংসঃ শুচিসৎ বসুরন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ অতিথির্দুরণসৎ নৃসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্জা গোজা অদিজা ঋতং বৃহৎ। শাঁখ বাজা।

(গুরু প্রতিমার বুকে হাত রেখে, সারা শরীরে হাত বুলিয়ে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করলেন। পরে সকলের গুরু সহ প্রণাম। ১১টায় প্রথম পর্ব্ব সমাপ্ত।)


                               ১১।।০ দ্বিতীয় পর্ব্ব আরম্ভ। 

ওঁ দুর্গা, দুর্গা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ আজ্ঞাপয় মহাদেবি মহাপূজাং করোম্যহং। দুর্গে, সৌম্যে, অতিসৌম্যে, পরমেশ্বরি, স্বাহা। দুর্গে, ওঁ প্রাণৈস্তে প্রাণান্‌ সন্দধামি স্বাহা। (উগ্রমূর্ত্তিতে মণ্ডলীর দিকে চাহিয়া) হাঁটু গেড়ে বস। ওঁ দুর্গে, প্রাণৈস্তে প্রাণান্‌ সন্দধামি স্বাহা। যে প্রাণ এসে মাটি, জল, আকাশাদিরূপে মূর্ত্তি ধারণ করবে, যে প্রাণ ঊর্দ্ধগত সত্যলোকরূপে বিধৃতি শক্তি হয়ে প্রকাশ হয়ে রয়েছে, সেই প্রাণ অনুতিষ্ঠতিএই খানে ছোট্ট হয়ে, আমার এই ঠাকুরটি হয়ে ফুটে রয়েছে। ওঁ প্রাণৈস্তে মৎপ্রাণান্‌ সন্দধামি স্বাহা। (বহুবার।) দেবি, প্রসীদ, প্রসীদ, প্রসীদ। তব চক্ষুষি চক্ষুঃ সন্দধামি স্বাহা। প্রাণৈস্তে প্রাণান্‌ সন্দধামি। শ্রোত্রে শ্রোত্রং সন্দধামি। মনসি মনঃ সন্দধামি। বাচি বাচং সন্দধামি। হৃদয়ে হৃদয়ং সংদধামি স্বাহা। ওঁ পাদ্যং গৃহাণ দেবেশি পাদপদ্মে ময়ার্পিতম্‌। প্রতিবোধ সঞ্চারে পূজিতা ভব, দুর্গে জাতবেদা নমস্তু তে স্বাহা। প্রতি বাকে বাকে চল দেবি, প্রতি বাকে বাকে তোমার পাদপদ্ম আমার দ্বারা অর্চিত হোক। দুর্গে পা ! দে ফুল, স্বাহা। পা ! দে ফুল। ( হাতের ফুল দেখিয়ে।) এই সমস্তই পা। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।এক পায়ে ঠিক থাক, এক পায়ে ভূতিতে ভূতিতে চল। দুর্গে পাদ্যং গৃহাণ ত্বং মণ্ডলেস্মিন্‌ সুরার্চ্চিতে।পাদ্যং শিরসি মে গৃহ্ন পাদ্যং গৃহ্ন মে হৃদি।। পাদ্যং গৃহ্ন পাদপদ্মে পাদ্যং গৃহাণ পাণিষু। পাদ্যং গৃহ্ন মুখে চৈব পাদ্যং গৃহ্ন সর্ব্বতঃ।। পাদ্যং গৃহ্ন সূর্য্যে তথৈব সোমমণ্ডলে। পাদ্যং গৃহ্ন পৃথিব্যাং পাদ্যং গৃহ্ন মমান্তরে।। পাদ্যং গৃহ্ন মহাকাশে পাদ্যং গৃহ্ন চিদাম্বরে। পাদ্যং গৃহ্ন গুরৌ নিত্যং তথা শিষ্যেষু সর্ব্বদা।। গৃহাণ পাদ্যং দেবি সপ্তম্যাং পূজয়াম্যহং। আবির্ভূত্বা মণ্ডলেস্মিন্‌ প্রসীদ পরমেশ্বরি।।এতৎ পাদ্যং হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। জ্যাযুক্ত ধনুকের জ্যার মত দৃঢ় ঋজুসম্বন্ধ হয়ে থাক, তবে মায়ের পূজা করতে পারবি।অনর্ঘ্যে গৃহ্ন অর্ঘ্যং ত্বং বিশ্বার্ঘ্যপরিপালিতে।বিশ্বনিয়ন্ত্রণি দেবি যজ্ঞে নিয়ন্ত্রণী ভব।।ইদং অর্ঘ্যং হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। গৃহাণাচমনীয়ং ত্বং জয়ং মে দেহি সর্ব্বতঃ। জয়ং দেহি জয়ং দেহি জয়ন্তী জয়রূপিণী। ইদং আচমনীয়ং হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

দেবি তোমার অধরোষ্ঠ সৃক্কদ্বয়ে যে শব্দ রচনা, বিশ্ব রচনা, তা আমায় দেখতে দাও। তুমি জয়যুক্তা হও, অভয়যুক্তা হও দেবি। কে পূজা করছে? মা। কার পূজা করছে? নিজের। কি দিয়ে পূজা করছে? নিজেকে দিয়ে।ওঁ সুরাস্ত্বামভিষিঞ্চতু ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ। ব্যোমগঙ্গাম্বুপূর্ণেন আদ্যেন কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ মরুতস্ত্বাভিষিঞ্চতু ভক্তিমন্তঃ সুরেশ্বরীং। মেঘাম্বুপরিপূর্ণেন দ্বিতীয় কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ যজুঃ পবতি ঋক্‌বাহি বিন্দুবিন্দু বিভূষিতং। সংপৃক্তং দেবি সাম্না সোমাখ্যা সোমরূপিণী। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। স্নাপয়ামীহ দুর্গে ত্বাং তৃপ্তা ভব সুরালয়ে। মর্ত্তে ত্বাং স্নাপয়ামীহ তৃপ্তা ভব ত্রিপিষ্টপে। দ্যুভূক্ষেত্রং স্নাপয়ামি একত্বেন প্রপূরিতং। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।এই মর্ত্তক্ষেত্রে দাঁড়িয়েদুর্গায়ৈ স্বাহা ' লে তুমি নিজের মাথায় জল দাও, সেই জল ত্রিদিবক্ষেত্র ভাসিয়ে মায়ের পাদপদ্মে চলে যাক। মাথায় জল ঢাল। স্নাপয়ামীহ মর্ত্তে ত্বাং ত্রিদিবে সুতৃপ্তা ভব। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। এইখানে অণুরূপে যে দুর্গা তোর অন্তরে বাস করছেন, ইনিই বিস্তারিত তনুর দ্বারা ত্রিদিব স্পর্শ করে আছেন। যে আত্মা এই মন্ত্রের দ্বারা, ‘আত্মা' এই শব্দের পাঁপড়িতে যে দেবতা তোর অন্তরে চলছে, তাকে এইখানে, তোর এই শরীরে জল দে, সে জল চলে যাবে ত্রিদিবে। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। জল চলেছে? বসুলোক থেকে রুদ্রলোকে? রুদ্রলোক থেকে বরুণলোকে? বরুণলোক থেকে সোমলোকে? সোমলোক থেকে সাধ্যলোকে? সাধ্যলোক থেকে আদিত্যলোকে? এইখানেই চলেছে, এতদিন তা জানিনি। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। আমার এই জলস্রোত রাশি রাশি স্রোতের মত দিগ্‌দিগন্ত ভাসিয়ে চলেছে। যেখানে যে পতিত, আর্ত্ত আছে, তাদের ত্রাণ করতে , আমার এই জল, মায়ের এই স্নানের জল চলেছে। দেখ, জল মাকে আলিঙ্গণ করছে, মা জলকে আলিঙ্গণ করছে। দেখ, মা প্রাণময়ী হয়ে জলকে আলিঙ্গণ করছে। যে জলে বিষ্ণু তৈরি হয়, আমার এই সেই মন্ত্রপূত জলে মা আলিঙ্গিত হচ্ছে। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। এই জলেতে মায়ের জটাজূট ঋজু হয়ে গেল, সিক্ত হয়ে গেল। আমরা বেঁচে গেলাম। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ সারস্বতেন তোয়েন সমপূর্ণেন সুরোত্তমে। বিদ্যাধরাস্ত্বাভিষিঞ্চতু কলসেন তৃতীয়েন তু।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ শক্রাদ্যাস্ত্বাভিষিঞ্চতু লোকপালাঃ সমাগতাঃ। সাগরোদকপূর্ণেন চতুর্থকলসেন তু।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। মাকে তোরা স্নান করাতে পারছিস? ওঁ বারিণা পরিপূর্ণেন পদ্মরেণুসুগন্ধিনা পঞ্চমেনাভিষিঞ্চতু নাগাশ্চ কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। আমার অনুভূতি,আমার সোম, যুগযুগান্তর ধরে কত বিচিত্র রকমে আমাতে ফুটেছে তোমায় পান করাবার জন্য। আমার এই হৃদয়ের সোম সমুদ্রপাপ পুণ্য, দুঃখ জ্বালা, শান্তি অশান্তিময় সোম তুমি আজ পান কর, এরই দ্বারা তুমি পূজিত হও। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। কাম, ক্রোধ, লোভ, পাপ, দুষ্কৃতি, পুণ্য, মা বলে ডাকাদেবেশি, দেবি আমার, দুর্গা আমার, এই সব সোম তুমি পান কর। মাটি, পাতা, লতা, জল, এইসব আমার বুক ভরে রয়েছে। তুমি নির্ম্মলা, তোমার স্পর্শে এসব নির্ম্মলীকৃত হোক। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। হিমবৎহেমকূটাদ্যাস্ত্বাভিষিঞ্চতু পর্ব্বতাঃ। নির্ঝরোদকপূর্ণেন ষষ্ঠেন কলসেন তু।। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ সর্ব্বতীর্থাম্বুপূর্ণেন কলসেন সুরেশ্বরীম্‌। সপ্তমেনাভিষিঞ্চতু ঋষয়ঃ সপ্ত খেচরাঃ।। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। ক্ষুদ্র ঘটে করে ক্ষুদ্র এই জল তোমার জন্য এনেছি। তুমি এমন বিদ্যা শিখিয়ে দিয়েছ, যার বলে একটা ক্ষুদ্র অণু অনন্ত হয়ে যায়। এই বিদ্যা বলে আমি এই ক্ষুদ্র জলাণুকে অনন্ত অনন্ত করলাম। তুমি সুখে স্নান কর দেবি। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ বসবস্ত্বাভিষিঞ্চতু কলসেনাষ্টমেন তু। অষ্টমঙ্গলসংযুক্তে দুর্গে দেবি নমোস্তু তে। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। বল্‌ দুর্গা।(১২ ২০ মিনিটে দ্বিতীয় পর্ব্ব সমাপ্ত।)

                             ১২।।০ টায় তৃতীয় পর্ব্ব আরম্ভ।

পুষ্পং মাল্যং গৃহাণ ত্বং গন্ধং ধূপং তথৈব চ। দীপং নৈবেদ্যসম্ভারং দেবেশি গৃহ্ন অম্বিকে।। ওঁ হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। মা চিন্ময়ি ! অগ্নি থেকে সোমে সোম থেকে আদিত্যে, আদিত্য থেকে সোমে, সোম থেকে অগ্নিতে প্রত্যাবর্ত্তন করে। এইরূপে তোমার যাতায়াতের পথ আমাদের প্রত্যক্ষ হোক। দেবি কামদে ! যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। দেবি তোমার কাম আমাতে ফলযুক্ত হোক। যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি——যেখানে যে আকারে কামনা প্রকাশ পায়, তৎক্ষণাৎ সেই কামনা আমি  তদাকারে পরিপূর্ণ করি। দেবি, তোমার এই বাক্য আমাতে সফল হোক।  হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।হোমের অগ্নি জ্বাল। 

      

 হোম। 

ওঁ অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজং।  হোতারং রত্নধাতমম্‌।। ওঁ অগ্নে, ত্বং জাতবেদ ইহাবহ ইহাবহ সর্ব্বকর্ম্মাণি সাধয় সাধয় স্বাহা। অগ্নে, ত্বং দুর্গা নামাসি। ওঁ দুর্গা নাম্নে অগ্নয়ে জুহোমি স্বাহা (বহুবার) ওঁ দুর্গে, ত্বং অমনামাসি। অমাহিতে সর্ব্বং (বহুবার) ভাল করে ঘি নাও। ওঁ জ্যেষ্ঠায় স্বাহা শ্রেষ্ঠায় স্বাহা (বহুবার) ওঁ হ্রীং দুর্গে, ত্বং অমনামাসি। অমা হি তে সর্ব্বং ইদং। ওঁ জ্যেষ্ঠায় স্বাহা শ্রেষ্ঠায় স্বাহা। প্রতিষ্ঠায়ৈ স্বাহা। ওঁ দুর্গে, ত্বং অমনামাসি। অমাহিতে সর্ব্বমিদং। ওঁ জ্যেষ্ঠায় স্বাহা শ্রেষ্ঠায় স্বাহা। বশিষ্ঠায় স্বাহা। প্রতিষ্ঠায়ৈ স্বাহা। ওঁ দুর্গে, ত্বং অমনামাসি। অমাহিতে সর্ব্বং। আব্রহ্মস্তম্ভ পর্য্যন্ত যত কিছু আছে, এই দুর্গাতে সেই সব সমষ্টীভূত করে তার নাম হল অমা। আবার সেই অমা হল আমার মুখে একটি মন্ত্র। সুতরাং সেই মন্ত্রের ভিতর সমস্ত লুকান আছে। ওঁ জ্যেষ্ঠায় স্বাহা। শ্রেষ্ঠায় স্বাহা। বশিষ্ঠায় স্বাহা। প্রতিষ্ঠায় স্বাহা। আয়তনায় স্বাহা। এই অন্ন দুর্গাতে রয়েছে, এই অন্নদা দুর্গাতে রয়েছে, এই অগ্নি দুর্গাতে রয়েছে। ওঁ জ্যেষ্ঠায়ৈ শ্রেষ্ঠায়ৈ স্বাহা। প্রতিষ্ঠায়ৈ স্বাহা।সম্পদায়ৈ স্বাহা।আয়তনায়ৈ স্বাহা। ওঁ জ্যেষ্ঠং শ্রেষ্ঠং রাজ্যং প্রতিপত্তিং মাং গময়তু, অহমেব সর্ব্বং অশ্নামি স্বাহা। হ্রীং দুর্গে দুর্গে স্বাহা। ওঁ গার্হপত্যাগ্নয়ে স্বাহা। ওঁ দক্ষিণাগ্নয়ে স্বাহা। ওঁ আহবনীয় অগ্নয়ে স্বাহা। ওঁ বৈশ্বানরায় স্বাহা।


গুরুর হোম অন্ন নিবেদন। 

জয় ভগবতি !  জয় ভগবতি ! তৃপ্তা হও মা, তৃপ্তা হও। তৃপ্তা হও দ্যুলোকে, তৃপ্তা হও অন্তরীক্ষে, তৃপ্তা হও মর্ত্তে, তৃপ্তা হও অমৃতে, তৃপ্তা হও অন্নে, তৃপ্তা হও যজ্ঞে, তৃপ্তা হও পানীয়ে---হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। 

ওঁ ইয়ং পৃথিবী সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্যৈ পৃথিব্যৈ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্যাং‌ পৃথিব্যাং তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং শারীরস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ ইমা আপঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, আসামপাং সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মাস্বপ্‌সু‌ তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং রৈতসস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ অয়ম্‌ অগ্নি সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্যাগ্নে সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্মিনগ্নৌ‌ তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং বাঙ্‌ময়োস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ অয়ং বায়ুঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্য বায়োঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্মিন্‌ বায়ৌ তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং প্রাণস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ অয়মাকাশঃ সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্য আকাশস্য সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্মিন্আকাশে তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং হৃদ্যাকাশস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ অয়মাত্মা সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্য আত্মনঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্মিন্নাত্মনি তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মাত্মা তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ ইয়ং‌ দুর্গা সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্যা দুর্গায়াঃ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু, যশ্চায়মস্যাংদুর্গায়াং তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষো, যশ্চায়মধ্যাত্মং দৌর্গস্তেজোময়ঃ অমৃতময়ঃ পুরুষঃ, অয়মেব সঃ যোয়মাত্মা, ইদং অমৃতং, ইদং ব্রহ্ম, ইদং সর্ব্বম্‌। হ্রীং শ্রীং নব দুর্গায়ৈ স্বাহা। 

তুমি আমার দ্বারা সেবিত হচ্ছ, আমি তোমার দ্বারা সেবিত হচ্ছি। তোমাতে আমাতে এই গুহ্য সম্বন্ধ একান্ত সংবদ্ধ রাখ। মা বল, মা ! (দীর্ঘ রোল।) গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। পাদ্যার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। অর্ঘ্যার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা।আচমনীয়ার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। স্নানীয়ার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। গন্ধার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। ধূপদীপার্থং হবিঃ গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। হবির্নৈবেদ্যং গণেশাদি-আবরণদেবতাভ্যঃ স্বাহা। ওঁ ইদং সামান্যং সোপকরণং মাতৃসম্মিতং অন্নং ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। শাঁখ বাজা। 

(গুরু নিজে আরতি করলেন না, পণ্ডিত দিয়ে করালেন। ( বেলা ১।।০ টায় সপ্তমী পূজা সমাপ্ত।)


[ প্রকাশকের মন্তব্য।

১। ওঁ দুর্গে, ত্বং অমনামাসি। অমাহিতে সর্ব্বং——ছান্দোগ্য উপনিষদের মন্ত্র ৫।২।৬, এবং পূর্ব্ববর্ত্তী পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।  

২। ওঁ ইয়ং পৃথিবী সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু……..বৃহদারণ্যক উপনিষদের মন্ত্র ২।৫।১ এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।]



                                  অষ্টমী পূজা।

  ১১ আশ্বিন  ১৩৪৮, ২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪১, রবিবার,সকাল ৮।।০ আরম্ভ।


ওঁ (বহুবার) ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ (বহুবার) এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ গণেশাদিপঞ্চদেবতাভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ইন্দ্রাদিদশদিক্‌পালেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সূর্য্যাদিনবগ্রহেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নম নারায়ণঃ। নমো বিবস্বতে ব্রহ্মণ ভাস্বতে বিষ্ণু তেজসে। জগৎ সবিত্রে শুচয়ে সর্ব্বকর্ম্মদায়িনে। এতে গন্ধপুষ্পে নমঃ শ্রীসূর্য্যায়।এতে গন্ধপুষ্পে সূর্য্যমণ্ডলায় দ্বাদশকলাত্মনে নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে সোমায় নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে সোমমণ্ডলায় ষোড়শকলাত্মনে নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে অগ্নয়ে নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে বহ্নিমণ্ডলায় দশকলাত্মনে নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে বহ্নিসোমসূর্য্যেভ্যো নমঃ।এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে সর্ব্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে সর্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ।

ওঁ হংসঃ শুচিসৎ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ অতিথি দুরোণসৎ নৃসৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ। ওঁ হ্রীং শ্রীং হংসবত্যৈ স্বাহা। ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

হংসঃ শুচিসৎ——পরম চিন্ময়ী অনির্ব্বচনীয়া ভগবতী, যাঁর ধারণা তিনি নিজে ভিন্ন আর কেউ করতে পারে না, তিনি বিশ্বমূর্ত্তি ধারণ করে যে নিয়ন্ত্রিণী সেজেছেন, তাই সাজার যে প্রথম উপল্বদ্ধি, সেই নিয়ন্ত্রণ কে লক্ষ্য করে আমরা তাঁকে হংসবতী বলি। তাঁর সে নিয়ন্ত্রণ অতি রহস্যময়। তাতে আছে খণ্ডন, আছে প্রাণপ্রকাশ, আছে মূর্ত্ত হওয়া। সে রহস্যে আছে মূর্ত্ত কর্ত্তন, আছে প্রাণপ্রকাশ, প্রাণ বা সোমকে কাটতে কাটতে বেরিয়ে পড়া। একটা জীবকে কাটলে যেমন রুধির ধারা নির্গত হয়, তেমনি মা নিজেকে নিজে কাটলে যে স্রোত প্রবাহিত হয়, তার নাম প্রাণ। যার নাম প্রাণ, তার নাম প্রজ্ঞা।তাঁর নিয়ন্ত্রণে সকল বস্তু সীমা প্রাপ্ত হয় বলে অন্তর বহিঃ, এই দুইটি ধারা হয়। অন্তর বহিঃ, এই দুইটি ধারার উপর প্রাণ প্রবাহিত হয়। এই হল তাঁর নিয়ন্ত্রণ, মা এইরূপে প্রাণময় হয়ে মূর্ত্তি ধারণ করে। যেমন তোমার, আমার, এবং সবার মূর্ত্তি ধারণ করে ভগবতী ভূতমূর্ত্তি ধারণ করেছেন। এই হল ভগবতীর ধারা। সে ধারা আবার মূর্ত্ত। সর্ব্বপ্রথম যে স্পন্দন, নিয়ন্ত্রণে মূর্ত্তের যে গতাগতিময়, প্রকাশ সংহারময় যে কেন্দ্র, সেই কেন্দ্রে প্রত্যক্ষ ভাবে উনি বিরাজ করছেন। ওঁর অভ্যন্তরে যাকে সাধারণ ভাষায় উপর বলে, সেই হল দ্যুলোক। সেই- আদিত্যের আকার ধরে নিয়ন্ত্রণের কাযে ব্যাপৃত আছে। এই সূর্য্য বলতে একটি মাত্র সূর্য্য নয়, রাশি রাশি সূর্য্য। অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড রয়েছে, সেই সবের কেন্দ্রে অনন্ত সূর্য্য রূপে মা- বিরাজ করছেন। শুধু স্থূলভাবে নয়, সমস্ত জীবকে প্রাণ দান এবং প্রাণ সংহরণ, এই হল তাঁর কায। সুর্য্য বলতে মাত্র স্থূল সূর্য্য নয়, নিয়ন্ত্রিণী মূর্ত্তিতে যার অভ্যন্তরে মা বিরাজ করছেন, সেই হল সূর্য্য। তোমার পূজার দর্শন হবে—— ভূতিমূর্ত্তিতে মাকে দর্শন করা। যেমন মঙ্গল প্রভৃতি গ্রহ সূর্য্য থেকেই প্রসূত, তেমনই নিয়ন্ত্রিণী মা আমার সূর্য্যের মধ্যে বসে রয়েছেন, এবং থেকেই অনন্ত মূর্ত্তিতে বেরিয়ে আসছেন, আবার নিজেতে তাদের সংহরণ করছেন। নিজে প্রকাশ হচ্ছেন, আবার সেই প্রকাশের বুকে সোম হয়ে, অনুভূতি হয়ে রয়েছেন। তাঁর বুকে তিনি আমায় জাত করেছেন, আর নির্নিমেষ দৃষ্টিতে, আমায় দেখছেন, ভোগ করছেন। আর এই ক্রিয়াকে আমরা বলছি---- হংসঃ শুচিসৎ। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তোমরা অন্তর্দৃষ্টি, দিব্যদৃষ্টি খুলে রাখ। আদিত্যরূপিণী মা থেকে সৃষ্টিরূপিণী মা পর্য্যন্ত দৃষ্টি খুলে রাখ। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।ঐ দ্যুলোক থেকে, আদিত্য থেকে, ওঁর প্রতীক, বিম্ব বা প্রতিনিধি হয়ে,তোমার মণ্ডপে ভূতিমূর্ত্তিতে মা নেমে এসেছেন। সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখ। এই যে মায়ের নামা দেখালাম, এই হল ঋক্‌। তোমরাও এই বেদের ভিতর দিয়ে যাতায়াত কর। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তোমার ভালবাসা , স্নেহ, আদর নিয়ে তুমি যখন কারো কাছে এগিয়ে যাও, তখন তোমার যা কিছু সঞ্চিত আছে, সে সমস্ত নিয়ে তাকে তুমি আদর করবে, এই ভাব আসে তো? ভাত, কাপড়, টাকা, সবকিছু দিয়ে তাকে আদর করবে, এই ভাব উদ্রিক্ত করে তাতে গিয়ে পড়। তেমনি এই মা যখন আমার কাছে আসছে, তখন এই সব বসু——সোম স্বরূপ রূপ, রস, শব্দ, স্পর্শ, অন্ন, জল, জ্ঞান, যা কিছু সব পোঁটলা বেঁধে নিয়ে আসছে তো ? ওঁ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। বৎস ! মায়ের পরিত্রাণের নিয়ন্ত্রণের মহিমা দর্শন কর। এই যে মন্ত্র, যার গোড়াতেই খণ্ডন বা কর্ত্তনের কথা বললাম,  তার ভিতরে কিরূপ ভাবের লীলা নিয়ে তোমাকে ফোটাবার জন্য বা তোমার, আমার এবং জগতের একটি কীটের জন্য, সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড দিয়ে তাকে কেমন করে ধরে রয়েছেন, তাই দেখ। কথা কেন বলছি জান? জান না। যখন আনন্দময়ী ইনি কামময়ী মূর্ত্তি ধরেন, তখন প্রথমেইনিজে নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি নাএই যে স্বসম্বেদন, এই বেদন বড় সাংঘাতিক। একদিকে দুরন্ত অন্ধকার, এক দিকে প্রচণ্ড আলো। 'ততো রাত্র্যজায়ত আপনাতে কত ব্রহ্মাণ্ড বিসর্জ্জন দিয়েছেন, এবং তারা সব সুপ্ত আছে। সেই যে সমস্ত অন্ধকার, মরা, অস্তিত্বহীন সত্তা, তাদের প্রতিটিকে ফোটাবার জন্য বসুবেষ্টিত করে সকলের বাড়ী তৈরি করছেন। তারা সব সংজ্ঞা, বোধ, আদিত্য জ্যোতি নিয়ে প্রকাশ হবে। বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। এই এত তৈরি হবার পরও, এতমা মাবলার পরও, যখন তোমরা ঘুম থেকে ওঠ, তখন যে বাহ্য প্রভাব, গুলি গিয়ে তোমাদের জাগায়। তোমাদের কাছে এসব কিছু নয় বটে, কিন্তু বসু মূর্ত্তির ভিতরের প্রভবের দ্বারাই তোমরা জেগে ওঠ, এরাই তোমাদের ঘুম ভাঙ্গায়।  ওঁ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। এই বসুমূর্ত্তি যখন ভেঙ্গে যায়, তখন তোমরা ঘুমিয়ে পড়। আজ তোমরা মা বলতে এসেছ। ময়ের কাছে ধন, যশ ইত্যাদি চাইছ। কিন্তু মা, যা সব দিয়েছে, তার দিকে না তাকিয়ে বেইমানি করছ। তার দিকে একবার চেয়ে দেখ না। জন্ম মৃত্যুময় খেলায় যতক্ষণ না সচেতনতা আসে, ততক্ষণ মাকে চিনতে  পারবে না। ওঁ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। আচ্ছা, এই যে বললুম, এর ভিতরে, এই প্রকাশের ভিতরে, হ্রীং আছে, হৃদয় আছে? এটা হৃন্ময় প্রকাশ, না একটা অচেতন প্রকাশ? ওঁ হংসঃ শুচিসৎ স্বাহা। বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। হোতা বেদীসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যে বসু, যে আধারভূমি তৈরি করলেন, এদের সব-শেষ যে আধারভূমি, তার নাম হল পৃথিবী। পৃথিবী অগ্নিগর্ভ। মা এঁর ভিতর হোতা হয়ে রয়েছেন। হল ফিরে যাবার রাস্তা, ওকে অবলম্বন করে ফিরতে হয়। বেদী পৃথিবী, হোতা অগ্নি। আমার শরীর পৃথিবী এবং এই পৃথিবী অগ্নিগর্ভএর ভিতর বৈশ্বানর জ্বলছেন। ওঁ হোতা বেদীসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। এই যে তোমার মুখে, মন্ত্রোচ্চারণ হচ্ছে, এতে বৈশ্বানর অগ্নি, যিনি তোমার ভিতরে আছেন, যাঁর উষ্মার নাম দিয়েছ জীবন, সেই যিনি তেজোময়, তিনি বাক্যাকারে প্রকাশ হচ্ছেন। সেই হোতাকে দেখতে পাচ্ছ? ওঁ হোতা বেদীসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। অতিথিঃ দুরোণসৎ। এই অগ্নি, এই বাক্‌জাল, তোমার ভিতর রাশি রাশি চিন্তার আকারে প্রবিষ্ট হচ্ছে, রাশি রাশি কথা বজ্‌বজ্‌ করছে। কলসীর ভিতর যেমন রস গেঁজে উঠে উথলে পড়ে, তেমনি তোমার কলসীর ভিতর রস গেঁজে উঠে বার হচ্ছে। সে রসে কেউ বাস করছে দেখছ? তাকে দেখলে আর রস গাঁজে না,তখন রস বিশুদ্ধ হয়ে পড়ে। তার নাম কি ? যে প্রজ্ঞারাশি অনবরত বাক্যের আকারে গজ্‌গজ্‌ করছে, প্রজ্ঞা রাশির ভিতর কে ডুবে রয়েছে? সে কোন্‌ অতিথি ? আত্মবোধ, নিজে রে! তুই যখন ঘুমাস, তখন বাক্যরাশি সব তাঁতে গিয়ে মিলিত হয়, আবার বেরোয়। এর ভিতর কোন্‌ অতিথি বসে রয়েছে? দুরোণ মানে কলসীসোমময় সেই কলসী। এর ভিতর কে বসে রয়েছে রে? তোর প্রজ্ঞারাশি কার বুকে ঘুরছে? তার নাম বললুমঅতিথি' কেন? মায়ের সঙ্গে প্রজ্ঞার দৃষ্টি জুড়তে হবে। তোর এই কথাগুলির ভিতরে আত্মবোধস্বরূপে মা রয়েছেন? এর নাম অতিথি, যে একটা তিথি মাত্র বাস করে। আর মানে হল, যার কোনও তিথি নেই, নিত্য সনাতন ভাবে যে বাস করছে। আর অতিথি মানেঅকালে মায়ের বোধন করছি। ইনি আছেন? ওঁ অতিথিঃ দুরোণসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। কে অতিথি ? এমন বাড়ী ঘর সাজান হল, তার ভিতর ঢুকে কে বসে আছে ? সে কিরকম অতিথি রে ?  অতিথিঃ দুরোণসৎ। আমার এই শরীর-গৃহের মধ্যে যিনি আছেন, তিনিই আমার সবের ভিতর অতিথি হয়ে বসে আছেন, দেখলুম। ওঁ অতিথিঃ দুরোণসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। এইরূপে তোর অন্দরমহলে ঢুকে অতিথি হয়েছে বটে, কিন্তু তোর সমস্ত ক্রিয়া সম্পন্ন করতেই সে দাঁড়িয়েছে। বহির্দৃষ্টি সম্পন্ন তোর যে কামনা, তা ফোটাবার জন্য তোকে এই নরমূর্ত্তি ধরিয়েছে। সকল মূর্ত্তির নামই নর। ওঁ নৃসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যিনি সিংহ, যিনি প্রাণরূপ সিংহ, তিনি নরমূর্ত্তি ধরেছেন। জ্ঞানদেবতাই তো ''মানুষ" এই চেহারা ধরেছেন। মা যদি সেই জ্ঞানদেবতা হন, তবে মা- মানুষ হয়ে বসেছেন। ওঁ নৃসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। পরতে পরতে এই মাকে, এই নৃসৎকে চিনছিস ? হল হংসঃ। এই মনুষ্যমূর্ত্তিতে তুমি হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা বলে পূজা করবে। এই মানুষটিকে কেমন করে করলেন ? এই পৃথিবী তোকে ধরে রইল। তোকে মানুষ করে ধরতে যে শক্তি প্রকাশ করতে হয়েছে, তাদের নাম দেবতা। তেত্রিশ কোটি দেবতাকে প্রদীপ্ত এবং নিয়ন্ত্রিত করে, তবে এই তোকে ধরে বসেছেন। এই দেবতাদের মূর্ত্তি নিয়ে যিনি বসে আছেন, তিনি বরসৎ। ওঁ বরসৎ স্বাহা। ইন্দ্রিয়াদিময় দেবতা, ভূতাদিময় দেবতা, দেবতাময় হল এই সৃষ্টি। ওঁ বরসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। কেন দুর্গা বলছিস? দুর্গাকে কে তুলছে ? এই যে তোকে দেবতাময় বলে দেখিয়ে দিলে, নিজে বলে তোর কিছু নেই, তেত্রিশকোটি দেবতা দিয়ে গড়ে তোকে তৈরি করেছে, দেবতাদের দ্বারা তুই পুষ্ট হচ্ছিস, তখন কি আর তুই চুপ করে বসে থাকবি, না তাদের সেবা করবি ? এই যে নিজের স্বেচ্ছাচার গতিকে দেবতাভিমুখে পরিচালন করা, তার নাম যজ্ঞ। নিজেকে যখন দেবময় দেখলি, তখন যজ্ঞময় হলি। তখন ঋতসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ অতিথিঃ দুরোণসৎ স্বাহা। আদিত্য হংসের ভিতর দিয়ে একেবারে  তোর বুকের ভিতর ঢুকে রয়েছে। এই নাড়ী দেখতে পাচ্ছিস ? অতিথিঃ দুরোণসৎ নৃসৎ বরসৎ ঋতসৎতোদের হাত পা ছোড়ার অভ্যাস মা বন্ধ করতে চাইছে না। মায়েরই বিধানে শিশুরা হাত পা নেড়ে বল সঞ্চয় করে। তেমনি তোদেরও হাত পা নাড়তে হবে। তবে সে নাড়াটা দেবতায় বা যজ্ঞে নাড়। হাত পা নাড়তে বারণ করছি না, তবে হাত পা নেড়ে সর্ব্বত্র দেবতায় গিয়ে পড়িস, এই রকম ভাবে নাড়। যেমন, যারা তারের উপর সার্কাস করে, তাদের তলায় গদি ধরা থাকে, যদি পড়ে তো কিছুই লাগবে না। তোরাও তেমনি দেবতার গদি পেতে হাত পা নাড়, পড়লে কিছুই লাগবে না। ওঁ ঋতসৎ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। বলেছি, এই মাকে  সূর্য্যতে দেখা যাচ্ছে, আর ওখান থেকে মা এই ভূতমূর্ত্তি, একেবারে এই মূর্ত্তিতে নেমেছে; শুচি থেকে, আকাশ থেকে, এই বসুতে, এই তোতে, এই যজ্ঞেতে, এই মূর্ত্তি দেখতে বলছি। খালি জ্ঞানের ছায়া দেখতে বলছি না। ওঁ ঋতসৎ স্বাহা। ওঁ ব্যোমসৎ স্বাহা। ব্যোমসৎ কাকে বলে ?  হংস স্থূল হয়ে আদিত্য আকারে প্রকাশিত হয়েছেন। দেখলুম, যা কিছু কায করছি, সব যজ্ঞ, সব দেবময়, আর এই সমস্ত দেবতা বিধৃত হয়েছে ব্যোমেতে। ওঁকারের বিশিষ্ট আকার হল ব্যোম। এই ব্যোমকে দেবতাময় দেখলে তবেই ব্যোম দেখবি, নয় তো সে শূন্য। যোয়ং অন্তরাকাশঃ, অয়মেব সঃ যোয়ংবহিরাকাশঃ আমার অন্তরে এই যে জ্ঞানে পূর্ণ, পূর্ণতায় পূর্ণ অন্তরাকাশ, এও যা, আর এই যে স্থূল বহিরাকাশ, এও তাই। ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ ব্যোমসৎ স্বাহা। যা কিছু স্থূল মূর্ত্তি দেখছিস, সবই ব্যোমসৎ। এমন কিছু কি আছে যার মূল ব্যোম নয় ? এই যে মা স্থূল ভূত মূর্ত্তি ধরেছেন, তার ভিতর ব্যোম আছে ? ওঁ অব্জা——এবার দর্শন কর। যা দিয়ে তোরা বিধৃত হয়ে রয়েছিস, এই যে হাত পা ইত্যাদি, এগুলি হল দেবতাদের প্রকাশ। আর এই বাহ্য প্রকাশের ঠেলায়, অনবরত উদ্দীপনায়, তুই বেচে আছিস। পোকা যেমন জলে জন্মায়, তেমনি এই যে শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস, গন্ধ---এই প্লাবনের ভিতর তুই জন্মেছিস, আর এদের টেনে টেনে নিচ্ছিস। এঁর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে হবে। এই আকাশ,জল, মাটি, সূর্য্য থেকে আরো বেশী করে পেতে হবে। যে মা পুঁটলি বেঁধে আসছে। তবেই তো মানুষ হবি, আপ্তকাম হবি। ওঁ অব্জাএদের এই সমষ্টিগুলি আমাকে যে জীবন্ত করে রেখেছে, এঁর নাম অপ্‌, অব্জা। ওঁ অব্জায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ স্বাহা। অব্জায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। রস, প্রাণ, তোর ভিতর ঢুকে মহা আলোড়ন তুলেছে; তুলে, রসের পূর্ত্তি দিয়ে তোকে ইন্দ্রিয়ময় করেছে। চোখ চেয়ে তাদের তুই দেখ। ওঁ গোজায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। কে ইন্দ্রিয়ময়ী হয়েছে ? দুর্গা। তোতে সে ইন্দ্রিয়ময়ী হয়েছে ? ওঁ গোজায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ইন্দ্রিয়ময় হয়েছিস মানেকর্ম্মময় হয়েছিস। সেই প্রতি কর্ম্মকে যদি যজ্ঞ দেখিস, ভগবৎপ্রকাশ দেখিস, তা হলে কি তোর কর্ম্ম থাকে। ওঁ ঋতজায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যেমন ভাবে সেই কর্ম্ম করিস, তেমনি ভাবে শরীর লাভ করিস। চোখ দুটাকে যদি কিছুদিন ন্যাকরা দিয়ে বেঁধে রাখিস, তার পরে তাকে খুললে, আর দেখতে পাবি না। এইরূপ কর্ম্মানুবর্ত্তনে যে ফুটে ওঠা, তার নাম অদ্রিজা। জ্ঞান পালিয়ে যায়, কিন্তু এরা পালিয়ে যায় না; পাহাড়ের মত দাঁড়িয়ে থাকে এবং ভূত হয়। ওঁ অদ্রিজায়ৈ স্বাহা। হ্রীং শ্রীং অদ্রিজায়ৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। কি ভাবে মা নেমে আসেন, তোকে মূর্ত্ত করেন, কর্ম্মাবর্ত্তন রচনা করেন, তোকে কর্ম্মাবর্ত্তনে রাখেন, এই ধারাটি দেখতে পেলি ? ওঁ হংসঃ শুচিসৎ, বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ, হোতা বেদীসৎ, অতিথি দুরোণসৎ, নৃসৎ, বরসৎ, ঋতসৎ, ব্যোমসৎ, অব্জা, গোজা, ঋতজা, অদ্রিজা, ঋতং বৃহৎ। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। দেবি ! ইন্দ্রিয়ানাং অধিষ্ঠাত্রী ভূতানাঞ্চাখিলেষু যা। ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ।। শোন আবার বলে দিই। কাঠের স্তূপকে জ্বালালে সে যেমন বিপুল অগ্নি প্রজ্জ্বলিত করে ——দীপশলাকায় যতটুকু আগুন ছিল, ততটুকু নয়, কাঠে যত আগুন ছিল, সব জ্বলে ওঠে, তেমনি তোর নিজবোধটি দুর্গায় ঠেকালে, যে অগ্নি, যে বৈশ্বানর, আব্রহ্ম স্তম্ভ পর্য্যন্ত প্রদীপ্ত হয়, সে তোর নিজের ঐটুকু নয়, সেই প্রদীপ্ত শিখার ঘূর্ণাবর্ত্তে ব্রহ্মজাল প্রদীপ্ত হচ্ছে। কোথাও নীহারিকা, কোথাও সূর্য্য, চন্দ্র, বরুণ,দেব, দেবতা, এই সব আগুন তোর অগ্নি শলাকা দিয়ে প্রজ্জ্বলিত করলি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রজ্জ্বলিত করলি। এই রকম   বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, ভূতে ভূতে মাকে প্রদীপ্ত করতে হবে। ওঁ ইন্দ্রিয়ানাং অধিষ্ঠাত্রীওখানে তোমার সমস্ত ইন্দ্রিয় মাখাও, সমস্ত ইন্দ্রিয় একত্র করে তার পশ্চাৎ পশ্চাৎ পাঠিয়ে দাও। ওঁ ইন্দ্রিয়ানাং অধিষ্ঠাত্রী ভূতানাঞ্চাখিলেষু যা। ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ।। তোর চক্ষুরূপ আদিত্যকে অগ্রসর করে , অগ্রণী করে, সেনাপতি করে এই প্রতিমায় ইন্দ্রিয়সকলকে চালিয়ে দে।এতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড প্রদীপ্ত হয়ে উঠবে। এই অগ্নি এখানে জ্বলছে। ওঁ ইন্দ্রিয়ানাং অধিষ্ঠাত্রী ভূতানাঞ্চাখিলেষু যা। ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। দুর্গে ! দুর্গে ! এবার দে স্নানের জল। বল্‌ মা -মা। [ উচ্চ মাতৃরোল ]

                                        

স্নান।

মা বল্‌---- মা (উচ্চ রোল) হ্রীং শ্রীং। 

ওঁ সুরাস্ত্বামভিষিঞ্চতু ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশ্বরাঃ। ব্যোমগঙ্গাম্বুপূর্ণেন আদ্যেন কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। 

ওঁ মরুতস্ত্বাভিষিঞ্চতু ভক্তিমন্তঃ সুরেশ্বরীং। মেঘাম্বুপরিপূর্ণেন দ্বিতীয় কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ সারস্বতেন তোয়েন সমপূর্ণেন সুরোত্তমে। বিদ্যাধরাস্ত্বাভিষিঞ্চতু কলসেন তৃতীয়েন তু।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। 

ওঁ শক্রাদ্যাস্ত্বাভিষিঞ্চতু লোকপালাঃ সমাগতাঃ। সাগরোদকপূর্ণেন চতুর্থকলসেন তু।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ বারিণা পরিপূর্ণেন পদ্মরেণুসুগন্ধিনা পঞ্চমেনাভিষিঞ্চতু নাগাশ্চ কলসেন তু। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ হিমবৎহেমকূটাদ্যাস্ত্বাভিষিঞ্চতু পর্ব্বতাঃ। নির্ঝরোদকপূর্ণেন ষষ্ঠেন কলসেন তু।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ সর্ব্বতীর্থাম্বুপূর্ণেন কলসেন সুরেশ্বরীম্‌। সপ্তমেনাভিষিঞ্চতু ঋষয়ঃ সপ্ত খেচরাঃ।। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

ওঁ বসবস্ত্বাভিষিঞ্চতু কলসেনাষ্টমেন তু। অষ্টমঙ্গলসংযুক্তে দুর্গে দেবি নমোস্তু তে। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা।

আবার বলে নে, ইন্দ্রিয়ানাং অধিষ্ঠাত্রী ভূতানাঞ্চাখিলেষু যা। ভূতেষু সততং তস্যৈ ব্যাপ্তিদেব্যৈ নমো নমঃ।। হ্যাঁগা, এই যে মায়ের আমার ভূতিমূর্ত্তি দেখতে পাচ্ছিস,এতে চোখ আছে ? কর্ণ আছে ? নাসা আছে ? জিহ্বা আছে ? হৃদয় আছে ? পা হাত সব আছে ? এই সমগ্র ইন্দ্রিয়ময় অস্তিত্ববোধ দেখতে পাচ্ছিস ? এই যে বোধমূর্ত্তি, একে তোর সঙ্গে জড়িয়ে দেখলি। তোর যে কর্ণ জ্ঞান, এই মায়ের দুইটি শ্রুতিতে তাকে মিলিয়ে বললি তো ? তেমনি তোর সত্তায় যা কিছু আছে, এই সব এতে মিলিয়ে বললি ? অনুভূতির ইন্দ্রিয়জালমূর্ত্তিতে আলিঙ্গিত হয়ে তুই বলছিস——এখানে ইন্দ্রিয় আছে ? ওঁ। শুধু মা বলিস না, শুধু শুধু জল ঢালিস না, মিথ্যা বলিস না। ওর গায়ে জল লাগছে ? হ্রীং, হ্রীং হৃদয়ং। যদেতৎ হৃদয়ং তব, তদেতৎ হৃদয়ং মম। যদেতৎ হৃদয়ং মাতুঃ, তদেতৎ হৃদয়ং মম। যদেতৎ হৃদয়ং মম, তদেতৎ হৃদয়ং তব। এই যে আমার বুকে হৃদয়, প্রাণ, আর এই যে তোমার বুকে হৃদয়, প্রাণ, সেই একই প্রাণ। যদেতৎ হৃদয়ং মম, তদেতৎ হৃদয়ং তব স্বাহা। সূর্য্যলোকে গিয়ে দেখে এলাম মা ! তুমি দাঁড়িয়ে আছ। বসুলোকে, পৃথিবী লোকে, বুকের ভিতর, যজ্ঞের ভিতর, আমার এই পূজার মণ্ডপে তুমি দাঁড়িয়ে আছ। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ, বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ, হোতা বেদীসৎ, অতিথি দুরোণসৎ, নৃসৎ, বরসৎ, ঋতসৎ, ব্যোমসৎ, অব্জা, গোজা, ঋতজা, অদ্রিজা, ঋতং বৃহৎ। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। আমার মানস চন্দ্রমার যত আবর্ত্তন, আমার ভ্রাম্যমানতার জন্য তার যত তিথি প্রকাশ হচ্ছে, কোথাও প্রথমা, কোথাও দ্বিতীয়া ইত্যাদি, তাতে আমি এক মুহূর্ত্ত স্থির থাকি না। অমাবস্যা থেকে পূর্ণিমা পর্য্যন্ত ক্রমাগত আমি তিথিময় হচ্ছি। তার মধ্যে তুমি হলে অতিথি। হে সোমপা, হে দুর্গা, আমার প্রদত্ত স্নানের বারি গ্রহণ কর। ওঁ দুর্গতিহারিণী-দুর্গায়ৈ স্বাহা। হে অতিথি, তুমি আপনি আপনার পূজা করে আমাকে দেখাচ্ছ, আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছ, যেন আমি তোমার পূজা করছি, যেন আমার পূজা না হলে তোমার চলে না ! ভগবতি, নিয়ন্ত্রিণি, গুপ্ত ভাবে থেকেও যাকে তুমি দেখা দাও, সে মানুষ তোমার কোলে স্থান পায়। দেবি দুর্গা, আমায় তুমি দুর্গা কর। ওঁ চরাচরময়ং সর্ব্বং অস্তিনাস্তিময়ং যৎ। মাতুঃ স্নানে মহেশান্যাঃ সান্নিধ্যং ইতি কল্পয়।। দুর্গা স্নানে তোমাদের স্নান হউক। দুর্গার তৃপ্তিতে তোমরা সবাই তৃপ্ত হও। গৃহাণ দুর্গে দেবেশি স্নায়ীং উদকং মম। হ্রীং শ্রীং ভূতিরূপিণ্যৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। ইদং স্নানীয়ং হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ( ১০.২ মিনিটে প্রথম পর্ব্ব সমাপ্ত আরম্ভ।)


                          ১১.১০ মিনিটে দ্বিতীয় পর্ব্ব আরম্ভ।

ওঁ  হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যখন নিজে কোথাও চলেছিস তখন বুকের পা না ছড়িয়ে, হ্রীং বিস্তার না করে, হ্রীং এর রাস্তা না বিছিয়ে, কোথাও পদক্ষেপ করেছিস ? হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। হ্রীং বিস্তার করে মাথা নত করে চল। যেখানে যেখানে পা ফেলছিস সেখানে সেখানে এই তো যাচ্ছে ? বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে, ব্যোমক্ষেত্রে, যেখানে যা কিছু জড়িয়ে আছিস, ইন্দ্রিয়ের দ্বারা অন্তঃক্ষেত্রে যা কিছু জড়িয়ে আছিস, সব তো সোমলতা ? থেকে রস নিষ্কাশন করেই তো খাচ্ছিস ? একে থেৎলে, থেকে রস বার করে খাচ্ছিস? সুখ দুঃখ, আলো আঁধার, সুর্য্য চাঁদ ইত্যাদি সবই তো ওরই রস ? এই সোম বের করে খাচ্ছিস তো ? যিনি অতিথি,আজ তাঁকে খাইয়ে খেতে বলছি। যাঁকে থেৎলে রস বার করে খাচ্ছিস, তাঁকে দেখতে বলছি। যে তিথিহীন দেবতা, অমাবস্যার চাঁদ, সোমলতা যেমন তরুকে বেষ্টন করে থাকে, তেমনি - তো তোকে জড়িয়ে আছে ? জন্ম, জরা, যম, ধন, যশ, এই সব থেকে বেরোচ্ছে ? রস কখনও ভাল হয়ে বেরোচ্ছে, আবার থ্যাৎলাতে জানিস না বলে, কেমন করে সোম তৈরি করতে হয় বলে, কখনও তেতো হয়ে বেরোচ্ছে। কুবিৎ সোমং অপামদেবি আমি অনেক সোম পান করেছি; তার ভিতর সুখ দুঃখ, জন্ম মৃত্যু ইত্যাদি কত বৈচিত্র্য দেখেছি। দেবি ! ভগবতি ! আমি অনেক সোম পান করেছি। কুবিৎ সোমং অপাম। এবার তুমি একটু খাও। তোমার সোম তোমাকে নিবেদন করছি, এবার তোমার সোম তুমি একটু খাও। দুর্গে, সৌম্যে, সোমদা, সোমরূপা, অতিসৌম্যা, সোমপান কর। ওরে যে তোরা দেখছিস---- পদতলে শূলোদ্ভিন্ন মহিষাসুর, মা সোম পান করছে, সোমরস বার করছে।তোরাও , ঐরকম করে বিষয় থেকে, জগৎ থেকে সোমপান কর। একটা জিনিষকে মেরে নেওয়া নয়, নিজেতে তুলে নেওয়া। মা মহিষাসুরকে মেরে নিচ্ছে না, ওর মহামহিষত্বকে আপনাকে তুলে নিচ্ছে। আমায় বহু সোম পান করিয়েছ। চোখে দর্শনের আকারে, কর্ণে শ্রবণের আকারে, ইত্যাদি বহু আকারে আমার সোম বেরোচ্ছে। দেবি গৃহাণ ! সোমং গৃহ্ন দেবি, সোমং গৃহ্ন। শুধু আমি সোম পান করিনি, আবার আমাকে থেৎলে, আমা থেকে সোম নিষ্কাশন করে, কত সব লোক খেয়েছে, এখনও খাচ্ছে, দেখেছিস ? দেবি ! সোমং গৃহাণ স্বাহা। আনন্দে দুঃখে আমার চোখে যত জল ঝরেছে, তাতে তোমার সোম পান হোক। সোমং গৃহাণ দেবি, সৌম্যে, সোমপে, সোমদে, সোমবল্লভে ! কুবিৎ সোমং অপাম স্বাহা। ওগো অতিথি দুর্গে ! আমি বিশাল বিশ্বজ্ঞানরূপ বিপুল ঔষধি সকল সংগ্রহ করেছি। যে সোম পান করেছি, তাতে সকলে আমায় ঊষ্মা দিয়েছে, তাতে আমার প্রভাত হয়েছে। সোমপানে তখনই আমার প্রভাত হয়, ঊষার উদয় হয়, চেতন আদিত্যের উদয় হয়, যখন অন্ধকার থেকে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ঔষধিস্বরূপ, সোমলতাস্বরূপ গৃহীত হয়। আমি এই সর্ব্ব ওষধি, সোমলতা একত্র করে হাতে সংগৃহীত করলাম। হাতে ফুল নে—— এই সর্ব্বৌষধি, একে আমি দধি দিয়ে, মধু দিয়ে মর্দ্দন করে, তোমার হাতের মুঠোয় অর্পণ করার জন্য এই সর্ব্বৌষধি তোমার কাছে নিয়ে এলাম——অমা, অতিথি, চিরপূজ্যা অতিথি, তুমি আমার এই সোম পান কর। হ্রীং শ্রীং দুর্গে স্বাহা। শাঁখ বাজা। (গুরু ক্ষণেক যোড়হস্তে দণ্ডায়মান রইলেন, তার পর বললেন ) ফুলকে প্রতীক করে মাকে মদ খাওয়াচ্ছিস, নিজে মদ খাচ্ছিস।বীর হয়ে বস, বীরাসনে বস। যে রসের একটুখানি নিয়ে, একটা যাকে তাকে পেয়ে, স্ত্রী বলে, পুত্র বলে এমন পাগল হয়ে যাচ্ছিস যে, তাদের জন্য অকাতরে মরে যাতে পারিস। যে মধুর, যে সোমের একটুখানি স্বাদ এমন নেশা এনে দেয়, সেই সোমে এই বোতল ভরা। তোরা মাতোয়ারা হয়ে যা। এই সোম খেয়ে কি এমন ভদ্রলোক হয়ে বসে থাকা যায় ? দেবি! এই পুষ্পরূপী প্রতীকে আমি সর্ব্বৌষধি সংগ্রহ করলাম। যাঁহাতক তোরা দেখবি যে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে আত্মময় করে একসা করতে পাচ্ছিস না, অমনি বলবি——ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। দেবি ! পুষ্পকে  প্রতীক করে, সর্ব্বৌষধি একত্র করে, তোমার সোম সেবনের জন্য নিয়েছি।এতে আমার প্রাণরূপ দধি আত্মরূপ মধু দিয়েছি। হে আমার অতিথি ! শুনেছি সব একসঙ্গে না হলে তুমি খাও না; গোটাটা তাল পাকিয়ে না দিলে, একটু আধটু দিলে খাও না। তাই সর্ব্বস্ব একত্র করে——অমা, অমাবস্যার চাঁদ আমার, অতিথি আমার ! তোমার জন্য সংগ্রহ করলাম। সৌম্যে, সোমবল্লভে, সোমং গৃহ্ন, হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। বল্‌ মা। মা [ উচ্চরোল ] আবার গ্রহণ কর। ওরে সোমপায়ী শিষ্যবৃন্দ, সন্তানবৃন্দ ! আজ তোদের চক্ষে মা ফুটবে। তোদের বিষলতাকে অমৃতলতায় পর্য্যবসিত করে দিয়েছি; যা ছিল তোদের বিষাক্ত কণ্টকময়, অথচ তাকে তোরা ছাড়তে পারছিস না। যে চক্ষে সেই দৃষ্টি ফুটেছে, আবার সেই গুরুচক্ষু গ্রহণ কর। আবার প্রতিজ্ঞা কর। পুষ্প গ্রহণ কর। দেবি ! কুবিৎ সোমং অপাম। দেবি ! আমাদের অনেক মধু পান করিয়েছপুত্রে, স্ত্রীতে, ধন, মান, ঐশ্বর্য্যে, দারিদ্র্যে,পেষণে, জ্বালাতে। যথেচ্ছ ব্যবহারে তাদের আমরা নষ্ট করে খেয়েছি; তোমাকে অর্পণ না করে, যথেষ্ট কটু করে, বিষ করে খেয়েছি। একবারও ভাবিনি, আমাকে দেওয়া এই যে তোমার হাত পা, এই যে বিশ্বদর্শন, সব আমাকে দেওয়া তোমারই সোমস্তন্য। আজ সেই চোখ খুলেছে, তাই দেখছি। আমায় তুমি যা কিছু ঊষ্মা দিয়েছ, প্রাণ দিয়েছ, সেই সব ঔষধি আমি পুষ্পের আকারে গ্রহণ করলাম। যা বলছি, তাই হচ্ছে, এতে তোদের সন্দেহ নেই তো ? ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে। দেবি আমি এই সর্ব্বৌষধিতে দধি মধু সমর্পন করলাম। আমার প্রাণ এই বদ্ধ মুষ্ঠিতে, আমার আত্মবোধকে, নিজেকে এই মুষ্টিতে বদ্ধ করলাম। এই সর্ব্বৌষধিমন্থদুর্গে ! তুমি এই সোম পান কর। আমি অনেক খেয়েছি, কুবিৎ সোমং অপাম। সৌম্যে, সোমদে, সোমপা, সোমবল্লভা, দেবি, হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওহো হো ! কি চক্ষু আমার মুক্ত হল ! কি বলছিলুম তো দেখছি সমস্ত সোম তুমি খেয়েছ; তোমার উচ্ছিষ্ট মাত্র আমি খেয়ে দেখছিলাম। আমি পান করছিলাম, তা তো নয়। দেবি, তোমার সোম তুমি গ্রহণ কর, স্বাহা। 

পাদ্য গ্রহণ কর। পাদ্যং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। অর্ঘ্যং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। আচমনীয়ং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। স্নানীয়ং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। বস্ত্রং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। গাছের ছালই দাও, ফুলের পাতাই দাও, আর বস্ত্রই দাওযা দেবে তাতেই বস্ত্র বোনা হয়ে যাবে। বস্ত্রং——ইদং ত্বষ্টা নির্ম্মিতং অতীব মনোহরং বস্ত্রং হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। আভরণ গ্রহণ কর। বিশ্বকর্ম্মাকে ডাক, তোমার ফুলটি দিয়ে মায়ের অলঙ্কার রচনা করে দিক। ওঁ ত্বষ্টা অলঙ্কারং কুরু কুরু স্বাহা। ইদং আভরণং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। বল মা। মা [ উচ্চরোল ] এষঃ গন্ধঃ হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। বল, মা [ সকলের উচ্চ মাতৃধ্বনি] এষঃ ধুপঃ হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। এষঃ দীপঃ হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। বল মা [ মা বলিয়া মণ্ডলীর ধূপ দীপ ঘূর্ণন ] ওঁ সোপকরণং নৈবেদ্যং সোমবল্লভায়ৈ অর্পয়ামি স্বাহা। ওঁ সোমেন সর্ব্বং প্লাবিতমস্তু। দুর্গে ! সোমদে ! সোমেন পরিপূরিতং অন্নং গৃহাণ। দুর্গে অন্নং গৃহাণ, তৃপ্তা ভব। হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা।(১২টায় দ্বিতীয় পর্ব্ব সমাপ্ত।)

                                                         

                                            হোম

                                     ১২।।০ টায় আরম্ভ। 

ওঁ অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং যজ্ঞস্য দেবং ঋত্বিজং।  হোতারং রত্নধাতমম্‌। ওঁ অগ্নে, ত্বং জাতবেদ রোহিতাক্ষ ইহাবহ ইহাবহ সর্ব্বকর্ম্মাণি সাধয় সাধয় স্বাহা। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। চামুণ্ডে ! ঐং মানে কি ? যে জ্ঞানদেবতা আত্মানাত্মময়। হ্রীং মানে তিনি হৃদয়ময় হয়েছেন। ক্লীং মানে কামদ। কোন মানুষকে স্তবস্তুতি করে, রসিয়ে, তার প্রাণটাকে গলিয়ে দিতে পারলে, তার প্রাণটা যেমন তেজালো হয়, কামদ হয়, মাকে তেমনি সোমপান করিয়ে, অগ্নিরূপে তেজালো করেছি। তোদের এখন যা চাইতে হয়, চেয়ে নে। ওঁ অগ্নিরূপিণ্যৈ বিশ্বদাত্র্যৈ স্বাহা। ওঁ অগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্ম্মফলেষু জুষ্টাং। দুর্গাং দেবিং শরণং অহং প্রপদ্যে স্বাহা। বলেছি, মানুষ যেমন মদ্যপানে উদ্দীপ্ত হয়, তেমনি হৃদয়রূপ সোমপানে মা অগ্নিময়ী, বাঙময়ী হয়ে জ্বলে উঠেছে। অগ্নিবর্ণাং——যে বাক্য জ্বলতে জ্বলতে বেরোয়, মূর্ত্ত হয়ে ফোটে, যে বাক্যে সোনা তৈরি হয়, বসু সকল নির্ম্মিত হয়, সেই বাক্‌ অগ্নিবর্ণা। ওখান থেকে আরম্ভ করে এখান পর্য্যন্ত যে কর্ম্ম করলি, তাতে যে ফল হবে, সেই কর্ম্মফলে মা সেবিতা হচ্ছে, তোকে দেবার জন্য মা সেই ফল খাচ্ছে। ওঁ অগ্নিবর্ণাং তপসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্ম্মফলেষু জুষ্টাং। ত্বাং দুর্গাং শরণং অহং প্রপদ্যে স্বাহা। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। যিনি সর্ব্বত্র সঞ্চরণশীলা, অথচ সব জায়গায় স্থির আছেন, এমন যে অদ্ভুত জ্ঞানময়ী মা, যিনি জাতবেদা, আপনি জেনে জেনে সব রচনা করেন, এমন যিনি মা, তিনি গুরু, ঐং। ইনি যখন উদয়ময় হন, কামময় প্রাণময় হন, তখন এঁর নাম হয় হ্রীং। যে গুরু, ওঁর তখন  নাম হয় সোমবল্লভা উমা। যখন এই দুজনের একত্ব দেখি——যিনি প্রেরক, তিনিই ভোক্তা, তিনিই ভোগ্য যখন দেখি, তখন হন ক্লীং, কামদা। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। ( বহু বার )

দেবি ! অদ্য আশ্বিনে মাসি শুক্লে পক্ষে কন্যারাশিস্থে ভাস্করে মহাষ্টম্যাং তিথৌ (যে যার নাম গোত্র বল) শ্রীভগবতীং ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে ইতি মন্ত্রেণ অহং পূজয়ামি। ওঁ দেবি, দেবি, চণ্ডিকে, চণ্ডিকে স্বাহা। ওঁ রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি স্বাহা। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা।মা-মা-মা [ উচ্চ মাতৃধ্বনি ] দেবি ! কাম্যফল না ছড়াতে ছড়াতে তুমি কোথাও চল না। ভগবতি ! যে দিক দিয়ে তুমি চল, কাম্য ফল ছড়িয়ে ছড়িয়ে, আপনাকে লুকিয়ে লুকিয়ে চল, এই তোমার স্বভাব। যেখানে যেখানে কামনা আছে, তার আড়ালে আড়ালে থেকে নিজে চল। ওঁ রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি স্বাহা। রূপং দেহি মানে কি ? দোহিনী শক্তি, এক মূর্ত্তি থেকে আর এক মূর্ত্তি হয়ে বেরোন। জয়ং দেহি——বিপদে পড়ে যখন মনে করিস, অমুক লোকটা এলে বিপদ্‌ থেকে উদ্ধার হত। কিন্তু নিজেই সেই লোক যদি মনে করতিস, তবে জয় পেতিস। যশব্রহ্মবর্চ্চস্‌। তার দ্বারাতে তোর সমস্ত শরীর জ্যোতির্ম্ময় হত না ? ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। (বহুবার ) প্রণতজনপালিনি দুর্গে, প্রণাম গ্রহণ কর। ( সকলের প্রণাম )


( বেলা টায় হোম সমাপ্ত। এর পরে গুরুদেব নিজে হোম করলেন এবং অন্ন নিবেদন করলেন। তার পরে আরতি করলেন। আরতি শেষে গুরুদেব শিষ্যমণ্ডলী সহ প্রণাম করলেন। .১৫ মিনিটে অষ্টমী পূজা সমাপ্ত। )



                                        সন্ধিপূজা।

                                                        

( বেলা .৩০ মিনিটে আরম্ভ।) গুরু, গৃহে বিশ্রাম করছিলেন। সেখান থেকে বললেন---- বাজা। বাজনা আরম্ভ হল। গুরু এসে বসলেন। গুরু অনেকক্ষণ দেবীর দিকে হাতজোড় করে চেয়ে রইলেন। তার পরে কাঁসার একটা বাটিতে নারিকেল জল তুলে নিয়ে তা থেকে দেবীর উপরে প্রথমে ছিটালেন, তার পর শিষ্যমণ্ডলীর উপর। মণ্ডলী নীরব নিথর।)


কালী ! কালী ! আমি ডাকছি। কালী ! আমি ডাকছি। ওঁ আত্মতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শক্তিতত্ত্বায় স্বাহা। কালী ! আমি ডাকছি। কালী ! কালী ! ওঁ মণিধরিবজ্রিণি মহাপ্রতিসরে মাং রক্ষ রক্ষ স্বাহা। ওঁ আত্মতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শক্তিতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শক্তিতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। ওঁ ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ [ বহু বার ] ওঁ কালী। ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। আহা ! আয় আয় আয়। কালিকায়ৈ নমঃ। ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।

পাদপদ্মে বল ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। মূলাধারে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। স্বাধিষ্ঠানে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। মণিপুরে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। হৃদয়ে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। কণ্ঠে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। জিহ্বায় ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। ললাটে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। সহস্রারে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। সহস্রারে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। ললাটে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। জিহ্বায় ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।কণ্ঠে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।হৃদয়ে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।মণিপুরে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।স্বাধিষ্ঠানে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।মূলাধারে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ।পাদপদ্মে ক্রীং কালিকায়ৈ নমঃ। ওঁ ক্রীং ক্রীং ক্রীং হুং হুং হ্রীং হ্রীং দক্ষিণকালিকে স্বাহা।

ওঁ কালী করালবদনা বিনিষ্ক্রান্তাসিপাশিনী। বিচিত্র খট্টাঙ্গধরা নরমালাবিভূষণা। দ্বীপিচর্ম্মপরিধানা শুষ্কমাংসাতিভৈরবা। অতিবিস্তারবদনা জিহ্বাললনভূষণা। নিমগ্নারক্তনয়না নাদাপূরিতদিঙ্‌মুখা। ক্রীং কালিকায়ৈ স্বাহা। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ক্রীং হ্রীং দুর্গাকালিকায়ৈ স্বাহা। বল তো মা ! মা !


( গুরু মাকে কালো কাপড় পরালেন। নিজের মায়ের মাথার উপর দিয়ে কালো কাপড় ঢাকা দিয়ে গুরু কি করছেন তা দেখা গেল না মাথার মুখের কাপড় এবার খুলে দিলেন। মায়ের খালি মুখখানা দেখা যাচ্ছে, আর সব কালো কাপড়ে ঢাকা। থালা থেকে নৈবেদ্য লুচি মিষ্টি তুলে মায়ের মুখের ভিতর তুলে দিয়ে খাওয়ানো এবং মুখে গেলাস ধরে জলপান করানো হল। এবার সকলে একে একে গিয়ে গুরুর হাতে পুষ্পাঞ্জলি দিতে লাগল। গুরু প্রত্যেকের হাত থেকে ফুল নিয়ে মায়ের পাদপদ্মে সমর্পণ করতে লাগলেন। ( .৪০ মিনিটে সন্ধি পূজা সমাপ্ত।)


[ প্রকাশকের মন্তব্য।

১। হংস —‘ হং ' বা হনন এবংসবন, সোম বা প্রাণ প্রকাশ যাঁর থেকে হচ্ছে। 

২। হংসঃ শুচিসৎ বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ অতিথি দুরোণসৎ নৃসৎ বরসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্জা গোজা ঋতজা অদ্রিজা ঋতং বৃহৎ ——এই মন্ত্রটি কঠোপনিষদে (কঠোপনিষ মন্ত্র ২।২।২) এবং ঋক্‌ বেদে (ঋক্‌ বেদ মন্ত্র ৪।৪০।৫।) উক্ত হয়েছে। এইটি প্রাণ প্রতিষ্ঠার মন্ত্রের অন্তর্গত।

৩। গোজা——গো+ জা।গোবা ইন্দ্রিয় সকল যাঁর থেকে জন্মায়।গো' অর্থে ইন্দ্রিয়, যারা বা যাদের সাথে আমার বিচরণ করি বা কর্ম্মময় হই এবং সচেতন থাকি বা পুষ্ট হই। গম্‌ ধাতুর অর্থ গমন বা বিচরণ করে এবংগোশব্দটি গম্‌ ধতু থেকে হয়েছে। 

৪।"চোখ দুটাকে যদি কিছুদিন ন্যাকরা দিয়ে বেঁধে রাখিস, তার পরে তাকে খুললে, আর দেখতে পাবি না।  দেখতে না পারার অর্থ বাঁধন খোলার পড় দেখতে অসুবিধা হওয়া, ম্লান দৃষ্টি অনুভব করা ইত্যাদি। শিশুদের চোখ অনেকদিন আবরণ বদ্ধ থাকলে, দর্শন ক্ষমতার মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।  কর্ম্মানুবর্ত্তনে শরীরে যে পরিবর্ত্তন হয় সেই প্রসঙ্গে এই উক্তি। আধুনিক বিজ্ঞান- এই বিষয়ে এখন অনেকটা অভিজ্ঞ। 

৫।এই ব্যোমকে দেবতাময় দেখলে তবেই ব্যোম দেখবি, নয় তো সে শূন্য।এই প্রসঙ্গে শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ্‌ মন্ত্র 'ঋচো অক্ষরে পরমে ব্যোমন্‌ যস্মিন্দেবা অধিবিশ্বে নিষেদুঃ ……ঋক্‌ মন্ত্র সকল, পরম ব্যোমে, অক্ষরে, যাঁতে বিশ্বের দেবগণ নিহিত, তাঁতে.....  ' মন্ত্র . দ্রষ্টব্য। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৪।৩ দ্রষ্টব্য——তস্মাৎ অয়ম্‌ আকাশঃ স্ত্রিয়া পূর্য্যতে——সেই জন্য এই আকাশ স্ত্রীর দ্বারা পূর্ণ। ] 


১। "পদতলে শূলোদ্ভিন্ন মহিষাসুর, মা সোম পান করছে, সোমরস বার করছে"---- গর্জ্জ গর্জ্জ ক্ষণং মূঢ় যাবৎ মধু পিবাম্যহম্‌——হে মূঢ় তুমি ততক্ষণ গর্জ্জন কর, যত ক্ষণ আমি মধু (সোম) পান করছি-----শ্রী শ্রী চণ্ডী, তৃতীয় অধ্যায়, ৩৮ মন্ত্র দ্রষ্টব্য। 

মহিষাসুর——এই যে মহাপ্রাণ থেকে আমরা নিজেকে এবং বিশ্বকে খণ্ডিত, বা  পৃথক্‌ বলে জানছি, এইটি আমাদের মহিষত্ব বা খণ্ডিত (‘’) মহিমা (মহি) অসুর অর্থে অসু বা প্রাণের রঞ্জনা। যে মহাপ্রাণ থেকে অনবরত শব্দ, স্পর্শ ইত্যাদি রূপে আগত বেদন কে  অনুভূতি বা সোমরূপে  ভোগ করছি, প্রাণের বহিঃ প্রভাব বা প্রভর দ্বারা আমরা বহির্মুখী হয়ে রয়েছি বলে, যেখান বা যাঁর থেকে সোমের প্লাবন আসছে, তাঁকে দেখি না; এইটি অসুরত্ব। এই যে অসুর হয়ে সোমপান, এর নামকুবিৎ সোম আর অসুর নিধনের পর যে সোম তাসুনবাম সোমবানবমীর সোম’, যার কথা নবমী পূজায় বলা হয়েছে। আর যে প্রাণের বা সোমের প্লাবনে, মহাপ্রাণের নিয়ন্ত্রণে, আমরা অসৎ থেকে সৎএ , তম থেকে জ্যোতিতে, মৃত্যু থেকে অমৃতে চলেছি, প্রবাহিত হচ্ছি, তার নামপবমান সোম’ (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।১৩।২৮ দ্রষ্টব্য।  সোম তিন প্রকার----- কুবিৎ সোম, পবমান সোম, সুনবাম সোম।


২। দুর্গে, সৌম্যে, সোমদা, সোমরূপা, অতিসৌম্যা, সোমপান কর—— সৌম্যা সৌম্যতরাশেষ সৌমেভ্যস্ত্বতি সুন্দরী। পরা পরাণাং পরমা ত্বমেব পরমেশ্বরী।।———শ্রী শ্রী চণ্ডী, প্রথম অধ্যায়, ৮১ মন্ত্র দ্রষ্টব্য। 


৪।সর্ব্বৌষধি মন্থছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৫।২।৪ এবং পরবর্ত্তী মন্ত্রগুলি দ্রষ্টব্য।


৫। হে আমার অতিথি ! শুনেছি সব একসঙ্গে না হলে তুমি খাও না; গোটাটা তাল পাকিয়ে না দিলে, একটু আধটু দিলে খাও না।” ------বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌, মন্ত্র ৩।৯। দ্রষ্টব্য। যিনি সবটা তাল পাকিয়ে খান তিনিআদিত্য'  আদিত্য——তে যৎ ইদম্‌ সর্ব্বম্‌ আদদনা যন্তি তস্মাৎ আদিত্যাঃ ইতি——যেহেতু তাঁরা (দ্বাদশ আদিত্যগণ) নিজেতে সবাইকে গ্রহণ করে (আদদনা) গমন করেন তাই তাঁরা আদিত্য।আদিত্য শব্দটিঅদ্‌অর্থাৎখাওয়া' এবংঅদিতি' ( যাঁতে দ্বিতীয়তা নেই), এই দুইটি শব্দের সাথে যুক্ত। মহাপ্রাণ বা মহাকাল আদিত্যরূপে আমাদের সকলকে, আমাদের সমগ্রত্ব নিয়ে নিজেতে ফিরে চলেছেন। এইজন্য ইনি অদিতি এবং অমা। 


৬। 'আমার প্রাণ এই বদ্ধ মুষ্ঠিতে, আমার আত্মবোধকে, নিজেকে এই মুষ্টিতে বদ্ধ করলাম’—এই প্রসঙ্গে ঐতরেয় ব্রাহ্মণের, সোমযাগ অনুষ্ঠান থেকে একটি অংশ উদ্ধৃত করলাম——" [ যজমান] দুই হস্ত মুষ্টিবদ্ধ করিবে। গর্ভ মুষ্টি করিয়া অভ্যন্তরে শয়ান থাকে; কুমার ( নব প্রসূত শিশু ) মুষ্টি করিয়া জন্ম গ্রহণ করে; অতএব এই যে ( যজমান ) মুষ্টি করিবে, ইহাতে যজ্ঞকে সকল দেবতাকে মুষ্টিমধ্যে ধরা হয়।  (শ্রী রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী প্রণীত ঐতরেয় ব্রাহ্মণ, প্রথম পঞ্চিকা, তৃতীয় খণ্ড থেকে উদ্ধৃত।) সুতরাং মুষ্টির 

 দ্বারা 'অমা'কেই উদ্দেশ্য করা হয়।


৭। "ফুলকে প্রতীক করে মাকে মদ খাওয়াচ্ছিস, নিজে মদ খাচ্ছিস।বীর হয়ে বস, বীরাসনে বস। যে রসের একটুখানি নিয়ে, একটা যাকে তাকে পেয়ে, স্ত্রী বলে, পুত্র বলে এমন পাগল হয়ে যাচ্ছিস যে, তাদের জন্য অকাতরে মরে যাতে পারিস। যে মধুর, যে সোমের একটুখানি স্বাদ এমন নেশা এনে দেয়, সেই সোমে এই বোতল ভরা। তোরা মাতোয়ারা হয়ে যা।

এই সোম খেয়ে কি এমন ভদ্রলোক হয়ে বসে থাকা যায় ?” ———"ততঃ ক্রুদ্ধা জগন্মাতা চণ্ডিকা পানোত্তমম্‌। পপৌ পুনঃ পুনশ্চৈব জাহাসা অরুণলোচনা"——অনন্তর ক্রুদ্ধা ( চিৎ-উদ্বেলিতা ) জগন্মাতা চণ্ডিকা উত্তম পানীয় পুনঃ পুনঃ পান করতে করতে অরুণলোচনা ( আরক্তিম নয়না ) হয়ে হাস্য করলেন। (শ্রী শ্রী চণ্ডী মধ্যমচরিত, তৃতীয় অধ্যায়, ৩৪ মন্ত্র।

                                    

                                         নবমী পূজা।


১২ আশ্বিন ১৩৪৮, ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৪১, সোমবার, সকাল .১০ মিনিটে আরম্ভ।

ওঁ হ্রীং। ওঁ হ্রীং। ওঁ হ্রীং। ওঁ হ্রীং। (বহুবার।) ওঁ হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।এতে গন্ধপুষ্পে গণেশাদি দেবেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ দেবীভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সূর্য্যাদি নবগ্রহেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নমো নারায়ণায়। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নমো শ্রীগুরবেঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ নমঃ শিবায়। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্ব্বেভ্যো দেবেভ্যো নমঃ। দেবগণকে অবলম্বন করে পুষ্প দাও। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ সর্ব্বাভ্যো দেবীভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ ঋষিভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ বেদেভ্যো নমঃ। এতে গন্ধপুষ্পে তস্মৈ নমঃ, যোয়ং আত্মা। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা ইমাঃ সর্ব্বদেবতাঃ। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা শ্রীসম্ভূতিঃ। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যঃ স্বয়ম্ভূঃ। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যঃ সর্ব্বানুভূঃ। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা দুর্গা। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাম্‌। সকল কর্ম্মের অথবা সকল যজ্ঞের ভূমি হল বোধপ্রকাশ বা আত্মপ্রকাশ। এই হল যজ্ঞের ভূমি। এই ভূমির নাম দেবভূমি। হল যজ্ঞেশ্বরীর চেহারা। এই ভূমি দর্শনময় হলে সমস্ত কর্ম্ম যজ্ঞ হয়ে যায়। সুতরাং যজ্ঞের এই প্রথম চেহারার যিনি উপকরণ, সেই মাকে পুষ্পাঞ্জলি দাও। এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাং। হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। যা চিকীতুষী জাতবেদা——আপনি আপনাকে জানছেন আর দাঁড়িয়ে রয়েছেন, এমন মাকে তোমরা দাঁড় করিয়েছ এবং পূজা করছ। 'আমি দাঁড়িয়েছি', এই জানছেন ? হ্রীং চিকীতুষী দুর্গায়ৈ নমঃ। মা  দাঁড়িয়ে রয়েছেন ? মা আপনাকে জানছেন এবং আমাদেরও জানছেন ? যিনি এইরূপে যজ্ঞে উপস্থিত রয়েছেন, এই যজ্ঞের ভূমি হয়েছেন, আপনাকে জানছেন, আমাদেরও জানছেন-----এতে গন্ধপুষ্পে তস্যৈ নমঃ, যা চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাং‌। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যা চিকীতুষী প্রথমা যজ্ঞিয়ানাং‌ তস্যৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা ( বহুবার ) অগ্নি যেমন দিগদিগন্তে শিখা বিস্তার করেন, সেই রকমে যে দুর্গা এই যজ্ঞে আবির্ভূত হয়ে সোমপায়িনী হয়েছেন, সেই দুর্গাতে প্রণত হচ্ছি (প্রণাম) সজারু যখন একস্থান থেকে আর একস্থানে যায়, তখন তার গায়ের কাঁটাগুলি যেমন সোজা হয়ে দাঁড়ায়, তেমনি যে মা শরীরে অনন্ত শক্তি বিস্তার করে, আমার রক্ষার জন্য নানা অস্ত্রশস্ত্র ধারণ করে আছেন, সেই দুর্গাতে আমি অক্ষত রয়েছি। আমি সেই দুর্গাকে প্রণাম করছি, যিনি এই সম্ভূতি মূর্ত্তিতে আমার সামনে নিরীহ ভাবে অবস্থান করেও, আমার এই মণ্ডলীর সমস্তকে চেতনাবান্‌ করেছেন। এই নিরীহ মাকে পূজা করছি, যিনি সমস্তের আশ্রয়, সকল শক্তির হৃদয় হলেও, অন্তরে বাইরে স্থির শান্তরূপে অবস্থিত, হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যিনি সকল দেবতা, সকল শক্তি প্রকাশ করেও, সকলকে বুকে ধরেও, সবার আশ্রয় হয়েও, সকলের অবিদিত, আমি সেই দুর্গার পূজা করছি। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। সূর্য্যকে যেমন হাত বাড়িয়ে পাওয়া যায় না, তার রশ্মির দ্বারা আমরা তাতে সংযুক্ত রয়েছি, তেমনি যে মা প্রাপ্তির বাইরে হলেও, আমি তাতে যুক্ত রয়েছি, সেই হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। সেই মাকে আমি দুর্গা বলে আবাহন করছি, যে মা পূর্ণা, সমস্ত রশ্মিতে পূর্ণা, তাঁকেই হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। কোন বস্তুর তেজঃস্বরূপতা, যার ভিতর সবকিছু বীজ অবস্থায় থাকে এবং যখন তা অঙ্কুরিত হয়ে ফল অবস্থা প্রাপ্ত হয়, সেই মহিমাই যখন আমাদের কাছে বিশিষ্ট ভাবে আদৃত হয়, তেমনি সেই অনির্ব্বচনীয়া, চির অবিদিতা হলেও বিদিতা, সেই দুর্গা এই ভূতিমূর্ত্তিতে আমাদের কাছে আবির্ভূতা হয়েছেন। সেই মূর্ত্তির আমরা পূজা করছি, হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। হ্রীং জাতবেদায়ৈ দুর্গায়ৈ স্বাহা। তুমি যখন কোন ভাষা উচ্চারণ করে কারও সঙ্গে কথা কও, সে কথা তাকে কতটা প্লাবিত করলে, তা না দেখলেও নিজে যেমন তার দ্বারা পরিপ্লুত এবং কি বলছ, তা জান, তার দ্বারা পরিপূর্ণ হও, তেমনি এই মাকে 'দুর্গা' বলে তুমি পরিপ্লুত হচ্ছ। এই বলায় তোমার কতটা সার্থকতা এল তা বুঝে নাও, এবং সেই মাপে বুঝে নাও---- তুমি কতটা বলেছ। এই যে 'দুর্গায়ৈ স্বাহাবলছ,এতে তোমার হাত পা, চোখ মুখ, সবাই তোমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিনা দর্শন কর। দেখ, তোমার সকল বোধবৃত্তি তোমাময় হয়ে রয়েছে। যারা তোমার সাথে সংযুক্ত হয়ে রয়েছে, তারা সবাই দুর্গা বলছে কিনা, দেখ। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তোমার দুর্গা বলার সঙ্গে সব ইন্দ্রিয়েরা যোগ দিচ্ছে ? হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যজুর্ব্বেদের পন্থা হল এই ইন্দ্রিয়সকল।এরা গিয়ে যেখানে মিশেছে, তার নাম প্রাণ। তোমার ইন্দ্রিয়েরা যদি দুর্গায় গিয়ে মিলে থাকে তো সেখানে প্রাণ ফুটবে। তা ফুটেছে কিনা দেখ। প্রাণ প্রজ্বলিত হচ্ছে ? নীরব নিথরে পূজা করছ, আমাকে ঠকাবে কি ? ভাল করে দেখ, তোমার যে 'দুর্গা' শব্দ উচ্চারিত হচ্ছে, তাতে চোখ মিশছে কিনা। চোখ মানে সব ইন্দ্রিয়েরা যেখানে একত্র হয়, একত্র হয়ে প্রাণ তৈরি করে। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যে বাক্‌জাল তুমি উচ্চারণ কর, তা যদি বেদময় হয়, তবে তার নাম হয় ঋক্‌। যে বাক্য উচ্চারণ করছ, তা বেদময় হয়ে উচ্চারণ করলে, তার নাম হয় ঋগ্বেদ। যেমন তোমরা অঙ্ক কষতে গিয়ে Problem ধরে নাও, মনে কর হয়, ধরে নাও ইত্যাদি, তেমনি মনে কর, এই আমার দুর্গা, এটাও ধরে নাও।যদি ঠিক কষা হয়, তবে X ঠিক উত্তর আনে। তেমনি এই ধরে নেওয়া X দুর্গা, ঠিক ফল দেবে ? গাছ দেখে যেমন গাছ বলে উঠলি, তেমনি একে দেখে বললিদুর্গা। ঋক্‌ কোথা থেকে বেরোল ? দুর্গা থেকে। যজুঃ হল কি দিয়ে ? ইন্দ্রিয় দিয়ে আত্মার সংঙ্গে যে সংযোগ করে দেয়। যে তুই' য়ে যোগ করলি, দুংয়ে সে প্রবাহিত হল। আর মধু ফিরে এল কোথায় ? হৃদয়ে। এখানে তার নাম হলসাম' এমনি ভাবে বেদ উদ্ধার করতে হবে, মন্ত্র বলতে হবে, তবেই দুর্গা প্রদীপ্ত হবে, প্রজ্বলিত হবে, প্রকটিত হবে। হ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ। প্রতিমায় মন্ত্র পাঠ কর। কাল যে গতি দেখিয়েছি, সেই গতিময় হ। ওঁ হংসঃ শুচিসৎ, বসুঃ অন্তরীক্ষসৎ, হোতা বেদীসৎ, অতিথিঃ দুরোণসৎ, নৃসৎ, বরসৎ, ঋতসৎ, ব্যোমসৎ, অব্জা, গোজা, ঋতজা, অদ্রিজা, ঋতং বৃহৎ। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তোর সমগ্র দিক্‌——দিক্‌ কাকে বলে ? যখন যে দিকে তোর বোধ চক্ষু প্রকাশ করিস, আত্মস্বরূপ তুই বোধচক্ষুময় হস্‌, তার নাম হয় পূর্ব্বদিক্‌। তোর আত্মচক্ষু যখন যে দিক্‌টিতে সংযুক্ত হলেন, তার নাম পূর্ব্বদিক্‌ এবং সেইটি অবলম্বনে করে  বাকী দিক্‌সকল কল্পিত হয়। এইরূপ ভাবে ভগবানের দিক্‌সকল হয়। তুই বসেছিস কোন্‌ মুখে? দুর্গা মুখে। দুর্গা হয়েছে তোর পূর্ব্বদিক্‌। নমস্তে! হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। কোন্‌ মুখে ফুল দিলি? দুর্গা মুখে ? এখনই দিলি, না সব সময় দিস ? যখন যে দিকে বাস করিস, তখন সে দিক হয় পূর্ব্বমুখ। এখন দুর্গা মুখে বসেছিস, তাই দুর্গা হয়েছে তোর পূর্ব্বমুখ। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। যখন জগতের দিকে, স্ত্রী পুত্রের দিকে বসিস, তখন তারা হয় পূর্ব্বদিক্‌। এইরূপে তিনি যখন পূর্ব্বদিক্‌ হন, তখন পশ্চিম দিকের নাম কি ? হৃদয়। এই গাছ যেখান থেকে উঠেছে, তার নাম পূর্ব্বদিক্‌।যেখানে অস্তমিত হয়, তার নাম পশ্চিমদিক্‌। গাছ অস্তমিত হয় পশ্চিমে। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঃ ! আকাশটা কেমন অগ্নিবর্ণ হল। সকালে সূর্য্য ওঠার আগে যেমন অরুণোদয় হয়, তেমনি দুর্গায় অরুণোদয় হচ্ছে ? অন্ধতমসাচ্ছন্ন নিশা ভেদ করে এই দিকে তোর প্রভাত হল ? এইরকমে প্রভাত এনে দেয় বলে এর নাম ঊষা, উষ্মা, মানে প্রাণ, ওষধি। হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তোমরা এত অর্ব্বাচীন হয়ে পড়ে আছ যে, তোমাদের শিখাব কোথা থেকে ?

ওঁ জটাজূটসমাযুক্তাং অর্দ্ধেন্দুকৃতশেখরাং। লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌। অতসীপুষ্পবর্ণাভাং সুপ্রতিষ্ঠাং সুলোচননাং।নবযৌবনসম্পন্নাং সর্ব্বাভরণভূষিতাং। সুচারুদশনাং দেবীং পীনোন্নত পয়োধরাং।ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানং মহিষাসুরমর্দ্দিনীং। মৃণালায়তসংস্পর্শ দশবাহুসমন্বিতাম্‌। মহাসিংহাসনাং দেবীং অঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। এখন একটা ঢেউ তুলে মন্ত্রগুলি চেঁচিয়ে বলতে পারলেই হল। বেশ মজায় আছি। মা বলছে —'কি বলছিলি আবার বল না কাছা ধরে টানছে। মহিষাসুরমর্দিনীংমহিষ না মরলে কিন্তু হবে না।এতে গন্ধপুষ্পে মহিষাসুরমর্দিনী নমঃ। কাকে বলে মহিষাসুর ? কাকে মারতে, কাকে বিদলিত করতে দুর্গাকে ডাকছিস ? জীবত্বকে। কেমন করে বিদলিত করবি ? কিসের বাহন পেলে তবে মায়ের অভ্যুদয় হয়। মা এমনি আসে না। সিংহ কই ? সেকি ডাকলেই অমনি ল্যাজ নাড়তে নাড়তে বেরিয়ে আসবে ? তোর হিংসাময় কর্ম্মকে যদি যজ্ঞে পরিণত করিস, তবেই সিংহ আসবে। নয় তো বন থেকে একটা সিংহ ধরে এনে বলবি কি যে, মা সিংহে চড়েছে ? কাকে সিংহ বলে ? যজ্ঞকে। তুই সঙ্কল্প করেছিস,——আমার যত কিছু ইন্দ্রিয়ের প্রকাশ, তা আমি জড়ো করেছি মা। তোমায় দিতে।সুতরাং তোর সিংহ এসেছে। সিংহ আসা মানেই সিংহবাহিনীর আসা। সিংহ আসা মানে---- মন, প্রাণ, ইন্দ্রিয় সব গিয়ে যাতে জড়ো হয় তার নাম সিংহবাহিনী মা। নমস্তে! তার নাম সিংহবাহিনী মা। হিংসাময় কর্ম্ম হয়ে গেল সিংহ, সে সেচনশীল, বর্ষণশীল হল। যা তা বর্ষণ নয়, প্রাণবর্ষণশীল হল, এবং তা ', তবে তো মহিষাসুর ', একই কথা হল তো। প্রাণবর্ষণশীল হল, আর আমি খাই, আমি করি, ইত্যাদি যে সব ক্ষুদ্র মহিমা, সে সব চলে গিয়ে, তখন দেখলি ——আমি আর ক্ষুদ্র নই, আমি অনন্ত, প্রাণবন্ত। ইচ্ছা করলে আমি সকল ইন্দ্রিয় দিগদিগন্তে বিস্তৃত করতে পারি, ইচ্ছা করলে আমি আত্মায় ফিরে আস্তে পারি। তখন আর মনে হল না যে, আমি ক্ষুদ্র। যে ছেঁড়া কাঁথা আর পুঁটলি বয়ে বেড়াচ্ছিল, সে হল সিংহবাহিনী। নমঃ সিংহবাহিনী মহিষমর্দ্দিনী নমঃ।এতে গন্ধপুষ্পে হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ নমঃ।মহিষমর্দ্দিনী নমঃ ( বহুবার ) এই 'লে তোদের মহিষ দলিত হচ্ছে ? কালকে তার মানে কি বলে দিয়েছি ? মহিষটা মরে গেল ? এখানে ভেজাল ঘি চলে না, সব অন্য জায়গায় চলে। ভাবের কথা এখানে চলবে না। তোর প্রতি অনুভূতিটা মহিষ, তুই জীব মহিষ। তোদের মধ্যে দুর্গা আছে বলছিস। তুই দুর্গা বললে, তোর যতটুকু অনুভূতি হল ততটুকু দুর্গা। হল খণ্ডিত মহিমা। কিন্তু যে দ্যু ভু ঘিরে আছে, তার অপূর্ব্ব  মহিমা। তোদের দুর্গা বলতেও সেই খণ্ডিত মহিমা, স্ত্রী, ছেলে বলতেও তাই। যখন কাউকে গালি দিচ্ছি, তখন পূর্ণচৈতন্যে পা থেকে মাথা পর্য্যন্ত গালাগালিতে ভরে গেছি। ওখানে ঠিক পূর্ণ মহিষমূর্ত্তি হয়েছে। কিন্তু দুর্গা হায় হায় যত বলি, সে আর ফোটে না। গুরু বললেন——দ্যু ভূ আয়তন, স্বর্গ থেকে মর্ত্ত্য পর্য্যন্ত ব্যেপে যিনি দাঁড়িয়েছেন, এই আমার দুর্গা। বল্‌ দুর্গা——দুর্গা ! [ সমবেত কণ্ঠে দুর্গা ] স্বর্গ থেকে ভূ পর্য্যন্ত যে ব্যেপে রয়েছে, সে দুর্গা। মনে হচ্ছে, সব হৃদয়ঙ্গম হল। বৎস, যতটুকু তোমার নিজে থেকে উঠেছে, ঐটুকু তোমার পূর্ব্বদিক্‌, দিকে দুর্গার উদয় হয়েছে। এই রকমে পূর্ব্বদিক্‌রূপে অনবরত এই মা তোমার কাছে মূর্ত্তি বৈচিত্র্য নিয়ে কখনও বিষয়, কখনও পুত্র, কখনও অন্নাদি সেজে ওঠে। যখন যেটা ওঠে, সেইটা হল পূর্ব্ব। এই রকম দিনের পর দিন, আমার স্ত্রী, আমার পুত্র, আমার কালী, আমার দুর্গা আধঘানা জেগে উঠেছে। এই যে আধঘানা, ১২ ঘণ্টা কাল এমনি ভাবে জেগে ওঠে। এই পূর্ব্বে সূর্য্য উদিত হল, আর পশ্চিমে হৃদয়ে অস্তমিত হল। এবার রাত্রি দেখ। রাত্রিতে, যেখানে তোমায় শুইয়ে দিয়েছে, আবার যেখান থেকে তোমায় বের করলে, ঐখানে তুমি বিবিক্তভুক্‌, স্বপ্ন দেখছ, ঠিক স্থূল ভোগের মত ভোগ এর ভিতরও চলতে লাগল। এইখানে ঘুম থেকে জেগেছ। থেকে জেগেছ, আর এইখানটায় সংযত হয়েছ, তোমায় টেনে নেওয়া হয়েছে। হল সন্ধির জায়গা। ওখানে তোমার ভোগ ডবল হয়েছে। ওখানে দিনের ভোগটাও আছে, ঘুমের ভোগটাও আছে। ভোগের অনুসরণে নিদ্রা হয়। বেশী মাথা খাটালে ঘুম হয় না। এখানকার ভোগটাও রয়েছে, ঘুমের ভোগও রয়েছে। ঘুম অন্ধকার এবং দিবা, অহঃ এবং রাত্রি, এই দুই। যখন পূর্ব্ব দিক্‌ জেগেছিল, তখন গোটা দিনময় জীবন, আর গোটা রাত্রিময় জীবন, দ্বিগুণ হয়ে তোমার সূর্য্য আত্মা, দক্ষিণে উদয় হচ্ছেন আর উত্তরে অস্তমিত হচ্ছেন। বুঝলে? এখানে ঘুম যমিত হয়েছে। আর স্বপ্নগুলি আসছে কোথা থেকে? যেখানে পোঁটলা পুঁটলি গুলি যমিত হয়েছে। Bolshevik রাজ্যের মত সবই State Property  পোঁটলা বেঁধে তুমি কোথায় যাচ্ছ? উত্তরে, মন্দারে, উত্তরকুরুবর্ষে, যেখানে দেবী আছেন। ঐখানকার পুঁটলির ঠেলা থেকে, এই দিনের খেলা খেলে দ্বিগুণ ভোগ হয়। আর দিনরাতময় গোটা জীবনের খেলা হৃদয়েই ফোটে হৃদয়েই অস্তমিত হয়। কেননা হৃদয়ের কাযই হল ঐ। সঙ্গে সঙ্গে এরই একটা Counterpart তুমি উত্তরে পাঠালে। জাগ্রতে বা স্বপ্নে যা যা করলে, তা ঈশ্বরক্ষেত্রে পাঠালে; এটা আবার ওর ডবল হল। অহোরাত্রময় জীবনখানা নিঃশেষে এখানে ফুরাচ্ছে না, তারি একটা ঠিক অনুকরণ, counterpart, তোমার পরজন্মের জন্য উত্তরে চলে যাচ্ছে। বলেছি হৃদয় হল পশ্চিম দিক্‌। পশ্চিমের সূর্য্য, যে উত্তরে অস্তমিত হয়, সেই সূর্য্য আবার দ্বিগুণকাল প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকে। এই হৃদয়খানার নাম হল বরুণলোক। তারপরে সূর্য্য উদিত হচ্ছেন উত্তরে। ওঁর নাম ভগবতী। সেইখান থেকে তুমি অনবরত যাতায়াত করছ। সবটা নিয়ে ? একদিকে চৈতন্যময়ীতে চির-সংশ্লিষ্ট, স্থির ভগবৎবুকে অবস্থিত আছ, আর এদিকে যত ঢলাঢলি করছ। সুতরাং তার দ্বিগুণকাল সূর্য্য উত্তরে উদিত হয় এবং দক্ষিণে অস্তমিত হয়। একাংশে তুমি দুর্গায় লেগে আছ। ভেবো না যে মা বললে— ‘যা বেটা, এই সব নিয়ে এসেছিলি, বেরো।মা যখন ছেলেকে স্কুলে পাঠায়, তখন তার একটা  counterpart বুকে থাকে না ? চারটা বাজল, সারে চারটা বাজল, যতক্ষণ না ছেলে ফিরছে, ততক্ষণ  মা নিশ্চিন্ত নয়। ছেলেকে যদি দ্বীপান্তরে দিত, তবে এরকম হত কি ? ছেলেকে পাঠিয়েছে বিশ্বকর্ম্মময় অংশে, আর আত্মময় অংশে দুর্গা তাকে নিজেতে রেখেছে। আচ্ছা, যে চালাক, এই পর্য্যন্ত যে দেখতে পেয়েছে, উত্তরকুরুবর্ষে সে বলবে— ‘আমায় কাযকর্ম্ম করতে হয় তো এইখানেই করব। আমায় খাটতে হবে ? আচ্ছা, আমি তোমারই পা টিপব’, ইত্যাদি। এর নাম সুর্য্যের উত্তরে উদয় এবং দ্বিগুণকাল দক্ষিণে অস্তমিত। তারও উপরে তুই সূর্য্য হয়ে যাস, তখন কে অস্ত যাবে,

 কে উদয় হবে ? এই রহস্য যে গুরুর কাছ থেকে শিখে নেবে, তার নাম হবে ব্রহ্মবিৎ। এর নীচে ব্রহ্মবিৎ হবে না। দেবি ! যেখানে তুমি ঊর্দ্ধে উদিত হও, আর অধে অস্তমিত হও, আমাকে অন্ততঃ এই মুহূর্ত্তের জন্য সেখানে বসাও। যেখানে ঊর্দ্ধে উদিত হও, অধে অস্তমিত হও, এই যজ্ঞ করবার জন্য অন্ততঃ এখন আমায় সেখানে সন্নিবিষ্ট রাখ। (১০।৩৫ মিনিটে প্রথম পর্ব্ব সমাপ্ত।)

                              ১১।।০ টায় দ্বিতীয় পর্ব্ব আরম্ভ।

আমি সেই মাকে পূজা করছি, যে মা আমার চোখে ঠেকেছে, যে মা আমার প্রতি ইন্দ্রিয়ের ডগে ডগে ফুটেছে। সেই মাকে আমি পূজা করছি, যে মা ইন্দ্রিয়রূপ অশ্ব যোজনা করে ছুটে বেরিয়ে গেছে, এক এক মূর্ত্তিতে, এক এক লোক জয় করে জয়ন্তীর বেশে চলেছে। কোন দিক্‌ জয় করছে ? পুত্র, পিতা, মাটি, জল——বল্‌ না রে ! আমার পদাশ্রিত বলে পরিচয় দিবি কি করে ? ইন্দ্রিয় এই চিন্ময়ী মূর্ত্তিকে ধরেছে ? কোনও দিকে জয় করেছে স্ত্রীরাশি, পুরুষরাশি, কোন দিকে প্রতিমা, দুর্গা। তোকে বিজয় দিতে মা আমার এই মূর্ত্তিতে রণরঙ্গিণী বেশে আবির্ভূতা। কি চাস ? কেমন করে চাইবি ? তুই ভিখারিকারও বাড়ীতে গিয়ে বলতে পারিস ——‘ হাতী দাও’---যদি না জানিস যে সে রাজরাজেশ্বর ? এই বিজয়িনী মাকে দেখ। 'কি চাস বৎস! বল্‌। এখনই আসি অশ্বারোহণে ছুটে গিয়ে, জয় করে সেই জিনিষ তোকে দেব। কি চাস বল্‌ ?’ এই মূর্ত্তি বিজয়িনী। অশ্ব না হলে বিজয় হয় না। রাজাদের গল্প শুনেছিস তো? এক একটা অশ্ব ছেড়ে দেয় , আবার তাকে ফিরিয়ে এনে তবে যজ্ঞ সম্পন্ন হয়। তোর যদি এই বিজয়ী অশ্ব না থাকে তো তুই কি পাবি ? তোর বিজয়িনী কই, জয়ন্তী কই।মা ! [উচ্চ মাতৃধ্বনি] ভয় কি বৎস ! ভয় কি ! তোর ইন্দ্রিয়সকল অশ্ব হয়ে ছুটুক; মন, কামনা, বাক্‌ অশ্ব হয়ে ছুটুক। আমি নিয়ন্ত্রিণী, অশ্ব অশ্বে আরূঢ়া, আমি জয়ন্তী দুর্গা মা তোর। ভয় পাসনি। সরিয়ে দে সেই যুগকে যে যুগে ভগবান্‌কে চোখবুজে দেখতে হয়। যে যুগে চোখে, নাকে, সবতাতে ভগবান্, এই যুগে চলে আয়। বলে দিয়েছি তো খালি শলাকার কায করে। আত্মজ্ঞান, আত্মজ্ঞান। যে আত্মা ফুল লেগে, ফল লেগে ভিরমি খায়, আমি আত্মার উপাসনা করি না। এমন আত্মা যে, ফুল গায়ে লাগল তো ভিরমি গেল। ওকে আমি আত্মা বলে পূজা করব না। তুই চোখ বুজে কি করবি ? আমি সেই আত্মার উপাসনা করি, যে আত্মা জয়ন্তীবেশে অশ্বে অশ্বে আরূঢ়া, নিত্য রণরঙ্গিণী। কেন ? ‘ মা আমার মাটি চাই আচ্ছা। মা অমনি মাটি হল। সে মাটি কি হবে ? আত্মময় হয়ে যাবে। নিজেই মাটি।মা ! আমার সূর্য্যখানা চাই।’ ‘ আচ্ছা। যে আচ্ছা বলে দাঁড়াচ্ছেন, ওর নাম অসুর বধ। দ্বিতীয়ত্ব চলে গেলনিজেই সূর্য্য।মা আমার ব্রহ্মাকে চাই। এই এনেছিধর্‌। মা নিজে ব্রহ্মা। নমস্তে !  নমস্তে ! এমন কেউ কি আছিস,‌ যে ধরতে পারিস নি ? আবার বলতে হবে কি ? দিগ্‌দিগন্তে তোদের ঘোড়া ছুটছে ? গুরুঠাকুর বললেসংযত , সংযত হ।আর এক উদ্ভট গুরু এসেছে, বলছে, ‘দে খুলে তোদের আস্তাবল, যত সব   ঘোড়া বেরিয়ে পড়ুক। গোশালা, অশ্বশালা, হস্তিশালা, সব খুলে দে, ছুটিয়ে দে। আমি তাইতে রণরঙ্গিণী বেশে চড়েছি। যা চাইবি তাই এসে হাজির হবে।দেবি আমার ! আয়, আয়, আয়। কাল রাত্রে বলেছি, মাথা ঘামানোর দিকে পথ নয়। আমার সঙ্গে ছুটতে হবে,তাতে কাপড় খুলে পড়ে পড়ুক। ভাবতে বসেছিস মানে বুঝতে বসেছিস; তাতে পড়ে থাকাই হয়। আমার নয়নের দুলাল ! তোকে সব  দিতে আমি দিগ্‌দিগন্তে ছুটেছি। তোতে আমাতে ভেদ নেই। এমনি করে আদর দ্বিগুণিত পরিক্রমা তোকে দেখিয়ে দিলুম। যুগপৎ সবটা প্রকাশ হওয়া চাই। যত বড় পরিক্রমার কথা দেখিয়ে দিলুম—— অহঃ, অহোরাত্র, হৃদয়, সোমপুরী, সাধ্য লোক, যে পরিক্রমা দেখালুম, একসাথে চাই। চেঁচালে কি করব ? তুই অহোময়, অহোরাত্রময়, মৃত্যুজন্মময় শুধু তা নয়, ভগবতীময়। শুধু তা নয়, সাক্ষাৎ ভগবতী, আমার দেবী, মা। আমার সঙ্গে চলেছিস ? এমনই যে সূর্য্য তুই। এই যে তুই আদিত্য, ঊর্দ্ধে অধেঃ, উত্তরে দক্ষিণে, পূর্ব্বে পশ্চিমে জ্বলে আছিস। আবার তুই উদয়াস্তময় হচ্ছিস, আমার নয়নের দুলাল, আনন্দময়ীর সন্তান ! বল আনন্দময়ী। আনন্দময়ী মা ! কোথায়, কোন্‌ দেশে, তোর কোন্‌ ঘোড়া ছুটেছে, যাতে আরোহিণী বেশে তুই নেই ? যার গলায় স্ত্রী পুত্র ইত্যাদি টাঙ্গিয়েছিস, আর ছুটিয়ে ছুটিয়ে চলেছিস, খালি ঘোড়াটার দিকে চেয়ে বসে আছিস কেন ? কত অশ্বে তুই আরোহী হয়েছিস, প্রাণ তোর অনন্তে অনন্তে চলেছে। বল দুর্গা। ওঁ ইদং পাদ্যং হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ইদং অর্ঘ্যং হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ইদং আচমনীয়ং হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। বেলা হয়ে গেছে, মাকে অভিস্নাতা কর। মাকে স্নান করাও। হ্রীং শ্রীংআগুন যেমন অরণির বুকে জ্বলতে থাকে, কাঠের উপর শায়িত থেকে শিখারাশি উত্তলিত করে,  তেমনি যে মা আমায় শায়িত রেখে, আমার বুকের উপর দুর্গারূপে জ্বলছে, এমন আগুন যে এতে জল দিলে আগুন নেবে না, ঘৃতাহুতির মত জ্বলে ওঠে। আগুনের তাপ নেই, কোটিচন্দ্রসমশীতল, অথচ কোটি সূর্য্যের মত প্রভব। তোর জল, জল নয়; তোর জল সোমধারা। সোম কেমন করে হয়েছে, বল্‌ না রে। তোর হাতের জল কেমন করে সোম হল, আমায় বল্‌ তো ? হে গুরু, দ্যুলোকের যে আদিত্য, তা থেকে সোমধারা নির্ঝরিত হয়ে বসু ক্ষেত্রে পড়েছে। সেখানে পৃথ্বীক্ষেত্রে পড়ে উদ্দীপ্ত হয়েছে। তাতে বেঁচে উঠেছিস, জন্মেছিস—— তুই, আমি, মাটি, ওষধি সব। পৃথিবীর বুকের ভিতর যে আগুন, তা হয়েছে জলগর্ভ বাড়বানল, তাই হয়েছে সোম। তোর বুকের আগুন তোকে নানা রসময় করেছে। তুই যে জ্বলছিস, জ্বলে কি ঘড়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছিস, না পুত্র  'লে, টাকা 'লে, সুখ 'লে একটা রসের প্লাবনে ভর্ত্তি হয়ে রয়েছিস। অনুভূতির ভিতর দিয়ে যে তেজ চলে, গাছের ভিতরে যে তেজ, যে রসময় তেজ বীজের আকারে উদ্গত হয়, শস্যের আকারে ফুটে ওঠে, সেই সোম আমি হাতে নিয়েছি। এই জলে আমি নিজে দুর্গা বলে ছুটেছি। সুতরাং বারি আমার সোম। সোমস্রাবে অগ্নিবর্ণা মা আমার শীতলা হবে। ওঁ সৌম্যে, সোমবল্লভে, গৃহাং সোমং সুন্দরি, গৃহে বিজয়িনী ভব। হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ইদং সোমপূর্ণদ্রোণং সোমবল্লভায়ৈ জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ হ্রীং বসু-রুদ্র-আদিত্যাশ্চ মরুতঃ সাধ্য দেবতাঃ। সর্ব্বে সুমনসো ভূত্বা ভৃঙ্গারৈঃ স্নাপয়ন্তু তে। হ্রীং শ্রীং সোমবল্লভায়ৈ জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ গো-অশ্ব-বৃষ-হস্তিষু পরিক্রমণং করোতি যা। তস্যৈ জয়ন্তী দুর্গায়ৈ ইদং সোমং প্রতিগচ্ছতু স্বাহা। যে মা আমার ঘোড়ায় চড়ে, হাতিতে চড়ে, দিগ্‌দিগন্তে জয়ে ব্যাপৃত, সেই মায়ের জয়োল্লাসের জন্য তাকে আমি সোমপান করাচ্ছি। সে আমার ঋক্‌কে ঋজু করুক, দুর্গা করুক। হ্রীং সোমবল্লভায়ৈ জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। দিগ্‌দিগন্তে জয়ধ্বনি হচ্ছে, শঙ্খ বাজছে, সুতরাং কাম্পিল্যবাসিনী মা নিশ্চয় এসেছে। দে, দে, জানিস বা না জানিস, দুর্গার বুকে এক হাত বাড়িয়ে দে----- হ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। তবে প্রজ্ঞাক্ষেত্রে দুর্গা যদি এখনও ঝাপসা থাকে, তবে দেখবার চেষ্টা করবি না। তোর নিজের ভিতর যে ছিদ্র আছে, সুড়ঙ্গ দিয়ে জল ঢেলে দে, সে জল দুর্গায় চলে যাবে। হ্রীংমা নাইছে ? আরও দে রে ! মাকে জলে ঢেকে দে। মাকে সোমে যত ঢাকা দিবি, তত ওর জ্যোতি বাড়বে। তখন মাকে দেখতে পাবি। হ্রীং সোমবল্লভায়ৈ স্বাহা। যখন বিন্দু বিন্দু জলবর্ষণ হয়, তাতে যেমন সূর্য্যরশ্মি প্রদীপ্ত হয়ে ইন্দ্রধনু রচনা করে, তেমনি তোদের এই জলবর্ষণে মা ইন্দ্রিয়রূপী হয়ে তোদের জয় দেবে। হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। দুর্গায়াং তুষ্টায়াং সর্ব্বে তুষ্টাঃ। জয় দুর্গা ! জয় দুর্গা ! তোরা যে যার নিজের মাথায় জল ঢাল। ( ১১.৩৫ মিনিটে স্নান সমাপ্ত )


              

                            ১২।৬ মিনিটে তৃতীয় পর্ব্ব আরম্ভ।


ওঁ হ্রীং জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী। দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তুতে।। ওঁ হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা।পাদ্যং হ্রীং শ্রীং জয়ন্তী দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। আস্তে আস্তে, ভাবের উচ্ছ্বাসে নয়, সমস্ত ইন্দ্রিয়াদি ঐখানে দাও। কিসে ? দুর্গায়। জলের উপর তেল ঢাললে, সে যেমন জলে প্রসর্পিত হয়ে যায়, তেমনি আত্মবিন্দুকে দুর্গায় প্রসর্পিত কর, দুর্গার হাতে, পায়ে, বুকে, মাথায় তাকে ছড়িয়ে দাও। তোরা পাথরের মত বসে থাকিস না, বীরাসনে বস্‌। আমার কাছে যাত্রা শুনতে আসিস কেন ? নিজেদের তেজোময় জেনে জ্ঞানে বিচরণ নেই, চলবার কোন ভঙ্গিমা নেই। এখানে ফাকিজুকি চলে না, মেকী টাকা চলে না।মরি আর বাচি, জীবনটা আজকে  দুর্গাকে দিয়ে দেব’ , এইরকম জ্ঞান না নিয়ে, এখানে কেন ঢুকিস ? মায়ের অপূর্ব্ব রহস্য, সনাতন বিজ্ঞান——জ্ঞান বের করে তোদের দিচ্ছি, এর কোন মর্যাদা নেই ? তুই চা এই মা তোর সাথে কথা ন। যে পুঁজি নিয়ে তুই বসেছিস,   পুঁজিতে তা হবে ? দে, তোদের যা কিছু আছে, আমাকে দে। তুই কেমন করে দিবি ? যে পরমবোধস্বরূপ ব্যাপ্তি, তাকে কি তুই আত্মায় সম্বেষ্টিত করে রেখেছিস ? তোর গাময় কি চটচট করছে ? কি লেগেছে গায়ে দেখ্‌ না। ছেলেটা, বিষয়টা, গাময় চটচট করছে। আঠা দেখতে পাচ্ছিস ? দুর্গাকে দেখতে হলে আঠা ছাড়াতে হবে, যা তোর গাময় লেপ্টে আছে। জলের উপর তেল ঢেলে দিলে সে যেমন ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি তুই নিজে——নিজবোধস্বরূপটা, বাঁশতলায় নিয়ে যাবার নিজেটা নয়, সেই নিজেটাকে আত্মানং নিবেদয়ামি স্বাহা। মায়ের এই হাতে, এই পায়ে, এই চোখে, এই নাকে, আহাহা ! তোর গাময় দুর্গা লেগে গেছে ? হাতে, পায়ে, চোখে, মুখে লেগে গেছে ? আত্মানং নিবেদয়ামি স্বাহা। হ্রীং শ্রীং আত্মানং দুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ইদং আত্মময়ং পাদ্যং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। কি দেবি ! তুমি কেমন করে আমার অঙ্গপ্রত্যঙ্গে, কেমন করে এই দুর্ভেদ্য অচেতন-ব্যবধানের  বৈতণী পার হয়ে, আমার অঙ্গে অঙ্গ দিয়ে দাঁড়ালে ? দুর্গা ! দুর্গা ! কি রে। আমার হাত পা সমস্ত দুর্গা হয়ে গেছে। দেবি ! তুমি মৃণ্ময়, অতসীবর্ণ, নবযৌবনসম্পন্ন রূপ ধরে রয়েছ; দেখতে পাচ্ছি তুমি আমার ওপারে রয়েছ। তুমি কেমন করে আমাকে দুর্গা করে তুললে, কি করে এই দুর্গম বৈতণী পার হলে ? দুর্গাকে তোর গায়ে দেখতে পারছিস ? কেমন করে দুর্গা এল ? যেখানে যাবি, সেখানে আত্মবিতরণ করবি। তাতে যা পেতে চাস, তাই হবি। এইরূপ বিতরণের সাহায্যে এক ক্ষেত্র থেকে অন্য ক্ষেত্রে যেতে হয়। হ্রীং শ্রীং আত্মানং দুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ইদং আত্মময়ং পাদ্যং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ইদং আত্মময়ং অর্ঘ্যং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ইদং আত্মময়ং স্নায়ীয়ং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ইদং আত্মময়ং বস্ত্রং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। কি আশ্চর্য্য ! কি অপূর্ব্ব ! মানুষ যে কাপড় পরে, তাতে মানুষ ঢাকা পড়ে যায়। তোমাকে কত কাপড় দিয়ে ঢাকা দিয়েছি, তবু তোমাকে ন্যাংটোই দেখছি। কি আশ্চর্য্য ! তোমাকে আদিত্যবসন, বসুবসন, অন্তরীক্ষবসন, স্ত্রীপুত্রবসন দিয়ে ঢাকা দিয়েছি, তবু সাতখানা কাপড় ফুঁড়ে তোমার জ্যোতি বেরিয়ে পড়ছে। এষ আত্মময়ো গন্ধঃ জয়ন্তীদুর্গায়ৈ স্বাহা। ইদং আত্মময়ং পুষ্পং ময়া প্রদত্তং তুভ্যং দুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ধূপ দে। এষ আত্মময়ো ধুপঃ জয়ন্তীদুর্গায়ৈ স্বাহা। এষ আত্মময়ো দীপঃ জয়ন্তীদুর্গায়ৈ স্বাহা। আহাহা এই দীপালোকে আমি জ্বলেছি। রাত্রি, দিবা, সোমপুরী। আমার কুণ্ডলিনী মূর্ত্তি, চক্ররেখা যেখান থেকে মা রচনা করেছেন, এই দীপের আলোতে আমি দেখছি, সেইখানে সেইখানে আমি মায়ের বুকে বুকে রয়েছি। কি তিরশ্চীন বংশ ! নিজে কি চক্রগতি হয়েছ, কি বক্রমূর্ত্তি তোমার ! এই দীপে যে আলো হচ্ছে, থেকে ব্রহ্ম পর্য্যন্ত নিজেকে চক্রে চক্রে, কুলে কুলে তুমি জ্বালিয়ে তুলেছ। দেবি, এষ আত্মময়ো দীপঃ তুভ্যং জয়ন্তীদুর্গায়ৈ নিবেদয়ামি স্বাহা। ওঁ ময়া পূজিতং নৈবেদ্যং  নিবেদয়ামি।  দুর্গে, গৃহাণ গৃহাণ স্বাহা। জল দাও বাবা। খাওখাওদেবি! তোমার যজ্ঞ হল বর্ষণ, তত্রাচ তুমি খাও।জল দাও। মা বল্‌। মা [ উচ্চ মাতৃধ্বনি।]  ( ১২.৪০ মিনিটে পূজা সমাপ্ত।)                  

                           

                             . মিনিটে বলিদান আরম্ভ। 


ওঁ মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। হ্রীং শ্রীং ক্রীং। হ্রীং শ্রীং ক্রীং। ক্রীং যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি অহং। ক্রীং স্বাহা। ক্রীং স্বাহা। যা যা চাই, তাই তাই তৎক্ষণাৎ করে দিই------উগ্রং কৃণোমি স্বাহা। কথা মা বলছেন। তোরা বলছিস ----ক্রীং স্বাহা। যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা। 'যে যা চাস, তাই আমি তৎক্ষণাৎ দিই’, এমন যে মূর্ত্তি, এই মূর্ত্তিকে তোরা পূজা করছিস। ক্রীং স্বাহা। কৃণোমি ইতি ক্রীং। ক্রীং স্বাহা। ক্রীং কালিকায়ৈ স্বাহা।

ওঁ বারাহী যমূনা গঙ্গা করতোয়া সরস্বতী। কাবেরী চন্দ্রভাগা সিন্ধুভৈরবশোণগাঃ। পশুস্নানে মহেশানি সান্নিধ্যমিহ কল্পয়।। ওঁ পৃষ্ঠে পুচ্ছে ললাটে কর্ণয়োর্জঙ্ঘয়োস্তথা। মেঢ্রে সর্ব্বগাত্রেষু মুঞ্চতু পশুদেবতাঃ।। যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা। 

ওঁ অগ্নিঃ পশুরাসীৎ, তেন অজযন্ত, সঃ এতং লোকং অজয়ৎ, যস্মিন্নগ্নিঃ, তে লোকঃ ভবিষ্যতি, তং জেষ্যসি, পিবৈতাপঃ। 

ওঁ বায়ুঃ  পশুরাসীৎ, তেন অজযন্ত, সঃ এতং লোকং অজয়ৎ, যস্মিন্‌ বায়ুঃ, তে লোকঃ ভবিষ্যতি, তং জেষ্যসি, পিবৈতাপঃ। যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা। 

ওঁ সূর্য্যঃ  পশুরাসীৎ, তেন অজযন্ত, সঃ এতং লোকং অজয়ৎ, যস্মিন্‌ সূর্য্যঃ, তে লোকঃ ভবিষ্যতি, তং জেষ্যসি, পিবৈতাপঃ।

ওঁ বাচং তে শুন্ধামি। ওঁ প্রাণাং তে শুন্ধামি। ওঁ চক্ষুস্তে শুন্ধামি। ওঁ শ্রোত্রং তে শুন্ধামি। নাভিং তে শুন্ধামি। মেঢ্রং তে শুন্ধামি।পায়ূং তে শুন্ধামি। পার্শ্বং তে শুন্ধামি।ওঁ চরিত্রং তে শুন্ধামি। ওঁ বাক্‌ তে আপ্যায়তাম্‌। ওঁ মনস্তে আপ্যায়তাম্‌। ওঁ প্রাণাস্তে আপ্যায়ন্তাম্‌। ওঁ চক্ষুস্তে আপ্যায়তাম্‌। ওঁ শ্রোত্রংতে আপ্যায়তাম্‌। ওঁ যত্তে ক্রূরং, যদাস্থিতং তৎ তে শুন্ধামি। তত্তে নিষ্ঠায়তাম্‌। তত্তে শুধ্যতু, সুমহোভ্যঃ স্বাহা। 

ওঁ পশুপাশায় বিদ্মহে শিরচ্ছেদায় ধীমহি। তন্নঃ পশুঃ প্রচোদয়াৎ।ওঁ যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা।

ওঁ তৎ সৎ অদ্য আশ্বিনে মাসি, শুক্লে পক্ষে, কন্যারাশিস্থে ভাস্করে, মহানবম্যাং তিথৌ ( যার যার গোত্র নাম বল ), শ্রীভগবদ্দুর্গাপ্রীতিকামঃ ওঁ দক্ষযজ্ঞবিনাশিন্যৈ মহাঘোরায়ৈ যোগিনীকোটীপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ ইমং পশুং বহ্নিদৈবতং তুভ্যং অহং ঘাতয়িষ্যে। 

ওঁ পশুরুৎপাদিতো দেবৈর্যজ্ঞার্থে  বিধানতঃ ইদানীং মহোৎসাহে ছেত্ত্যো'বসি ময়াঃ পুনঃ।। ওঁ পশো ত্বং বলিরূপেন  মম ভাগ্যাদুপস্থিতঃ। প্রণমামি ততঃ সর্ব্বরূপিণং বলিরূপিণম্‌।। চণ্ডিকা প্রীতিদানেন দাতুরাপদ্বিনাশিনে। বৈষ্ণবীবলিরূপায় বলে তুভ্যং নমোস্তুতে।। ওঁ যজ্ঞার্থে পশবঃ সৃষ্টাঃ যজ্ঞার্থে পশুঘাতনম্‌। ওঁ অতস্ত্বাং ঘাতয়িষ্যামি তস্মাদ্‌ যজ্ঞে বধঃ অবধঃ।। ওঁ পশুযোনিপ্রসূতসি ব্রহ্মণা নির্ম্মিতা পুরাঃ। অতস্ত্বাং ঘাতয়িষ্যামি তস্মাদ্‌ যজ্ঞে বধঃ অবধঃ।। ওঁ বলিরেষ ময়া দত্তঃ পশূনাঞ্চ পশূত্তম। গৃহ্ন গৃহ্ন মহাদেবি রক্ষ মাং দুরিতার্ণবাৎ।।এতে গন্ধপুষ্পে খড়্গায় নমঃ। ওঁ কৃষ্ণং পিনাকপাণিঞ্চ কালরাত্রিস্বরূপিণম্‌। উগ্রং রক্তাস্যনয়নম্‌ রক্তমাল্যানুলেপনম্‌।। রক্তাম্বরধরঞ্চৈব পাশহস্তং কুটুম্বিনম্‌। পিবমানঞ্চ রুধিরং ভুঞ্জানম্‌ ক্রব্যসংহতিম্‌।। এতে গন্ধপুষ্পে খড়্গায় নমঃ। ওঁ অসির্বিশসনঃ খড়্গ তীক্ষ্ণধারো দুরাসদঃ। শ্রীগর্ভো বিজয়শ্চৈব ধর্ম্মপাল নমোস্তুতে।। ইত্যষ্টৌ তব নামানি পুরা প্রোক্তানি বেধসা। নক্ষত্র কৃত্তিকা তুভ্যং গুরুর্দ্দেব মহেশ্বরঃ। হিরণ্যঞ্চ শরীরং তে ধাতা দেবো জনার্দ্দনঃ। পিতা পিতামহশ্চৈব ত্বং মাং পালয় সর্ব্বদা।। নীলজীমুতসঙ্কাশঃ তীক্ষ্ণদ্রষ্টঃ কৃশোদরঃ। ভাবশুদ্ধোমর্ষণশ্চ অতিতেজামহাবলঃ।। ইয়ং যেন ধৃতা ক্ষৌণী হতশ্চ মহিষাসুরঃ। তীক্ষ্ণধারায় শুদ্ধায় তস্মৈ খড়্গায় তে নমঃ।। ওঁ দক্ষযজ্ঞবিনাশিন্যৈ মহাঘোরায়ৈ যোগিনীকোটীপরিবৃতায়ৈ ভদ্রকাল্যৈ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। (কুষ্মাণ্ড বলিদান আরতি।)

যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা। মা তোমাদের মনস্কামনা পূর্ণ করুন। ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী। দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তুতে।। ( .৩৫ মিনিটে বলিদান পর্ব্ব সমাপ্ত।)


                                      টায় হোম আরম্ভ। 

ওঁ অগ্নিমীড়ে পুরোহিতং‌ যজ্ঞস্য দেবং‌ ঋত্বিজং।হোতারং রত্নধাতমম্‌।। ওঁ অগ্নে ত্বং জাতবেদঃ লোহিতাক্ষ ইহাবহ ইহাবহ সর্ব্বকর্মাণি সাধয় সাধয় স্বাহা। ওঁ মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। কি করে নমঃ বলতে বলেছি ? মহিষমর্দ্দিনী——অঙ্গুষ্ঠং মহিষোপরি। এই পায়ে করে মহিষকে চেপে ধর। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। নিজের ছোটত্বতাকে বাঁ পায়ে মার্‌ না। অনেক সোম পান করেছিস। এবার এই অসুরমারা সোম পান কর না। মার্‌ মার্‌।মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। এই অসুর বিজয়ের সোম আমায় পান করতে দাও। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি-----মহিষমর্দ্দিনীর সোম আমায় পান করতে দাও। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি——বহু বহু সোম পান করেছি, তুমি এই অসুরধ্বংসী সোম আমায় পান করতে দাও। মহিষমর্দ্দিনী ! মহিষমর্দ্দিনী ! দেখ,মহিষমর্দ্দিনী দর্শন কর। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি।মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। অমনি করে দাঁড়া, অমনি করে অসুরকে ত্রিশূলে দীর্ণ কর্‌। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ।বেঁচে গেলি, বেঁচে গেলি। কেমন দাঁড়িয়েছে দেখ্‌। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। আজ তোদের বলিদান মাকে একেবারে চোখ খুলে দেখাচ্ছি এবং হচ্ছে, এই শুভ খবর দিচ্ছি। চোখ খুলে দেখ। কুবিৎ সোমং অপাম——বহু বহু রসমরণ, মরণ, মরণ, জন্ম, জন্ম, জন্ম, তারমধ্যে সোমের তোলপাড়। কত খেয়েছি, সোমের ভিতর মরেছি, বেঁচেছি, অনেক অনেক বৈচিত্র্যময় সোম খেয়েছি। এই যে মহিষমর্দ্দিনী সোমরস, কখনও পান করা হয় নি। যেমন করে তোর মহিষমর্দ্দিনী দুর্গা বিচরণ করছে, এমনি করে বিচরণ কর্‌ না। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। মার্‌ অসুর, মার্‌ মার্‌ ! মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি।সোম খেতে, সোমলতায় জড়িয়ে, একেবারে গলায় ফাঁসি লাগিয়ে কতবার মরেছিস।কতবার বলেছিস----- 'আর চাই না, আর চাই না’, কতবার বলেছিস----- 'আরও দাও, আরও দাও।  কিন্তু এই বিজয়িনী- সোমরস কখনও খেয়েছিস ? দেবি ! আমাতে আবির্ভূত হও। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি। মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। এই সোম মূর্ত্তিতে আমার ভিতরে এস, উৎসরিত হও আমার শরীরে, আমার অন্তরে, আমার আপাদমস্তকে। দেবি ! মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। কুবিৎ সোমং অপাম ইতি। আমাতে এস, আমাতে এস, আমাতে এস।মহিষমর্দ্দিনী নমঃ।

[ .২০ মিনিটে হোমপর্ব্ব সমাপ্ত। তিনটার সময় গুরুদেব নিজে হোম করতে আরম্ভ করলেন, এবং অন্নভোগ নিবেদন করলেন। তারপরে আরতি করলেন। আরতিশেষে গুরুদেব সমগ্র শিষ্যমণ্ডলী সহ প্রণাম করলেন। .২০ মিনিটে নবমীপূজা সমাপ্ত।] 

                                                         

[ প্রকাশকের মন্তব্য।

১। "যে ছেঁড়া কাঁথা আর পুঁটলি ...... "-----ছেঁড়া কাঁথা= মর্ত্ত্য শরীর; পুঁটলি= বদ্ধ বা মর্ত্ত্য সংস্কার। 


২। প্রাণ দিক্‌——বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৪।২।৪ দ্রষ্টব্য।


৩। এই নবমী পূজায় ছান্দোগ্য উপনিষদের মধুবিদ্যা ব্যাখ্যাত হয়েছে। ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ তৃতীয় অধ্যায় দ্রষ্টব্য।


যত কাল  আদিত্য পূর্ব্ব দিকে উদিত হন এবং পশ্চিম দিকে অস্তমিত হন, ততকাল বসুগণ ( এবং এই বিদ্যার যিনি বিজ্ঞাতা তিনি ) অগ্নিমুখে প্রথম যে অমৃত, তা পান করেন


যত কাল  আদিত্য পূর্ব্ব দিকে উদিত হন এবং পশ্চিম দিকে অস্তমিত হন, তার দ্বিগুণ কাল  আদিত্য দক্ষিণ দিকে উদিত হন এবং উত্তর দিকে অস্তমিত হন, এবং ততকাল রুদ্রগণ ( এবং এই বিদ্যার যিনি বিজ্ঞাতা তিনি ) ইন্দ্রমুখে দ্বিতীয় যে অমৃত, তা পান করেন


যত কাল  আদিত্য দক্ষিণ দিকে উদিত হন এবং উত্তর দিকে অস্তমিত হন, তার দ্বিগুণ কাল  আদিত্য পশ্চিম দিকে উদিত হন এবং পূর্ব্ব দিকে অস্তমিত হন, এবং ততকাল আদিত্যগণ ( এবং এই বিদ্যার যিনি বিজ্ঞাতা তিনি ) বরুণ মুখে তৃতীয় যে অমৃত, তা পান করেন


যত কাল  আদিত্য পশ্চিম দিকে উদিত হন এবং পূর্ব্ব দিকে অস্তমিত হন, তার দ্বিগুণ কাল  আদিত্য উত্তর দিকে উদিত হন এবং দক্ষিণ দিকে অস্তমিত হন, এবং ততকাল মরুৎগণ ( এবং এই বিদ্যার যিনি বিজ্ঞাতা তিনি) সোম মুখে চতুর্থ যে অমৃত, তা পান করেন


যত কাল  আদিত্য উত্তর দিকে উদিত হন এবং দক্ষিণ দিকে অস্তমিত হন, তার দ্বিগুণ কাল  আদিত্য ঊর্দ্ধ দিকে উদিত হন এবং অধঃ দিকে অস্তমিত হন, এবং ততকাল সাধ্যগণ ( এবং এই বিদ্যার যিনি বিজ্ঞাতা তিনি) ব্রহ্ম মুখে পঞ্চম যে অমৃত, তা পান করেন


৪। " হল সন্ধির জায়গা। ওখানে তোমার ভোগ ডবল হয়েছে”-----সন্ধি স্থান = স্বপ্ন স্থান। (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৪।৩।৯ দ্রষ্টব্য।) 


৫। ''সেই মাকে আমি পূজা করছি, যে মা ইন্দ্রিয়রূপ অশ্ব যোজনা করে ছুটে বেরিয়ে গেছে, এক এক মূর্ত্তিতে, এক এক লোক জয় করে জয়ন্তীর বেশে চলেছে’'———যা দুর্গা পূজা তাই অশ্বমেধ যজ্ঞ। মহাপ্রাণ (মুখ্যপ্রাণ) হয় নাম ধারণ করে দেবতাদের, বাজী নাম ধারণ করে গন্ধর্ব্বদের, অশ্ব নাম ধারণ করে মনুষ্যদের এবং অর্ব্বা নাম ধারণ করে অসুরদের মৃত্যুর পরপারে নিয়ে গিয়েছিলেন। বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ প্রথম অধ্যায় প্রথম ব্রাহ্মণ, দ্বিতীয় ব্রাহ্মণ, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ ষষ্ঠ অধ্যায় প্রথম ব্রাহ্মণ, এবং ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ প্রথম অধ্যায় দ্বিতীয় খণ্ড দ্রষ্টব্য। বৃহদারণ্যক উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ের তৃতীয় ব্রাহ্মণের নবম মন্ত্রে (মন্ত্র ৩।৯।১।) বলা হয়েছে ---'সেই এই দেবী/দেবতার নাম দূর্‌, কেননা মৃত্যু এঁর থেকে দূরে চলে যায়।' এইজন্য এঁর (মুখ্যপ্রাণের) নামদুর্গা'——সা বা এষা দেবতা দূর্‌ নামঃ, দূরং হি অস্যাঃ মৃত্যুঃ।।-----সেই এই দেবীর / দেবতার নামদূর্‌', মৃত্যু এঁর থেকে দূরে থাকে…… মৃত্যু এঁর থেকে দূরে থাকে বা দূরে গমন করে বলে ইনি দুর্গা। যদিওদেবতা' বলা হয়েছে, তত্রাচ স্ত্রীলিঙ্গ বাচক শব্দসা' এবংএষা' ব্যবহার করা হয়েছে। 


৬। '' যে আচ্ছা বলে দাঁড়াচ্ছেন, ওর নাম অসুর বধ।''-----'অচ্ছা বকএকজন বৈদিক ঋষির নাম, যিনি যে আচ্ছা বলে দাঁড়াচ্ছেন, ওর নাম অসুর বধএই বিজ্ঞানের দ্রষ্টা।  


৭।আবার তুই উদয়াস্তময় হচ্ছিস, আমার নয়নের দুলাল, আনন্দময়ীর সন্তান !''-------আদিত্য হলেন অদিতির সন্তান। অদিতিআনন্দময়ী। 


৮।''মাকে জলে ঢেকে দে।''---- অপ্‌ বা জল  প্রাণের শরীর এবং চন্দ্রমা (সোম) প্রাণের জ্যোতিরূপ।——বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।৫।১৩ দ্রষ্টব্য।  

৯।'আমার হাত পা সমস্ত দুর্গা হয়ে গেছে’——ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ পঞ্চম অধ্যায় প্রথম খণ্ড, এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৬।১।১৪ দ্রষ্টব্য। 


১০।মহিষমর্দ্দিনী——অঙ্গুষ্ঠং মহিশোপরি। এই পায়ে করে মহিষকে চেপে ধর।’-----অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ পুরুষ মধ্য আত্মনি তিষ্ঠতিকঠোপনিষদ্‌ মন্ত্র ২।১।১২ দ্রষ্টব্য।


১১।'কুবিৎ সোমং অপাম ইতি।’-----সোম তিন প্রকার——কুবিৎ সোম, পবমান সোম, সুনবাম সোম। যে মহাপ্রাণ থেকে অনবরত শব্দ, স্পর্শ,  ইত্যাদি রূপে আগত বেদন কে অনুভূতি বা সোমরূপে  ভোগ করছি, প্রাণের বহিঃ প্রভাব বা প্রভর দ্বারা আমরা বহির্মুখী হয়ে রয়েছি বলে, যেখান বা যাঁর থেকে সোমের প্লাবন আসছে, তাঁকে দেখি না। এই যে অসুর হয়ে সোমপান, এর নামকুবিৎ সোম আর অসুর নিধনের পর যে সোম তাসুনবাম সোমবানবমীর সোম’, যার কথা নবমী পূজায় বলা হয়েছে। আর যে প্রাণের বা সোমের প্লাবনে, মহাপ্রাণের নিয়ন্ত্রণে, আমরা অসৎ থেকে সৎএ , তম থেকে জ্যোতিতে, মৃত্যু থেকে অমৃতে চলেছি, প্রবাহিত হচ্ছি, তার নামপবমান সোম’ (বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ১।১৩।২৮ দ্রষ্টব্য।  সোম তিন প্রকার----- কুবিৎ সোম, পবমান সোম, সুনবাম সোম।


১২। ''পশ্চিমের সূর্য্য, যে উত্তরে অস্তমিত হয়, সেই সূর্য্য আবার দ্বিগুণকাল প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকে'' ——এই উক্তিটি মনে হয় প্রকৃত পক্ষে এই রকম ---- 'পশ্চিমের সূর্য্য, যে আগে দক্ষিণে উদিত হয়ে উত্তরে অস্তমিত হয়েছিল, সেই সূর্য্য আবার দ্বিগুণকাল প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকে’, অথবা  'পশ্চিমের সূর্য্য, যে পূর্ব্বে অস্তমিত হয়, সেই সূর্য্য আবার দ্বিগুণকাল প্রজ্জ্বলিত হয়ে থাকে ছান্দোগ্য উপনিষদে উক্ত মধু বিদ্যা দ্রষ্টব্য, সেখানে উক্ত হয়েছে যে  আদিত্য পূর্ব্বে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্তমিত হন, তার পর আদিত্য দক্ষিণে উদিত হয়ে উত্তরে অস্তমিত হন এবং তার পর আদিত্য পশ্চিমে উদিত হয়ে পূর্ব্বে অস্তমিত হন, তার পর আদিত্য উত্তরে উদিত হয়ে দক্ষিণে অস্তমিত হন, এবং তারপর আদিত্য ঊর্দ্ধে উদিত হয়ে অধে অস্তমিত হন।


                                     বিজয়া দশমী। 


  ১৩ আশ্বিন ১৩৪৮, ৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৪১, মঙ্গলবার, প্রাতঃ .৩০ মিনিটে আরম্ভ।


ওঁ দুর্গা দুর্গা দুর্গা দুর্গা পুরস্তাৎ দুর্গা পশ্চাৎ দুর্গা উত্তরতঃ দুর্গা দক্ষিণতঃ দুর্গা ঊর্দ্ধতঃ দুর্গা অধস্তাৎ দুর্গা অন্তরতঃ দুর্গা বাহ্যতঃ দুর্গৈব ইদং সর্ব্বং। ওঁ হ্রীং দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি (বহু বহু বার) আমার তিনটি শরীর রয়েছে। অধিদৈব শরীর——এই যে চক্ষু কর্ণ নাসিকাদি ইন্দ্রিয় প্রসৃত করে আকাশে, আমার অধ্যাত্মের বহির্ভূত বিষয়ে ব্যাপৃত রয়েছে, আমার এই শরীর, আদিত্য থেকে মর্ত্ত এবং মর্ত্ত থেকে পাতাল পর্য্যন্ত ঠেকে আছে। শরীর দুর্গায় সমৃদ্ধ হোক। কেমন করে ? এই যে তোর ইন্দ্রিয়াদি, দশটি ইন্দ্রিয় মন, এরা একাদশ রুদ্র। এরা দিগ্‌দিগন্তে প্রসারিত হয়ে যে মূর্ত্তি ধরেছে, এদের বেদন বলে ধর। এরা হল তোর আত্মবেদন। তোর এই বেদন বিশ্বকে অথর্ব্ব বেদ করে দিয়েছে, তোর বিশ্বরসে তোর এই  বিশ্বশরীর আঙ্গীরসভূত হয়েছে। তোর এমন কোন জ্ঞান, এমন কোন বোধ ফোটেনি , যার সঙ্গে আত্মবোধ নেই। নিজে দেখলুম না, শুনলুম না, অথচ নিজে থেকে ফুটল, কি হয়? এই যে বেদগতি, এই যে বেদবর্ম্মময় আমি আপনাকে আপনার বহিঃশরীর করেছি, এই হয়েছে মা। অস্ত্রধারী মা এই অস্ত্রশরীর ধরে দিগ্‌দিগন্তে তোকে রক্ষা করছে। তুই এখানে বেদময় বলে তুই ঠিক দেখতে পারছিস। যারা দেখতে পায়নি তারা পারছে না। আব্রহ্মস্তম্ভ পর্য্যন্ত যার যা ধর্ম্ম, তার প্লাবনের দ্বারা সে সমাশ্রিত হয়ে আছে। এই পৃথিবীতে একটা বাটি, থালা, বা ঘটিতে জল রাখ, সে সবের উপর যেমন বাতাসের Pressure আছে, তেমনি সমস্ত বিশ্বের উপর একটা চাপান আছে। সে চাপান বস্তুতঃ রক্ষণ। এই বিপুল প্রসারের দ্বারা, একাদশ ইন্দ্রিয়ের দ্বারা তা জানতে পারছিস ? দশটা ইন্দ্রিয় মন এর দ্বারা, আমি খেলুম, শুনলুম, ধরলুম, এই সব ব্যবহারের বেদন এখান দিয়ে চালিয়ে দে। বেদ প্রকাশ কর; মানে--- আমার আত্মময় যে প্রকাশ এইটিই আকাশ, বাতাস ব্যেপে রয়েছে দেখ। যে বাহ্য বিশ্বদর্শন, ঐটি হল অসুরত্ব। আর এইটি হল দেবত্ব লাভ। দুর্গা এই অধিদৈব মূর্ত্তি হয়ে রয়েছেন। যৎ মে অধিদৈব শরীরং তৎ দুর্গাময়ং ভবতু। অস্মিন্‌ মে অধিদৈবশরীরে দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি। অস্মিন্‌ মে অধ্যাত্মশরীরে দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি। আমার এই যে অধ্যাত্ম শরীর, এই যে হাত-পাওয়ালা ছোট্টশরীর, যার দৈব শরীর ব্রহ্ম প্রর্য্যন্ত ব্যেপে রয়েছে, অধিদৈবে কি বিপুল শরীর হয়েছি, আর অধ্যাত্মে কি ছোট্ট কোঁচকান শরীর হয়েছি, এই শরীরে  কি ঘনীভূত রস হয়েছি, এই অধ্যাত্ম শরীরেহাতে, পায়ে, শিরায়, মস্তিষ্কে, রোমে, দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা। এই শিরায় যে রক্তপ্রবাহ বইছে, অন্তরে যে রসপ্রবাহ বইছে, এই রসপ্রবাহময় অধ্যাত্ম শরীরে দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু। গুরু ! আপনি বললেন দুর্গা আমাদের শরীরে প্রবাহিত হয়ে রয়েছেন। তা তো বুঝলাম না। মা আমার সিংহসমাঢ়ূহা, মা আমার অসুরমর্দ্দিনী, কথা আপনি একেবারে মাথার ভিতর বসিয়ে দিয়েছেন, এখন সেইটি ভেঙ্গে, বরফ ভেঙ্গে জলের মত মা আমার প্রবাহের আকারে বইবেন কেমন করে ? তা বলছি না। এই যে মূর্ত্ত হওয়া, মূর্ত্তি মানেই জাতবেদা।বেদন আকারে জাত হচ্ছি, এইটি যে জানছে, তার নাম হচ্ছে জাতবেদা। আমাদের সৌভাগ্যবশতঃ মা দশভূজা হয়ে চোখে, মুখে, নাকে দাঁড়িয়েছেন। এই মূর্ত্ত মায়ের কথা বলেছি। রস এমনই অদ্ভূত ! এমন সব ছোট ছোট কীট আছে, যারা microscope এও ধরা পড়ে না; তবু তাদের হাত পা আছে। তেমনি আমার মা অণু হতে অণু এবং মহান্‌ অপেক্ষা মহান্‌ হলেও, ‘দুর্গা' বলে যখন ডেকেছি, অমনি দশভুজা, সিংহসমাঢ়ূহা, মহিষমর্দ্দিনী হয়ে দাঁড়িয়েছ। মূর্ত্তি তত্ত্বে এই অপূর্ব্বতা আছে। ইন্দ্রিয়সকল তোমার কাছে যে মূর্ত্তি সংগ্রহ করে এনেছে, দাঁতে চিবিয়ে খাদ্য হজমের মত একে গুঁড়া করলেও, টুকরা টুকরা করলেও তার প্রতি চূর্ণে, বা প্রতি টুকরায় দশভুজা মহিষমর্দ্দিনী মা। রূপ যদি হয় চোখের গ্রাহ্য জিনিষ, আর আমার ইন্দ্রিয়কে যদি আমি চালাতে পারি, তবে সে যতই সূক্ষ্মের থেকে সূক্ষ্ম হক, এই স্মেরাননা দশভুজা দুর্গা তোকে বিজয় দেবার জন্য সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আমার কথা অনুধাবন করছিস ? অগ্নি রাশি রাশি স্ফূলিঙ্গময় হলেও তার প্রতি স্ফূলিঙ্গ যেমন প্রদীপ্ত অগ্নি,  তেমনি একে গুঁড়া করতে হবে না, চোখে মুখে ধরলেই, এই দুর্গাময় মূর্ত্তিরহস্য জানা থাকলে, বাক্‌, পাণি, পাদ ইত্যাদিতে দুর্গামূর্ত্তি দেখে নিবি। তুই ডাক্তার, এক ফোঁটা রক্তে যেমন জীবন corpuscle পাবি, তেমনি আমার দুর্গার ভিতর এই মহিমময়ী মূর্ত্তি রয়েছে। এমন যে দুর্গা, এই দুর্গা মাথা থেকে পা পর্য্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে বললে, তোর কি একে গুঁড়া করতে হবে ? না। বহুলা মা দিগ্‌দিগন্তে ঘিরে যাচ্ছে। দিকে চোখ যায়---- ইন্দ্রাণী,   দিকে চোখ যায়---- বারাহী, সে দিকে চোখ যায়---- কৌমারী, এমনি করে ঘিরে নিয়ে সে অসুর মেরেছিল। এখন ঠিক এমনি করে, আমার এই শরীরে আবির্ভূত হয়ে আমাকে ঘিরে নিয়ে মারছে। ওঁ অস্মিন্‌ অধ্যাত্মশরীরে দুর্গা সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি। সঙ্গে সঙ্গে একটা কথা শিখিয়ে দিই। এই যে দুর্গা বললি, ওর সঙ্গে, ‘দুর্গা কই, দুর্গা কই ?' বলে ইন্দ্রিয়দের চালাবার চেষ্টা করিস না। তাতে মধু কৈঠভ হবে। এই যে তোর ডাক, এই যে তোর বেদন, ওর ধর্ম্মই হল মূর্ত্ত হয়ে ফোটা; ফোটার জন্য আলাদা চেষ্টা করতে হবে না; তোর বেদনের ধর্ম্মই হল ফুটে ওঠা। যেমন friction এর ধর্ম্মই হল---- খানিক বাদে জ্বলে ওঠা, তেমনি বেদনের ধর্ম্মই হল তাই। অস্মিন্‌ অধ্যাত্মে দুর্গা মে সমৃদ্ধা ভবতু স্বাহা ইতি।দুর্গা' এই বেদগতি বুঝলি।একে সারা প্রাণভরে যারা নিতে সক্ষম হয়েছিল, অথবা সক্ষমতা দিয়েছিলেন, তারাই হয়েছিল ব্রাহ্মণ। বামুন আর শূদ্র, এভাবে বলছি না, তারা দ্বিজ হয়েছিল। ঋক্‌, যজুঃ, সাম, এই তিনটি হল বেদের প্রবাহিণী শক্তি। বেদ প্রবাহিত হলে এই তিন রকমের প্রকাশ হয়।ঐ শরীরময় আমার ত্রিবেদ খেলা করছে। ওখানে প্রতি জায়গায় ঋক্‌ ফুটেছে, অধ্যাত্মে যজুঃ ফুটেছে, আর বুকের ভিতর একরকমে না একরকমে সাম আসছে। বাইরের জগতের প্রত্যেক প্রত্যক্ষতা বুকে ঘুরে আসছে ? বাইরের গাছটা তোর চোখে এল, তুই মনে করলি,——গাছটা দেখে ফেললি; তা নয়। একটি শক্তিপ্রবাহ মাত্র নয়। যেমনি গাছটি চিনলুম,——ওঃ, অমনি এইখান থেকে বেদপ্রবাহ বয়ে গিয়ে গাছটাকে বইয়ে নিয়ে এল। গাছটি হল ঋক্‌ , আর সেই ঋক্‌ মন্ত্র এখানে উড়ে এল। ঋক্‌, ওখান থেকে বৃক্ষরূপ মধু সংগ্রহ করে বুকে এনে ঠেকালে, মধু সংগ্রহ করে, মধুকর এসে বাসা বাঁধলে। মধু সংগ্রহের জন্য মৌমাছি উড়েছে, মধু নিয়ে এসে এইখানে, বাসায় ঢালছে। বটে, বটে ! কিন্তু মধুর ভিতরে যে, সে যতক্ষণ তদাকার না নেয়, ততক্ষণ মধুর কোন স্বাদ নেই। মধু বটে , কিন্তু খানেওয়ালা চাই তো ? খেয়ে বলতে চাই 'মধু' মানে, নিজেই তুই, এইরকম প্রতি অনুভূতি। বাইরে থেকে যা কিছু' পাস, এমনি করে তুই নিজেই নিস। বাইরে থেকে সংগ্রহ করলি, নিজে খেলি। স্ত্রী, পুত্র, টাকা, একেবারে নিজে তাই হয়ে, একেবারে সমস্ত প্রাপ্তি হলি। এই ভাবে চিন্ময়ীতে সব একত্ব প্রাপ্ত হয়, একসা হয়। আমি রেগে জ্বলে উঠলুম বা ভাবে গলে গেলুম, এর লক্ষণ তোরা জানিস, কিন্তু বিজ্ঞান জানিস না। যদি বেদজ্ঞ হতিস, তবে দেখতিস, রাগ বা ভাব যা- হক, একেবারে নিজে ছাড়া কিছু হইনি। এই হল চেতন তত্ত্বের, চিন্ময়ীর একটি রহস্য। সে যাতে ঠেকে, তাকে গ্রহন করে,  বহন করে, 'রে তাই হয়ে যায়, তাই হয়ে তাকে বয়ে নিয়ে আসে। মায়ের আমার, চিন্ময়ীর আমার, এই হল ত্রিবৃৎবিজ্ঞান। এইতে আরোহণ করে, এই ত্রিবেদমহিমা পড়ে নিয়ে, আমরা ত্রিবৃৎময় ব্রাহ্মণ হয়েছি বলে, তিন গাঁটের পৈতা গলায় দিয়েছি। ছেলেরা যেমন টোপর, ঝোলা পরে convocation যায়, লোকে দেখেই জানতে পারে যে,ওখানে যাচ্ছে, তেমনি গলায় এই পৈতা দিলে জানি যে, ওখানে যাচ্ছে। সুতরাং বেদপ্রকাশকে আমি কোথায় দেখব ? কি নিবে গেছে ? নেবেও না, মরেও না, ঘুমায় তো না-ই। তুই যখন মরে গেছিস, কোথায় গেছিস ? ঠিক আছিস ? কার বুকেকে আমি ? যখন দেখি যে, মরেও ঠিক আছি, যখন দেখি ——দুর্গার বুকে দুর্গা আমি, প্রাণের বুকে প্রাণ আমি, আত্মার বুকে আত্মা আমি, মরে গিয়ে আমার বিলোপ নেই, সে কে আমি ? কংসের কারাগারে একটা কন্যার ঠ্যাং ধরে শিলার উপর আছার মারতে, সে পাথরের দেওয়াল ভেঙ্গে আকাশে উড়ে চলে গেল। সে শিলার আছাড়ে মরে গিয়েও, যেমন বিন্ধ্যবাসিনী হয়ে জ্বলে উঠেছিল, তোরাও তাই। তোদের মৃত্যু আর কিছুই নয়, শুধু এইখান থেকে উড়ে যাওয়া, আর আকাশটায় গিয়ে প্রদীপ্ত হওয়া। সুতরাং বেদস্বরূপিণী, জাতবেদা, এই সোমময়ী দুর্গা, একে দুর্গা বলে সেই চিনেছে, যে এই ত্রিবেদের ত্রিভঙ্গিমা চিনেছে। ত্রিবেদের  বিভঙ্গ যদি খেলে ওঠে, ঋক্‌, সাম, যজুঃ, এই প্রবাহ যদি প্রবাহিত হয়, এই বেদগতি যদি তোদের সচেতন করে, তাহলে তোদের মহিষ মরবে। ময়ের আশীর্ব্বাদে তোরা এই সারা বছর কাটালি। আগামী সারা বছর ধরে তোরা সবের তলা দিয়ে দিয়ে এই ঋক্‌, এই সাম, এই যজুঃ এই ভাবে পড়তে থাকবি। প্রতি ভোগের তলায় তোরা এই analysis এর চোখ রাখবিতা, কি গাড়ী চরতে, কি মারামারি করতে, কি স্ত্রী পুত্র ভোগ করতে। আর এই ত্রিবেদের ত্রিভঙ্গিমময়ীর নাম দেবী দুর্গা। এই রকমে চলতে পারবি ? এই রকমে চলতে গিয়ে তোকে এই ত্রিভঙ্গিমময় দুর্গাকে কোথাও ভেঙ্গে ফেলতে হবে না তো ? তা হলে দুর্গা আমার আপাদ মস্তকে ——অধিদৈব, অধ্যাত্ম শরীরে প্রবাহিত হয়েছে ? সে আমার মহিষত্ব  ঘুচিয়ে দেবে ? তবে আজ একবার প্রাণ ভরে মা বলে ডাক। মা [ উচ্চ সমবেত আহ্বান।]

হায় হায় ! এই যদি হও তুমি আমার দুর্গা মা, তবে কেমন করে তোমাকে নিরঞ্জন দেব ?  দেবি ! কেমন করে তোমাকে নিরঞ্জন দেব ? যে পরতে পরতে এই রূপে আপনাকে পূজার আকারে, ত্রিবেদের আকারে লীলালহরিত করছে——বাক্‌ প্রাণ মন, তেজ জল অন্ন—— বাক্‌ চলল, প্রাণ হয়ে গেল, যাঁহাতক প্রাণ হল, অমনি মন ———অন্ন হয়ে গেল। এই হচ্ছে ? আগে আগুনের মত জ্বলে উঠল, অমনি সেটা প্রাণময় হল, একেবারে তাই হয়ে গেল। ইন্দ্রাণী——অমনি চক্ষুরাদি হয়ে দাঁড়াল রে ! প্রাণবন্ত হয়ে, ইন্দ্রিয়াদিময় হয়ে চোখে রূপ, জিভে রস, কাণে শব্দ ইত্যাদি হয়ে দাঁড়াল। তোরা এই শরীরটাকে ভোল। ভুলতে না পারিস তো একে নিয়েই চল। এতে গন্ধপুষ্পে ওঁ কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে স্বাহা।। আঃ কিসে আঃ বলছিস ? এই যে তুই বসে আছিস, কত অন্ধকার দূর করে, কত বৃত্র সংহার করে বসে আছিস, তোর দিগন্তটা আলো করে বসে আছিস। কিরীটিনী কেন ? এই চোখ কান প্রভৃতিতে আলো করে বলে। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে স্বাহা।। যে এমনি করে জাগ্রতমূর্ত্তি ধরে, রাত্রের অন্ধকার দূর করে তোকে জীবন্ততার ভোগ দিচ্ছে, তোর মা কিরীটিনী। যদি এমন করে ত্রিবেদ না ফুটিয়ে দিত, তবে এতক্ষণ তোর বাড়ীতে, ‘বল হরি, হরি বোল’, শব্দ উঠত। কেমন করে জাগিয়ে দিল, তুলে ধরল দেখলি ? শুধু তোকে নয়, আমাকে নয়, রাশি রাশি অনন্ত জীবকে জ্বালিয়ে, জাগিয়ে ধরে রেখেছে। মহাবজ্রে ! সমুদ্রেরই জল যতটা নদীতে ঢোকে, নদী বলে ——আমার জল, তেম্‌নি এই ইন্দ্রাণী তোর ভিতর যতটা ঢোকে, তুই বলিস——তোর ইন্দ্রিয়। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে স্বাহা।। আমি অনকে বৃত্রাসুর ধ্বংস করেছি। আমার ধর্ম্মই হল বৃত্র সংহার করা। আমি দিগ্‌দিগন্তে আমার সোমরস প্রবাহিত করি, করে বৃত্রকে হনন করি। অনন্ত অনন্ত কাল ধরে, আমার বজ্রকে নিষ্পেষিত করে তার মধ্যে আমি সোম ধারা ঢেলে দিই, বৃত্রকে হনন করি। সোম—— বজ্রেরই রস। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্র নয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে ।। জ্বলে থাক, আমাদের এই অধিদৈব যজ্ঞে তুমি জ্বলে থাক, আমাদের এই অধ্যাত্মক্ষেত্রে জ্বলে থাক, আমদিগকে আর বৃত্রের আধাঁরে রেখ না। নানা প্রহরণ ধরে, বৃত্রকে মেরে, আমায় তুমি বক্ষে রাখ। (১০.৩৫ মিনিটে প্রথম পর্ব্ব সমাপ্ত।)


                                 ১১টায় দ্বিতীয় পর্ব্ব আরম্ভ। 

( গুরু বারান্দা থেকে বললেন, ——) সকলে হাঁটু গেড়ে বস। তারাকান্ত দাঁড়াও। পড়াও——হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণীরূপধারিণী। (পণ্ডিত পড়াতে লাগলেন) ওঁ হংসযুক্তবিমানস্থে ব্রহ্মাণীরূপধারিণী।কৌশাম্ভঃ-ক্ষরিকে দেবি নারায়ণি নমোস্তুতে।। ওঁ ত্রিশূলচন্দ্রাহিধরে মহাবৃষভবাহিনি। মাহেশ্বরীস্বরূপেণ নারায়ণি নমোস্তুতে।। ওঁ ময়ূরকুক্কুটবৃতে মহাশক্তিধরেনঘে। কৌমারীরূপসংস্থানে নারায়ণি নমোস্তুতে।। ওঁ শঙ্খচক্রগদাশার্ঙ্গগৃহীতপরমায়ুধে। প্রসীদ বৈষ্ণবীরূপে নারায়ণি নমোস্তুতে।। গৃহীতোগ্রমহাচক্রে দংষ্টোদ্ধৃতবসুন্ধরে।বরাহীরূপিণি শিবে নারায়ণি নমোস্তুতে।। নৃসিংহরূপেণোগ্রেণ হন্তুং দৈত্যান্‌ কৃতোদ্যমে। ত্রৈলোক্যত্রাণসহিতে নারায়ণি নমোস্তুতে।। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্রোনয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে।।শিবদূতীস্বরূপেণ হতদৈত্যমহাবলে। ঘোররূপে মহারাবে নারায়ণি নমোস্তুতে।। দ্রংষ্ট্রাকরালবদনে শিরোমালাবিভূষণে। চামুণ্ডে মুণ্ডমথনে নারায়ণি নমোস্তুতে।। ওঁ সর্ব্বস্বরূপে সর্ব্বেশে সর্ব্বশক্তিসমন্বিতে। ভয়েভ্যস্ত্রাহি নো দেবি নারায়ণি নমোস্তুতে।।   

( গুরু বেদিতে এলেন ) মা ! মা ! মা ! পরম আনন্দের ঘোর অঘোরে যখন তুমি মত্ত ছিলে দেবি ! সেথা তুমি ছাড়া আর কাউকে তুমি রাখনি, সমস্তকে আত্মম্ভূত করে রেখেছ, আপনি করে, আপনি তখন আপনার সুখে অবস্থান করছিলে। তারপর সেই পরম আনন্দ থেকে সহসা কি আনন্দে জেগে উঠলে। অমনি তোমার সে জাগরণের প্রভাবে, তোমারই অঙ্গ থেকে ছড়িয়ে পড়ল, যেখানে যা কিছু আছে সমস্ত। ভয়াদস্য অগ্নিস্তপতি ভয়াত্তপ্তি সূর্য্যঃ। ভয়াৎ ইন্দ্রশ্চ বায়ুশ্চ মৃত্যুর্ধাবতি পঞ্চমঃ।। কি বিজয়নী মূর্ত্তিতে তুমি জাগ ! তোমারই দলভুক্ত যারা, তোমারই স্বরূপ যারা, তারাও তোমারই জয় ঘোষণা করতে করতে তোমার অনুশাসন পালন করতে থাকে। কি ভীমা তুমি ! তাদের তুমি কি বিপুল প্রাণে অণুপ্রাণিত করে দাঁড়াও, যাতে তোমার বেদনের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে তারা দিগন্ত আলোকিত করে রয়েছে। তুমি বজ্রিণী, তোমার এই বজ্র শাণিত করছে বরুণ, সূর্য্য ওতে চক্‌ চক্‌ করছে, মৃত্যু ওর তীক্ষ্ণাগ্র মুখেতে বসে আছে। অগ্নি প্রদীপ্ত হয়ে দিগ্‌দিগন্তে জ্বলছেন। এই বজ্রিণী তুমি সাজিয়েছ ইন্দ্রিয়, এই দিগ্‌দিগন্তের অন্ধকার দূর করে আলো হয়ে তুমি দাঁড়িয়েছ। অন্ধকার রাত্রি ফুটে উঠেছিল। তাই তোমার বেদনে ঝরঝর করে ফুটে উঠল দিবা, তাতে বসে গেল যত দেবতা, ব্রহ্মা, বিষ্ণু ইত্যাদি, সব এই বজ্রের প্রভাবে।এই বজ্রের আলো আমায় ঘুম থেকে জাগরণে এবং জাগরণ থেকে ঘুমে নিয়ে যায়। বজ্রিণী, মহাপ্রতিসরে মাং রক্ষ রক্ষ স্বাহা। বজ্রিণি, দিবসত্রয়ব্যাপী তোমার পূজা করলাম। তিন দিন ব্যেপে তোমার বজ্র যে ভাবে আমাদের আলোকিত করেছে, সেই ভাবে এই পূজা সমাপ্ত করলাম।বেদ গাথা যত মলিনই হোক, কিন্তু বেদ। এই বেদ দিয়ে তোমার পূজা করলাম। আজকে আবার নিরঞ্জনের গাথা। আজ নাকি তোমাকে বিদায় দিতে হবে।দেবি তুমি বিদায় নেবে নাও; কিন্তু অমন করে যেও না। এইখান দিয়ে তুমি যতখানি পথ যাবে, সব পথটা আলোয় আলোকিত করে রাখ, যেন সবটা আমি দেখতে পাই। দেবি ! তোমার জীবন্ত চোখ, তাতে বিদ্যুৎ খেলছে। এই চোখ মুক্ত হয়ে থাক; তোমার দৃষ্টি, আমার এই ক্ষুদ্র ভূমির দৃষ্টিতে সমান রেখায় প্রবাহিত হতে থাক। জানি, আবার বিপ্লবে উল্টে পাল্টে যাব, এখনও তো দ্রাবিত হই নি, জানি——এখনও সব রস নিংড়ান হয় নি, সুতরাং যতদিন জীবন রেখেছ, ততদিন যেন রসের ভিতরই ঘুরি, বেদপ্লাবনের ভিতরই যেন আবর্ত্তিত হতে থাকি।দেবি ! আমার এই তিনদিনের পূজা তুমি সার্থকতায় ভড়িয়ে দাও; তা না হলে তুমি এখান থেকে উঠতে পাবে না। যতক্ষণ তোমার এই মৃন্ময় শরীর বুকে করে থাকব, ততক্ষণ এই আশীর্ব্বাদ দেবে। দেবি ! যেমন তুমি কিরীটিনীরূপে দেখা দিলে, তেমনি কিরীটিনী হয়ে সর্ব্বতঃ আমাদের রক্ষা করতে থাক। অস্ত্র শস্ত্র ধরে, বেদময়ী হয়ে পাহারা দিতে থাক, যেন বৃত্র তার ভিতর অন্ধকার তৈরি করতে না পারে। বৃত্রসংহন্ত্রি ! শুনেছি, দধিচীর অস্থি দিয়ে তোমার বজ্র তৈরি হয়েছিল। আমিও দধীচি হয়েছি। যখন দেখছি, আমিই শুধু চন্দ্র, সূর্য্য, বায়ু, ইত্যাদি দেখছি না, ওরাও আমার দিকে চেয়ে আছে, তখন আমিও দধীচি হয়েছি। আমি দেখছি, চেতন অচেতন, সবাই জাগ্রত হয়ে আমায় দেখছে। এতে আমার বেদন খুলে গেছে——নয় তো কি হয় ? তুমি আমার দিকে চেয়ে থাক, আমি তোমার দিকে চেয়ে থাকি, তবেই একটা ব্যথা খেলে। তুমি দেখিয়েছ—— ইয়ং পৃথিবী সর্ব্বেষাং ভূতানাং মধু, অস্যৈ পৃথিব্যৈ সর্ব্বাণি ভূতানি মধু। ওগো মাটি, তুমি আমার যেমন আদরের, আমিও তোমার তেমনি আদরের। এই যে আদান প্রদান তুমি আমাকে ইন্দ্রাণী হয়ে দেখিয়ে দিয়েছ, এই আদান প্রদানের চোখ যার খুলেছে, তার নাম দধীচি। দধ্যঙ্‌——সে যেখান দিয়ে চলে——‘ কি গো মাটি, কিগো অগ্নি ভাল আছ ? কি গো আকাশ, আমি যাচ্ছি পথ দাও’----এই রকম কথা বলতে বলতে চলে। তার হাড় না হলে বজ্র হয় না। শিষ্যদের কাছে আমি বলেছি——যা কিছু তোরা দেখছিস সব বেদন; একজন বেদিত হয়ে আমি মাটি বলছে, যেমন তুই এখন যে ভাব ভঙ্গিমা নিয়ে বসে আছিস, তা দেখলেই বলব---- মানুষ বসে আছিস, তেমনি একজন মাটির ভঙ্গিমা নিয়ে বসে আছে।এ সত্যি ঋক্‌ ; তোরাও যেমন ওরাও তেমনি সত্যি ব্রহ্মার্চি। ভিখারি যেমন মিছিমিছি বলেতুমি রাজা’, সে রকম নয়।এই যে জানে, সে দধীচি।এ কোথাও চলে না, এর গা থেকে হড় হড় করে দধি, প্রাণের স্রোত চলে। এই রকমে ততটাই বৃত্র বধ হয়, ততটাই বজ্র নির্ম্মিত হয়, যতটা এইরকম প্রাণে প্রাণে খেলা করতে পারি।ওঁ কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্রোনয়নোজ্বলে। বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে।। তাই বলছিলাম, আবার যদি আমাকে ঘুম পাড়াও, তবে তো ঘুমাতেই হবে, কিন্তু আমি আর অসুরের মত ঘুমাব না; এই আলোয় ঘুমাব। তুমি আমায় কোলে করে আছ, এই আমার আলো। আর যদি চক্ষু খুলে দাও ——তোমার কাছে তার দাবি করছি। যাতে অন্ধকার আসে, যে জগৎব্যাপারে কতকটা অংশ নিবিড় অন্ধকারে ঢেকে যায়, তেমন বাধা-বিঘ্ন, তেমন অন্ধকার আমার গৃহে আসতে দিও না। কিরীটিনী মহাবজ্রে সহস্রোনয়নোজ্বলে।বৃত্রপ্রাণহরে চৈন্দ্রি নারায়ণি নমোস্তুতে।। দেবি, প্রপন্নার্ত্তিহরে, প্রসীদ——তোমার পদতলে, সহস্রে সহস্রে শির লুণ্ঠিত করে মার্জ্জনা ভিক্ষা করছি, তুমি প্রসন্না হও। দেবি, প্রসীদ প্রসীদ প্রসীদ।গৃহাণ পাদ্যং সুমুখি প্রসীদ পরমেশ্বরি। অনোরোণীয়ান্‌ মহতো মহীয়ান্‌——দেবি, ওগো আমার ক্ষুদ্রাপেক্ষা ক্ষুদ্র মা !  ওগো আমার মহান্‌ অপেক্ষা মহান্‌ মা ! ক্ষুদ্র মহানের বিপুল পরিধিব্যাপা মা, আমায় শরণ দাও, তোমার মূর্ত্ত মূর্ত্তিতে রেখে দাও। অর্ঘ্যং গৃহাণ জননি নিত্যার্ঘগ্রাহিণী শিবে। নিত্যই আমার কর্ম্মজালের অর্ঘ্য তুমি নিতে আছ, তবু আজ তোমায় নতুন করে অর্ঘ্য দিচ্ছি অর্ঘ্যং গৃহাণ দেবেশি নিত্যার্ঘগ্রাহিণী শিবে।রক্ষঃ মাং রক্ষঃ মাং মাতঃ রক্ষিণি শিবসুন্দরি।। হ্রীং শ্রীং শ্রীদুর্গায়ৈ স্বাহা। মাকে ভাল করে স্নানটা করাই, কি বল ? ওঁ অর্কজ্যোতিঃ অহং ব্রহ্মা ব্রহ্মজ্যোতিঃ অহং শিবঃ। শিবজ্যোতিঃ অহং বিষ্ণুঃ বিষ্ণুজ্যোতিঃ অহং শিবঃ।। ওঁ ব্রহ্মবিষ্ণুমহেশ্বরময়োহং ত্বাং দুর্গাং স্নাপয়ামি স্বাহা। জল দে না রে ! ওঁ হংসঃ শুচিসৎ বসুরন্তরীক্ষসৎ হোতা বেদীসৎ অতিথির্দুরণসৎ নৃসৎ ঋতসৎ ব্যোমসৎ অব্জা গোজা অদিজা ঋতং বৃহৎ। ওঁ অনেন দুর্গারূপেণ বারিণা দুর্গাং স্নাপয়ামি স্বাহা। দেবি ! আমি আজ তোমায় এই স্নান করাচ্ছি। এই তোমার জল, স্নানীয় বারি। তুমি যত দূর যাবে, সেই কৈলাস পর্য্যন্ত তোমার কাপড় যেন এতে ভিজে থাকে। মা হওয়া অমনি হয় না। মা হওয়া কত শক্ত, তা আমরা হাড়ে হাড়ে জেনেছি। ওঁ অম্বে অম্বিকে অম্বালিকে, মাং নয়তি কশ্চন সশ্বস্তকঃ, সুভদ্রিকাং, কাম্পিল্যবাসিনীং স্বাহা। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। ইদং স্নায়ীয়ং ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে। ওঁ মহিষমর্দ্দিনী নমঃ। পা থেকে মাথা পর্য্যন্ত দর্শন কর। মা ! ঋক্‌ কই ? এই মা ঋক্‌ ? যজুঃ পথে প্রবাহিত হচ্ছে, তোদের হৃদয়ে প্রবিষ্ট হচ্ছে ? এহি এহি জগন্ময়ি, তিষ্ঠ তিষ্ঠ গৃহে মম। গৃহে মম——বুকের ভিতর। এহি এহি জগন্ময়ি, তিষ্ঠ তিষ্ঠ গৃহে মম। গচ্ছন্নপি গৃহে তিষ্ঠ কৈলাসশিখরবাসিনি। ইদং স্নায়ীয়ং ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে। তোমরা কি রকম হে ! তোমাদের চক্ষু কি একেবারে অন্ধকার ?  এহি এহি তিষ্ঠ তিষ্ঠ। আজকে তুমি যাবে, তবু যেতে যেতেও থাক, গচ্ছন্নপি তিষ্ঠ। ইদং স্নায়ীয়ং——খবরদার ! আমার মায়ের গায়ে অমন করে জল ছুঁড়ে দিও না।আদর করে, আস্তে আস্তে দাও। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। সালঙ্কারং ইদং বস্ত্রং গৃহাণ পরমেশ্বরি।ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। অম্বে, কন্যে, স্বয়ম্বরে, শিবে, শর্ব্বাণি, স্বয়ংভবে, ঈশানি সর্ব্বদেবানাং গৃহ্ন পুষ্পং নিবেদিতং।  মায়ের পায়ে সবাই ফুল দাও। সমস্ত দেবতাদের যিনি পরিচালনা করেন, তিনি তোমার কোলের কাছে মাটির পুতুলের মত দাঁড়িয়েছেন। যেন একান্ত নিরীহ, শান্ত, একান্ত তোমার অনুগত, তোমার মন্ত্রে পরিচালিত বালিকার মত। তেমনি ভাবে, তেমনি আগ্রহে সাদরে ফুল দাও; যিনি সমস্ত দেবতাদের পরিচালিনী তাঁকে দাও। দেবি ! ঈশানি, সর্ব্বভূতানাং গৃহ্ন পুষ্পং নিবেদিতং। গৃহ্ন মাল্যং সুপবিত্রং বিল্বপত্রসমন্বিতম্‌। ঈশানি সর্ব্বদেবানাং সুতৃপ্তা ভব শোভনে।। ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। ইদং সোপকরণং নৈবেদ্যং গৃহাণ গিরিজা, প্রসীদ প্রসীদ দেবেশি। ( মুখের সামনে থালা ধরিয়া খাওয়ান।) ওঁ প্রাণায় স্বাহা, ব্যানায় স্বাহা, অপানায় স্বাহা, সমানায় স্বাহা, উদানায় স্বাহা। ওঁ প্রাণ ত্বং সর্ব্বভূতানাং প্রাণ ত্বং মম অন্তরে, তুভ্যং ইমং প্রাণং, ইদং নিবেদয়ামি প্রসীদ। 

                                               হোম। 

ঐং হ্রীং ক্লীং চামুণ্ডায়ৈ বিচ্চে স্বাহা। ওঁ দুর্গা নাম্নে অগ্নয়ে স্বাহা। হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ স্বাহা। ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ পুনরাগমনায় স্বাহা। ওঁ পাদ্যস্বরূপং আজ্যং হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ পুনরাগমনায় স্বাহা। ওঁ দুর্গোত্তারিণি দুর্গে ত্বং প্রসীদ মম সুন্দরি। তিষ্ঠ তিষ্ঠ মহাদেবি কল্যাণং কুরু মদ্‌গৃহে।। নমঃ শরণাগতদীণার্ত্তপরিত্রাণপরায়ণে। সর্ব্বস্যার্ত্তিহরে দেবি নারায়ণি নমোস্তুতে।। ইদং পুষ্পাঞ্জলিরূপং আজ্যং শ্রীদুর্গাচরণারবিন্দে সমর্পয়ামি স্বাহা। ওঁ হর পাপং হর তাপং হর রোগং হরাশুভং। হর ক্ষোভং হর শোকং হর দেবি হরপ্রিয়ে।। কালি কালি মহাকালি কালিকে পাপনাশিনি। ধর্ম্মার্থমোক্ষদে দেবি নারায়ণি নমোস্তুতে।। সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং শক্তিভূতে সনাতনি।গুণাশ্রয়ে গুণময়ে নারায়ণি নমোস্তুতে।। ইদং পুষ্পাঞ্জলিরূপং আজ্যং শ্রীদুর্গাচরণারবিন্দে সমর্পয়ামি স্বাহা। ওঁ আয়ুর্দ্দধাতু মে কালী পুত্রং দেহি সদাশিবে।ধনং সৌভাগ্যং আরোগ্যং দেহি দুর্গতিনাশিনীং।। ইদং পুষ্পাঞ্জলিরূপং আজ্যং শ্রীদুর্গাচরণারবিন্দে সমর্পয়ামি স্বাহা। ইদং অর্ঘ্যস্বরূপিণং আজ্যং ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ পুনরাগমনায় স্বাহা। ইদং নৈবেদ্যরূপং আজ্যং ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ পুনরাগমনায় স্বাহা। আবার এসো মা ! আবার এসো, আবার এসো। ইদং আচমনীয়স্বরূপিণং আজ্যং ওঁ হ্রীং শ্রীং দুর্গায়ৈ পুনরাগমনায় স্বাহা। পুনরাগমনায় দুর্গাং প্রণমামি স্বাহা। ওঁ জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী। দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোস্তুতে।। পুনরাগমনায় দুর্গাং প্রণমামি স্বাহা। যা নিত্যা নিরঞ্জনাপি সাঞ্জনা, তস্যৈ দুর্গায়ৈ নিরঞ্জনং রূপং দদামি স্বাহা। বাজা। ( সকলে দণ্ডায়মান এবং আরতি।) বল্‌ মামা। (আরতি শেষে সবাইকে বসতে বললেন। ) ওঁ যজ্ঞেন জয়ামি দুর্গাং জয়ন্তীং অসুরজয়াং। যজ্ঞের দ্বারা আমি দুর্গাকে জয় করলুম, যে দুর্গা অসুর বিজয় করেন, তাঁকে। হ্রীং শ্রীং দুর্গাং পুনরাগমনায় উত্তরমেরু শিখরে প্রেরয়ামি। নিরঞ্জনের বাজনা বাজাও। ( নিরঞ্জন ক্রিয়া। ) ওঁ কল্যাণং মঙ্গলং শান্তিং সিদ্ধিঃ ঋদ্ধিঃ গুরোঃ কৃপা। আবির্ভবতু যজ্ঞাৎ মে তৎ প্রসাদাৎ সুরেশ্বরি। ওঁ যজ্ঞেন জয়ামি দুর্গাং জয়ন্তীং অসুরজয়াং। জয় গুরু ! জয় গুরু ! 

                                                   

               [ সন ১৩৪৮, ইং ১৯৪১ সালের দুর্গা পূজা সমাপ্ত ] 

 


[ প্রকাশকের মন্তব্য।


১।এই দুর্গাময় মূর্ত্তিরহস্য জানা থাকলে, বাক্‌, পাণি, পাদ ইত্যাদিতে দুর্গামূর্ত্তি দেখে নিবি।”——ছান্দোগ্য উপনিষদ্‌ পঞ্চম অধ্যায় প্রথম খণ্ড, এবং বৃহদারণ্যক উপনিষদ্‌ মন্ত্র ৬।১।১৪ দ্রষ্টব্য। 


২।আগামী সারা বছর ধরে তোরা সবের তলা দিয়ে দিয়ে এই ঋক্‌, এই সাম, যজুঃ পড়তে থাকবি।”----শব্দাত্মিকা সুবিমল অর্গ যজুষাং নিধানম্‌ উদ্গীথ রম্য পদপাঠবতাঞ্চ সাম্নাম্‌।। দেবী ত্রয়ী ভগবতী ভব ভাবনায়। বার্ত্তা সর্ব্ব জগতাং পরমার্ত্তি হন্ত্রী।।

—— ( দেবী দুর্গা তুমি) শব্দাত্মিকা, সুবিমল ঋক্‌, যজুঃ, রমণীয় উদ্গীথ যুক্ত সামের পদপাঠ সকলের আশ্রয়। দেবী, ভব ভাবনার জন্য (বিশ্বকে নির্মাণ-পালন-সংহার করার জন্য) তুমি এই ত্রয়ী (ঋক্‌, যজুঃ, সাম) হও। তুমি সমস্ত জগতের বার্ত্তা (বর্ত্তমানতা), তুমি সকল আর্ত্তির হন্তা। 

৩।আর এই ত্রিবেদের ত্রিভঙ্গিমময়ীর নাম দেবী দুর্গা।"----- ত্রিভঙ্গস্থানসংস্থানাম্‌ মহিষসুরমর্দ্দিনীম্‌——দুর্গার ধ্যান দ্রষ্টব্য। 


৪। দধ্যঙ্‌ শব্দটি দধ্‌ ধাতু থেকে হয়েছে। দধ্‌ অর্থে যা ধারণ করে এবং যা দান করে। তাই প্রাণই দধি।' অর্থে গতি। তাই প্রাণের স্রোতের নাম দধি। বাক্‌, যিনি দোগ্ধৃ, তিনি নিজের থেকে যা দোহন করছেন তার নামদুগ্ধআর সেই বাক্‌ বা তেজ যখন প্রাণ হন, সেই তেজ যখন প্রাণরূপে মন্দীভূত হন, তখন দুধ পরিণত হয় দধিতে। বৃহদারণ্যক উপনিষদের দ্বিতীয় অধ্যায়, পঞ্চম ব্রাহ্মণে মহর্ষি দধীচি ( দধ্যঙ্‌ আথর্ব্বণ ) দৃষ্ট মধুবিদ্যা উক্ত হয়েছে।


৫। 'ওঁ অম্বে অম্বিকে অম্বালিকে, মাং নয়তি কশ্চন সশ্বস্তকঃ, সুভদ্রিকাং, কাম্পিল্যবাসিনীং স্বাহা’----এইটি শুক্ল যজুর্বেদের ২৩ অধ্যায়ের ১৮ ক্রমাঙ্কের মন্ত্র।


৬। "যং যং কাময়ে তং তং উগ্রং কৃণোমি। ক্রীং স্বাহা। 'যে যা চাস, তাই আমি তৎক্ষণাৎ দিই’, এমন যে মূর্ত্তি, এই মূর্ত্তিকে তোরা পূজা করছিস”——ঋক্‌ বেদ, দেবী সূক্ত, দশম মণ্ডল, দশম অনুবাক্‌, ১২৫ সূক্ত অথবা শ্রীশ্রী চণ্ডীর অন্তর্গত দেবীসূক্তর ৫ম মন্ত্র দ্রষ্টব্য। ]

Comments

Popular posts from this blog

ঈশোপনিষদ্‌ (ঈশ উপনিষদ্‌) --মূল মন্ত্র, অর্থ, নিরুক্ত এবং ব্যাখ্যা সহ। (Ishopanishad --Isha Upanishad in Bengali language with original texts, annotaions, meanings, etymolgies and explanation.)

বৃহদারণ্যক উপনিষৎ, চতুর্থ অধ্যায়, তৃতীয় ব্রাহ্মণ, মূল অংশ এবং বঙ্গানুবাদ । জাগ্রত, স্বপ্ন এবং নিদ্রার বিজ্ঞান।(Bengali translation of Fourth chapter, Third part of Brihadaranyaka Upanishad with original texts and meanings---science of the state of awakeness, dream and sleep.)